বিনোদন ডেস্ক : পেশাদারীত্বের অভাবের অভিযোগ বেশ কয়েকবারই উঠেছে মডেল ও অভিনেত্রী সারিকার বিরুদ্ধে। তাকে নিষিদ্ধ করারও ঘোষণা এসেছে। সেগুলো মিটমাট হয়েছে সাংগঠনিক সালিশে।

সর্বশেষ অপেশাদার আচরণের অভিযোগে গত ১ আগস্ট নিষিদ্ধ হন মডেল ও অভিনয়শিল্পী সারিকা সাবরিন। টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন এবং অভিনয়শিল্পী সংঘ সাংগঠনিক ঘোষণা দিয়ে ছয় মাসের জন্য তার কাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এই সময়ে তাকে নিয়ে কেউ কোনো নাটক, বিজ্ঞাপনচিত্র, গানের ভিডিও বানাতে পারবে না কোনো পরিচালক।

এই ঘোষণার দুই মাস পর টনক নড়ে সারিকার। তিনি ক্ষমা চয়ে নিজের ফেসবুক ওয়ালে দীর্ঘ স্ট্যাটাস দেন। আবেগতাড়িত সেই স্ট্যাটাসে তিনি নিজের ভুলের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চান। কিন্তু সাংগঠনিকভাবে ক্ষমা না চাওয়ায় তার এই স্ট্যাটাস আমলে নিচ্ছে টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন এবং অভিনয়শিল্পী সংঘ। এই ক্ষমা গ্রহণ করা হয়নি এবং সারিকার নিষেধাজ্ঞাও তুলে নেয়া হয়নি বলে নিশ্চিত করেছেন শিল্পী সংঘের সাধারন সম্পাদক অভিনেতা আহসান হাবিব নাসিম।

তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটা খুবই হতাশার যে সারিকা তার সমস্যাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উন্মুক্ত করে নিজেকে সবার সামনে ছোট করে উপস্থাপন করেছেন। আমরা বারবার বলে থাকি শিল্পীদের কোনো ব্যক্তিগত বিষয়াদি যেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার না করেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘সারিকাকে সাংগঠনিকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিলো। ফেসবুকের মাধ্যমে নয়। তাই তার যদি সত্যি অনুশোচনা হয়ে থাকে, সে যদি সত্যি ক্ষমা চান সেটাও সাংগঠনিকভাবেই হতে হবে। টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন এবং অভিনয়শিল্পী সংঘের কাছে তাকে চিঠি দিতে হবে। তার চিঠির প্রেক্ষিতে তাকে নিয়ে বসা হবে এবং পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এখানে আবেগের কোনো জায়গা নেই।’

নাসিম আরও বললেন, ‘সারিকা অনেকদিন ধরে শোবিজে কাজ করছেন, একজন জনপ্রিয় তারকা। তার কাজে ফেরাটা অভিনন্দনযোগ্য। তিনি নিজেকে শোধরে আবারও ব্যস্ত হবেন এই প্রত্যাশা আমরাও করছি। কিন্তু তাকে তার সংশ্লিষ্ট সংগঠনের সংবিধান মেনেই নিজের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা কাটাতে হবে। আশা করছি সারিকা বিষয়টি উপলব্দি করবেন এবং শিগগিরই সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।’

সাংগঠিনকভাবে সারিকা ক্ষমা চাইবেন কী না সে ব্যাপারে জানতে চাইলে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘আমি আবার কাজে ফিরতে চাই। আমি সব খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। যে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে তার অবসান ঘটাবো।’

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২১ মার্চ নাটকের শুটিংয়ে নেপাল যাওয়ার কথা ছিল অভিনয়শিল্পী সারিকার। সে অনুযায়ী সারিকা শিডিউলও দেন। অগ্রিম পারিশ্রমিক ৫০ হাজার টাকা, ফিরতি টিকিট ও নাটকের চিত্রনাট্য দেওয়া হয় তাকে। কিন্তু পরে সেই শিডিউলটি ফাঁসিয়ে দেন তিনি। ফলে প্রযোজক আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েন। পরে নেপাল থেকে ফিরে প্রযোজক টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনে সারিকার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। তার অভিযোগের ভিত্তিতে টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন এবং অভিনয়শিল্পী সংঘ নানাভাবে সারিকার সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সদুত্তর পায়নি। বাধ্য হয়ে সারিকাকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এদিকে গত রবিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে ফেসবুকে একটি পোস্টে সারিকা ক্ষমা চেয়ে লেখেন, ‘গত কয়েক মাস আমার জীবনে কঠিন সময় গেছে। সবকিছু সামলে নিয়েছি। এদিকে আমার মেয়েকে স্কুলে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করছিলাম। আগামী সপ্তাহ থেকে সে স্কুলে যাবে। এরপর আবার হয়তো নাটক কিংবা বিজ্ঞাপনচিত্রের শুটিং শুরু করতে পারব। সরি, পাঁচ অক্ষরের একটা শব্দ। সবার কাছে আজ সত্যি মনের গভীর থেকে মাফ চাইছি—পরিবার, বন্ধু, সহকর্মী, আমার শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছে। কখনো যদি জেনে বা না জেনে এতটুকু আঘাত করে থাকি, অনুগ্রহ করে ক্ষমা করবেন। আমার চারপাশের কঠিন পরিস্থিতি ও শারীরিক সমস্যার কারণে কিছু জটিলতায় ভুগছিলাম। তবে এটাও মানছি, সব তা না। নিজের ব্যাপারেও সতর্ক ছিলাম না, ভুলত্রুটি যতটুকু পারি শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করব। কারণ শেখার না আছে শেষ, না আছে বয়স। পুরোনো কষ্ট মুছে ফেলে নতুন করে শুরু করি সব। আমরা সবাই এক।’

(ওএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৮)