আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভূমিকম্প আর সুনামিতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে ইন্দোনেশিয়া। শুক্রবার ভূমিকম্পের পর সুনামির আঘাতে পালু শহরে বিপর্যয় নেমে আসে। এখন পর্যন্ত ৮৩২ জনের নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।

তবে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনও পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তাই নিহতের সংখ্যা ৮৩২য়ের বেশি বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, ভূমিকম্প ও সুনামিতে নিহতদের খুব শিগগিরই গণকবরে সমাহিত করা হবে। তবে বিভিন্ন ধরনের রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ধ্বংসস্তুপের নিচে এখনও বহু মানুষ আটকা পড়ে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রাণের সন্ধানে এখনও বিভিন্ন স্থানে উদ্ধার কাজ চলছে।

পালু শহরে ভারি যন্ত্রপাতি নিয়ে একটি হোটেল এবং একটি শপিং সেন্টারে উদ্ধার কাজের অপেক্ষায় আছেন উদ্ধারকর্মীরা। কারণ ক্রমাগত পরাঘাতের কারণে (আফটার শক) সেখানে খালি হাতে উদ্ধারকাজ নিরাপদ নয়।

জাতীয় দুর্যোগ প্রতিরোধ সংস্থা জানিয়েছে, যোগাযোগ ব্যবস্থা সীমিত, ভারি যন্ত্রপাতিও সীমিত। ভূমিকম্পে বহু বাড়ি-ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই উদ্ধার কাজে সময় লাগছে।

শুক্রবার ৭ দশমিক ৫ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প এবং এর ফলে সৃষ্ট ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস সুলাওয়েসি দ্বীপের পালু এবং আরো কয়েকটি শহরে আঘাত হানে। জাতীয় দুর্যোগ প্রতিরোধ বিভাগ বলছে, তারা প্রথমে যা ভেবেছিলেন ভূমিকম্প এবং সুনামিতে তার চেয়েও আরও বেশি জনপদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কর্মকর্তারা বলেন, বহু মানুষ এখনও বিধ্বস্ত ঘরবাড়ির নীচে আটকা পড়ে আছে। পালু শহরের স্থানীয় লোকজন ধ্বংসাবশেষের নীচে আটকে পড়া নিজেদের স্বজনদের খুঁজে বেরাচ্ছেন।

দুর্যোগ বিভাগের কর্মকর্তা মুহাম্মদ সাউগি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ধ্বংসস্তূপ সরাতে আমাদের এখন জরুরি ভিত্তিতে ভারী যন্ত্রপাতি দরকার। শরীরের শক্তি দিয়ে উদ্ধার কাজ আর সম্ভব হচ্ছে না।

ডঙ্গালা নামের একটি শহরের পরিণতি নিয়ে গভীর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রত্যন্ত এই শহরটি থেকে এখনও তেমন কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছেনা। রেডক্রস বলেছে, ১৬ লাখের মত মানুষ শুক্রবারের ভূমিকম্প ও সুনামিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাটি বলছে, এই বিপর্যয় আরো করুণ চেহারা নিতে পারে।

পালু শহরের ৩ লাখ ৩৫ হাজার মানুষের অনেকে এখনও নিখোঁজ রয়েছে। শহরের রোয়া রোয়া নামে একটি হোটেলের ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধারকারীরা ২৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছেন। আরো অনেক সেখানে আটকা পড়ে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, শহরের রাস্তায় রাস্তায় মৃতদেহ ছড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।

খোলা জায়গায় তাঁবু খাটিয়ে আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বড় ভূমিকম্পের পর ছোট ছোট কম্পনের কারণে শনিবার সারারাত পালুর লোকজন ঘরের বাইরে ছিলেন। একটি আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা পালুর বাসিন্দা রিসা কুসুমা বলেন, প্রতি মিনিটে অ্যাম্বুলেন্সে করে মৃতদেহ আসছে। খাবার পানি প্রায় পাওয়াই যাচ্ছে না। দোকানপাট বাজার সব লুট হয়ে যাচ্ছে।

শুক্রবার আঘাত হানা ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল উপকূলের খুব কাছে, মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে। ফলে খুব দ্রুত জলোচ্ছ্বাস তীরে চলে আসে। স্থানীয় একটি উৎসবের কারণে সে সময় বহু মানুষ পালুর সমুদ্র সৈকতে ছিল। ফলে তাদের অনেকেই সুনামি থেকে পালানোর সময় পায়নি।

ঘরবাড়ি ছাড়াও ভূমিকম্প ও সুনামিতে শহরের শপিং মল, মসজিদ, হোটেল, সেতু বিধ্বস্ত হয়েছে। পালু বিমানবন্দরের একজন এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারও মারা গেছেন।

শুক্রবার ভূমিকম্পের পর সুনামি সতর্কতা জারি করা হলেও এক ঘণ্টা পরেই তা তুলে নেয়া হয়। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো। তিনি জীবিতদের উদ্ধারে দিনরাত উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

(ওএস/এসপি/অক্টোবর ০১, ২০১৮)