কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় স্থান পাওয়া গরিব অদম্য মেধাবী নাজমুলের ভর্তির জন্য কুষ্টিয়ার নবাগত পুলিশ সুপার এসএম তানভির আরাফাত পিপিএম নগদ ২০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন।

আজ সোমবার বেলা ১১ টায় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের নিজ কক্ষে পুলিশ সুপার নাজমুলের হাতে এ অর্থ তুলে দেন।

এ সময় নাজমুলের দিনমজুর পিতা আজিজ হোসেন ও মা নাসিমা খাতুন ও হালসা ডিগ্রী কলেজের শিক্ষক ইমাজ উদ্দিনসেখানে উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় পুলিম সুপার সাংবাদিকদের বলেন, আমিও অর্থাভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারিনি। অর্থাভাবে নাজমুলের মত অদম্য মেধাবী একজন ছাত্র চান্স পেয়েও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবেনা এটা কোন ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তাই সঙ্গে সঙ্গেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি ছেলেটিকে সহযোগিতা করার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির হওয়ার জন্য হাতে নগদ টাকা তুলে দেওয়ার পাশাপাশি নাজমুল যাতে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারে তার সব ব্যবস্থা তিনি করবেন বলে ঘোষণা দেন। বলেন, তোমার যে কোন প্রয়োজনে আমি তোমার পাশে আছি।

নাজমুলের উদ্দেশ্যে পুলিশ সুপার বলেন, দৃঢ়তা ও মনোবল রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যাও। ছাত্রাবস্থায় আমি নিজেও টিউশনী করে পড়ালেখার খরচ চালিয়েছি। ঢাকায় প্রচুর টিউশনীর সুযোগ রয়েছে। তুমি অবসর সময় টিউশনী করে পড়ালেখার খরচ জোগাড় করতে পারো। এসপি নাজমুলকে পরামর্শ দেন রাজনীতি এ্যাভোয়েড করার চেষ্টা করবে। আর যদি রাজনীতি করতেই হয় তাহলে প্রগতিশীল, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের রাজনৈতিক দল করবে।

এছাড়া কুষ্টিয়ার মৌবন সুইটস নামের একটি প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকে যত দিন পড়ালেখা শেষ না হবে ততদিন পর্যন্ত নাজমুলকে মাসিক ২৫০০ টাকা করে সহায়তা প্রদান করার ঘোষণা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক সাবিনা আঞ্জুম জনি রবিবার নাজমুলের উপস্থিতিতে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে এ ঘোষণা দেন।

প্রাইভেট টিউশনী আর দিনমজুরী করে সংসারের ঘানি টেনেও কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার হালসা ডিগ্রী কলেজ থেকে মানবিক বিভাগ থেকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ লাভ করে অদম্য মেধাবী নাজমুল।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের খ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে নাজমুল মেধা তালিকায় ৪৭৬ নম্বরে রয়েছে। পরীক্ষায় তার রোল ছিল ৯০৪৮১৪।

নাজমুল জানায়, অনেকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করার জন্য ভাল কোচিং-এ ভর্তি হয়। অনেক পড়াশোনা করে। কিন্তু অভাবের কারণে সে কোচিং করার কোন সুযোগ পাইনি। প্রাইভেট টিউশনীর পাশাপাশি যতটুকু সময় পেয়েছে বাড়িতে পড়াশোনা করেছে। অনেক কষ্ট করে টাকা জোগাড় করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। মনোবল ছিল মেধা তালিকায় তার নাম থাকবে। বাস্তবেও তাই হয়েছে। মেধা তালিকায় তার নাম এসেছে। আগামী ২১ আগষ্ট তার ভাইবা পরীক্ষা রয়েছে। নাজমুলের ইচ্ছা রয়েছে ইংরেজী সাহিত্য নিয়ে পড়ালেখা করার। তবে মেধা তালিকায় স্থান পেয়েও শেষ পর্যন্ত অর্থাভাবে নাজমুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি এবং পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারবে কিনা এনিয়ে যথেষ্ট সংশয় দেখা দিয়েছে।

(কেকে/এসপি/অক্টোবর ০১, ২০১৮)