রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীর : স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে এক ব্যক্তির সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার সাতক্ষীরার জেলা ও দায়রা জজ সাদিকুল ইসলাম তালুকদার এ রায় ঘোষণা করেন।

সাজাপ্রাপ্ত আসামীর নাম মিঠুন দাস (৩৬)। তিনি সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার শবদলপুর গ্রামের সুভাষ দাসের ছেলে।

মামলার বিররণে জানা যায়, ২০০৯ সালে খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলার বাজুয়া গ্রামের কানাই দাসের মেয়ে মেঘনা দাসের সঙ্গে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার শবদলপুর গ্রামের মিঠুন দাসের বিয়ে হয়। বিয়ের পর মিঠুন দাস ও তার পরিবারের সদস্যরা মেঘনাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতো। আট মাসের একটি কণ্যা সন্তান থাকা অবস্থায় ২০১৩ সালের ১৬ মে রাত সাড়ে ১০টার পর থেকে পরদিন ভোর ৫টার মধ্যে মেঘনাকে মেরে ফেলে আত্মহত্যা করেছে মর্মে প্রচার দেওয়া হয়।

মেঘনার লাশ স্বামীর বাড়ির পুকুর পাড়ে পড়ে আছে মর্মে ১৭ মে সকালে প্রতিবেশীদের মাধ্যমে মোবাইলে খবর পান মেঘনার পরিবারের সদস্যরা। সকাল সাড়ে আটটার দিকে মিঠুনের বাড়িতে এসে বারান্দায় মেঘনার লাশ দেখতে পান তারা। ওই দিন আশাশুনি থানার উপপরিদর্শক মনজ কুমার নন্দী একটি সাধারণ ডায়েরী করে লাশ সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে ময়না তদন্তের জন্য পাঠান । ওই বছরের ১৭মে মিঠুন দাসকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়।

ময়না তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর ১৯ জুন আশাশুনি উপজেলার শীতলপুর গ্রামের অধীর সরদারের ছেলে মৃতের মামা প্রশান্ত সরদার বাদি হয়ে শবদলপুর গ্রামের মিঠুন দাস, প্রভাতী দাস, বাবলু দাস, ছোটনুনু ও একই উপজেলার শ্বেতপুর গ্রামের চণ্ডি দাস এর নাম উল্লেখ করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওইদিনই মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা মিঠুন দাসকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমাণ্ড আবেদন করেন।

২৬ জুলাই মিঠুন দাস স্ত্রী মেঘনাকে গামছা দিয়ে মুখ চেপে ধরায় মাটিতে পড়ে যেয়ে মারা গেছে বলে বিচারিক হাকিম শিমুল কুমার বিশ্বাসের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সাতক্ষীরা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক লুৎফর রহমান ২০১৫ সালের ৩০ জানুয়ারি এজাহারভুক্ত মিঠুন দাসের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

মামলার ১১জন সাক্ষীর জবানবন্দি ও নথি পর্যালোচনা শেষে আসামী মিঠুন দাসের বিরুদ্ধে স্ত্রীকে অনিচ্ছাকৃতভাবে হত্যার অভিযোগে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারার পার্ট-২ এ দোষী সাব্যস্ত করে সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেন। আসামীর বয়স কম ও তার ৫ বছরের একটি সন্তান থাকার বিষয়টি বিবেচনা করে সাজার মেয়াদ কমানো হয়েছে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়। একইসাথে হাজত বাসের মেয়াদ সাজার মেয়াদ থেকে বাদ যাবে বলে আদেশে বলা হয়েছে।

রায় প্রদানকালে সাজাপ্রাপ্ত আসামী মিঠুন দাস কাঠগোড়ায় উপস্থিত ছিলেন। আসামীপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাড. জহুরুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. ওসমান গনি।

(আরকে/এসপি/অক্টোবর ০২, ২০১৮)