মানিক বৈরাগী


মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও তাদের সন্তান সন্ততির জন্য রাষ্ট্রীয় ক্যাড়ার, প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় শ্রেণীর কোন প্রকার চাকুরীর দরকার নাই। কোন সুযোগ সুবিধার দরকার নাই। ওরা মেধাহীন।

মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজী রেখে একটি বাংলাদেশ এনে দিয়েছে। পরিবারে সকল স্বপ্ন, পিতা-মাতার স্বপ্ন, নতুন বউ এর স্বপ্ন আকাঙ্ক্ষা দলিত করে নিজে শহীদ হয়ে একটি বাংলাদেশ এনে দিয়েছে। এই তো তাদের কৃতিত্ব। আর কি চাই। যে সকল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ভালো রেজাল্টের আশা ত্যাগ করে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, তাদের বিনিময়ে একটি বাংলাদেশ। তাদের আর কি চাই।

স্বাধীনতার পর পাকিস্তান ফেরত মেধাবী আমলারাই তো মন্ত্রণালয়কে সচিবালয় বানালো। তারা জাতির পিতার সামনে শ্রদ্ধায় মাথাটুকু পর্যন্ত নুয়ে দিত, অফিস টাইম শেষে মাহবুবুল আলম চাষির ক্যাড়ারদের সাথে খোশ আমদেদ হতো, কতটুকু আগালো খুন পরিকল্পনা। এরাই তো মেধাবী। এরাইতো আদরনিয় ছিলো।

দবির উদ্দিন প্রধানের ছেলে শফিউল আলম প্রধানকে ঘর থেকে ডেকে এনে কি পুনর্বাসিত করা হয় নি ছাত্র রাজনীতিতে। পরের রেজাল্ট দেশ ভালো জানে। পাকিস্তান ফেরত সামরিক চৌকশ সেনা কর্মকর্তাদের কি ভালো ভালো পদায়ন করা হয়নি?এর পর তারাই ৭৫ ঘটালো।

জাতির পিতার বদন্যতায় যে সব মুক্তিযোদ্ধা সরকারী চাকুরি পেয়েছিল, ৭৫র পরবর্তী মুস্তাক, জিয়া, এরশাদ, খালেদা, খালেদা-নিজামি তাদের কি রকম ব্যবস্থা করেছিল সেই সব কাহিনি কেউ কি লিখেছে? লিখেনি। কেন লিখবে এনিয়ে তো আখের গোছানো সম্ভব নয়। বরং বিপদের আশংকা ভীষণ।

আওয়ামীলীগ সরকার তো চিরকাল বাংলাদেশ শাসন করবে না। যখন আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকবে না একটি প্রজ্ঞাপনে এদের বাধ্যতা মুলক শাস্থি ও চাকুরী হরণ করা হবে। তো মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কোন প্রকার সরকারি চাকুরীর দরকার নাই। এই ব্যবস্থাটি এখনো বিশ্বে কোথাও উদাহারণ হিসাবে পাওয়া যাবে না।

তবে বিশ্বে ভুরি ভুরি উদাহারন দেখানো যাবে যে, সেই সব দেশে স্বাধীনতা, সংগ্রাম, বিপ্লবে তাদের পরিবার পরিজন, উত্তারিধারের লতিকা পর্যন্ত প্রথম শ্রেণীর নাগরিক ও প্রথম শ্রেণির সুবিধা পেয়ে থাকে এটাই বাস্তব।

আর বাংলাদেশে সকল যুদ্ধাপরাধীদের স্থাবর অস্থাবর সম্পদের হিসাব করলে এক একটি জেলা কেনা যাবে।
শুধু একজন মীর কাসেম আলীর স্থাবর অস্থাবর সম্পদ দিয়ে কয়েক জেলা কিনে নেয়া যাবে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় এদের সম্পদ পাহারাদার রাখা হচ্ছে।

ধরুন আজকের ইসলামী ব্যাংকটি কোন কম্পানির অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। উনি কে? কিভাবে উত্থান, কার কার সাথে তার ব্যবসায়ীক সম্পর্ক ও আত্মীয়তা। এসব অতিত থেকে ও ভুরি ভুরি উদাহারণ দেয়া যাবে।

সুতরাং এই বিপন্নতার হাত থেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে, মুক্তিযুদ্ধের সরকার রেহায় দিয়েছে তার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা খেটে খেয়ে নৈতিক ভাবে জীবন পার করবে। কারণ ওরা যোদ্ধার সন্তান।

মাননীয় সরকার প্রধান আপনি জানেন এবং বুঝেন বিগত জোট সরকারের সময় কৃষি ও পরে শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী একদিনের নোটিশে কৃষি বিভাগে কয় হাজার কৃষি কর্মকর্তা, ব্লগ সুপার ভাইজার সহ কয় হাজার শিবির কর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছিল, তা আপনি জানেন। ওরা সবাই শিবির কর্মী ও যুদ্ধাপরাধীর সন্তান। এরা এখন আপনার থেকেও কঠিন আওয়ামীলীগ। এরা এখন পদোন্নতি পেয়ে বহাল তবিয়তে আছে। তাদের সময়ে চাকুরী হারানো মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানেরা কিন্তু এখনো চাকুরী ফিরে পায়নি,পায়নি চাকুরী পরবর্তী বেতন, প্রফিডেন্ড ফান। আপনার আমলারা কঠিন ন্যায়বান ও দাম্বিক, তাদের নাগাল পাওয়া খুব কঠিন। আর আপনার মন্ত্রী এমপি নেতারা মহা ব্যস্ত। তাদের সাক্ষাত পেতে যে কষ্ট। তার চাইতে পুলসিরাত পার হওয়া আরো সহজ।

আপনি ভালো জানেন, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় এর সচিব এর দুর্ব্যবহারে হোটেলে আত্মহত্যা করেছে। প্রবীর সিকদারের কথা নাইবা বললাম। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা তার চাকুরী হারানোর পর পাওনা টাকার জন্য সচিবালয়ে অনশন করেছে। হ্যাঁ সে আওয়ামী লীগ করে না, বাম ধারার মুক্তিযোদ্ধা, কিন্তু এটিও সত্য যে সচিবালয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও দেশ প্রেমিক সচিবদের আন্দোলনে সে প্রথম সারির নেতা ছিল। যার তথ্য প্রমাণ পত্রিকা ঘাটলে পাওয়া যাবে।

একজন কবি জোট সরকারের সময় আপনার আন্দোলন সংগ্রামের সময় নির্যাতনের ছবি সম্বলিত প্রতিবাদী ছড়াগ্রন্থ প্রকাশ করায় মিথ্যা অপবাদে শিল্প মন্ত্রনালয় থেকে তার চাকুরী হতে বরখাস্থ করা হয়। আপনার সরকার তার চাকুরীর টাকা ফেরত দিতে পারেনি এখনো। সে ও সনদ বিহিন মুক্তিযোদ্ধা, তার ভাই স্বাধীন বাংলা ফুটবল টিমের সদস্য, জাতীয় ক্রীড়া পদক পাওয়া খেলোয়াড়। তো মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের কোটা বাতিল করে একটি খুব ভালো করেছেন।

একটি অনুরোধ দ্বিতিয়, তৃতিয় শ্রেণীর চাকুরির কোটা রেখে আরো একটি প্রমাণ হলো তারা এই দেশের তৃতিয় শ্রণীর নাগরিক। এরা অপরাধী। এটিও বাতিল করুন।সম্মান দিতে না পারলে অসম্মান না করার অনুরোধ বিনিত অনুরোধ করছি। বীর মুক্তিযোদ্ধা জহর লাল পাল চৌধুরীর একটি কথা স্মরণে এলো

“আমরা যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি, যাদের জন্য আমার মা বোনের ইজ্জত হারিয়েছি তারা যখন আমাকে নির্দেশ করে, তারা যখন আপনার পার্টির নেতা, তখন আমার মরে যেতে ইচ্ছা করে।" আর কিছুই চাই না আপনি চাকুরী, ব্যবসা, স্থাবর সম্পত্তি বাতিল করুন। বাতিল করে রাষ্ট্রীয় কোষাগার এ জমা করুন।

হ্যাঁ তবে এই আবেদন ও ঠিকবে না কারণ যুদ্ধাপরাধী রা খুব ধুর্ত, এরা ধুর্ততার সাথে আওয়ামীলীগ এর অনেক বড় বড়, ক্ষমতাধর নেতার আত্মি। হয় বেয়াই, জামাই, ব্যবসায়ীক অংশিদার, ভাই চাচা, শ্মশুর আরো কত কি। এটিও কঠিন কাজ।

যাক কোন দাবি নাই, আপনি নিরাপদ থাকুন এটিই খোদার কাছে প্রার্থনা। আপনি নিরাপদ থাকলে সমস্যা সংকুল বাংলাদেশটা নিরাপদ থাকবে। এটিই চাওয়া ও দাবি। আমেন।

লেখক : কবি সাবেক, ছাত্রনেতা।