রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : কাক ডাকা ভোরে দীঘির জলে ভেসে উঠলো শত শত রুপালী মাছ। দুর্বল হয়ে পড়া এসব মাছ প্রাণহীন না হলেও নির্জীব হয়ে পড়েছিল। হাজার হাজার মানুষ দীঘির চারধারে দাঁড়িয়ে জলকন্যাদের এ দৃশ্য দেখে মর্মাহত হয়ে পড়েন। 

তবে ভাসমান এ মাছ হাতে হাতে তুলে নিতে ভোলেননি দীঘির ধারের মানুষ। কেউ ২০ কেজি, কেউ ১৫ কেজি কেউ ৮/১০ কেজি ওজনের এক বা একাধিক মাছ দিব্যি হাতে ঝুলিয়ে নিয়ে গেছেন। শনিবার সকালে সাতক্ষীরা পৌর দীঘির ধারে মৎস্যকুলের বিষাদের মধ্যে বিনাশ্রমে অনায়াসে মাছ ধরার এই আনন্দটাই ছিল আলাদা।

রুই, কাতলা, মৃগেল, ব্লাক কার্ব, গ্লাস কার্ব ও ভেটকি জাতের ইয়া বড় বড় মাছ কেনো দীঘি ছেড়ে বাঁচার চেষ্টায় মুখ উচিয়ে অক্সিজেন নেওয়ার চেষ্টা করছিল তা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। দীঘির স্বত্ত্বাধিকারী সাতক্ষীরা পৌর কর্তৃপক্ষের কথায় জানা গেল অক্সিজেন ঘাটতির জন্য ঘটেছে এ ঘটনা। তবে পৌরবাসীর ধারনা এটা ঠিক নয়। দীঘির মাছ যাতে কেউ মারতে না পারে সেজন্য গভীর রাতের ষড়যন্ত্রের ফসল এটি। আর এর দায় দায়িত্ব এড়াতে পারেন না খোদ মেয়র ও তার পারিষদবর্গ।

সকালে দেখা গেল সাতক্ষীরা পৌর দীঘির পানি নীলবর্ণ থেকে কৃষ্ণবর্ণ নিয়েছে। ঘোলা কৃষ্ণবর্ণের পানি গলিয়ে তরতাজা মাছগুলি বাঁচার আকুতিতে যেনো ছটফট করছে। তারা ভাসছে ডুবছে আবার ভাসছে। তারা হা করে অক্সিজেন নিচ্ছে। এ দৃশ্যে মর্মাহত হয়ে পড়লেন প্রাতঃভ্রমনকারীরা। শহরময় ঢি ঢি পড়ে গেল পৌর কর্তৃপক্ষ নিজেরাই মাছ মেরে ফেলেছে। আর রাতে তারা জাল নামিয়ে ধরেও নিয়েছে বিপুল সংখ্যক মাছ। পৌরবাসী কর্তৃপক্ষকে গালাগাল দিয়ে বললেন এবার মাছ ধরার টিকিট বিক্রি করেও শিকারীদের মাছ ধরতে দেওয়া হয়েছে নাম মাত্র একদিন। এর আগে ‘দীঘির জলে মধ্য রাতের রসনা বিলাস’ মিটানোর ব্যর্থতার গ্লানি সহ্য করতে হয়েছে তাদের। শেষ পর্যন্ত মাছ না পেয়ে নয় , বরং মাছ পেয়ে ছিপে কামড় দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ । আর দুই হাত দিয়ে উজাড় করে নিয়ে গেছেন সব মাছ। তারই অংশ বিশেষ শনিবার কাকডাকা ভোরে দীঘির জলে জীবন রক্ষায় ভেসে উঠেছিল মৎস্য কন্যার দল।

তবে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা মৎস্য অফিসার দীঘির জল পরিক্ষা নিরীক্ষা করে জানিয়েছেন দীঘির জলে পিএইচ ও অক্সিজেন কমে গেছে। সেই সাথে বেড়ে গেছে অ্যামোনিয়া। এ মাছ বিষযুক্ত হয়নি । তাই খাবার অনুপযুক্ত নয় বলেও দাবি মৎস্য কর্মকর্তা রাশেদুল হকের । তিনি বলেন পানিতে এসিডিটি বেড়ে গেছে। এখন প্রয়োজন কমপক্ষে ৫০ কেজি জিওলাইট। সেই সাথে সাইটেঘেরাএক্সট্রাক্ট নামের ৮০০ থেকে এক হাজার মিলিগ্রাম ওষুধ। তবে পৌরবাসী তাদের এই বক্তব্যে সন্তুষ্ট হতে পারেন নি । তারা বলেছেন তিন দিন আগেই তো বিপুল পরিমান চুন পৌর দীঘিতে প্রয়োগ করা হয়েছিল। তার কি হলো।

তাহলে কি শুক্রবার রাতের ষড়যন্ত্রেরই ফসল এটা। পৌর কর্তৃপক্ষ এর সন্তোষজনক জবাবদিহি করতে বাধ্য বলে জানিয়েছেন নগরবাসী।

(আরকে/এসপি/অক্টোবর ০৬, ২০১৮)