স্টাফ রিপোর্টার : আলোকচিত্রী ও দৃক গ্যালারির প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল আলমের জামিন নিয়ে এক সপ্তাহের রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। এর আগে আসামি ও রাষ্ট্র উভয়পক্ষের আইনজীবীরা তাদের যুক্তিতর্ক পেশ করেন।

জামিনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম।

জামিনের বিরোধীতা করে শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘শহীদুল আলম কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি না। তারপরেও তিনি দেশের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপি তো দেশের একটা রাজনৈতিক (পলিটিক্যাল পার্টি) দল। কিন্তু গত দশ বছরে বিএনপি যা বলেনি উনি (শহিদুল আলম) তার চেয়েও বেশি বলেছেন।’

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘যে কেউ অভিমত প্রকাশ করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা সবার রয়েছে। কিন্তু উস্কানি কিংবা মিথ্যা বলে কেউ দেশের আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে পারেন না। দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে পারেন না।’

‘নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় উনি (শহিদুল আলম) নিজের ফেসবুকে উস্কানিমূলক ও মিথ্যা প্রচার করেছেন। আবার বিদেশি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিয়ে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন।’

‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ওই সময় নারীদেরকে অপহরণ করা হচ্ছে বলে উনি ফেসবুকে বলেছেন। এ সরকারের সময় ব্যাংক লুট হচ্ছে এরকম মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছেন। এ ছাড়া, কোটা নিয়েও বিভিন্ন মিথ্যা প্রচার করেছেন।’

যেই আল জাজিরা আমাদের দেশের কোনো ঘটনা কয়েক সেকেন্ডের বেশি দেখায় না সেই আল জাজিরা কিন্তু উনাকে নিয়ে কয়েক মিনিটের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।’

জামিন শুনানিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রসঙ্গ এনে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘দেশকে নাকি স্বর্গে নিয়ে গেছেন ড. ইউনূস। যেই ড. ইউনূস এত ফেমাস সে তো দেশের কোনো উন্নয়নের ইস্যুতে কথা বলেন না। সরকারকে দিয়ে আইন পাস করিয়ে ব্যাংক করে উনি লিজেন্ড হয়েছেন।’

‘পদ্মা সেতুর মতো বড় বড় কাজের কথা তো ওনারা বলেন না। তো দেশের বিরুদ্ধে কথা বলেন কিভাবে?’

এ সময় ব্যারিস্টার সারা হোসেন অ্যার্টনি জেনারেল ও আদালতকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এটা কোন প্রসঙ্গে বলা হচ্ছে। এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ঘটনা বলছি আসবে শুনতে থাকুন। তারা দেশের বিরুদ্ধে যেমন বলেন, দেশের ভালো কাজ এবং কথা তো বলেন না।

এরপর শুনানিতে হাইকোর্ট বলেন, অনেকেই তো দেখি টকশো এবং বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বলে থাকেন দেশে আইনের শাসন নেই। আদালতে বিচার নেই। আবার তাদেরকেই দেখি আদালতের বারান্দায় বিচারের জন্য আসতে। আইনজীবীদের পিছু পিছু এসে জামিন চাইতে। তাহলে কেন তারা বলে বেড়ান যে, দেশে বিচার নেই? আইনের শাসন নেই।

রবিবার (৭ অক্টোবর) জামিন আবেদনের শুনানির পর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে গ্রেফতার আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে কেন জামিন দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

হাইকোর্টের বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমানের বেঞ্চ জামিন আবেদনের শুনানি নিয়ে এ রুল জারি করেন।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে ‘উস্কানিমূলক ও মিথ্যা’ প্রচারের অভিযোগে শহিদুল আলমকে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে করা মামলায় গত ৬ আগস্ট গ্রেফতার দেখানো হয়। তবে তার পরিবারের দাবি, আগের দিন ৫ আগস্ট রাতে শহিদুল আলমকে বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে শহিদুল আলম কারাগারে রয়েছেন।

(ওএস/এসপি/অক্টোবর ০৭, ২০১৮)