রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সকালে মারা গেলেন আর বিকেলে আদালতে পৌঁছালো  ফাঁসির দন্ড থেকে তার খালাসের আদেশ। 

সাতক্ষীরার জোড়া পুলিশ খুন মামলার ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামি ওবায়দুর রহমান ওরফে অবেদ আলি(৬৫) খুলনা ৫০০ শয্যা হাসপাতালে পুলিশ প্রহরায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। ছয় মাস আগে তিনি উচ্চ আদালতের আদেশে এ মামলা থেকে তিনি খালাস পেয়েছিলেন। তার কারামুক্তির আইনগত কাজ শেষ হবার আগেই ১৩ বছর জেলে থাকার পর রোববার সকাল ৯টায় মারা যান তিনি।

রাতে তার লাশ নিয়ে আসা হয় নিজ বাড়ি সাতক্ষীরার কুখরালিতে। অবেদ আলি ওই গ্রামের শেখ রজব আলির ছেলে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে ২০০৩ সালের ৪ ফেব্র“য়ারি রাতে শহরের ছফুরন্নেসা কলেজের সামনে ফটিক বাবুর বাড়ির কাছে দুই পুলিশ কনস্টেবল ফজলুল হক ও আবদুল মোতালেব সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন। এ সময় আহত হন কনস্টেবল আবদুল আহাদ। তারা বাইসাইকেলে বাঁকাল এলাকায় ডিউটি সেরে রাত সোয়া ২ টার দিকে কর্মস্থল ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়িতে ফিরছিলেন। এ ঘটনায় হাবিলদার রুহুল আমিন বাদি হয়ে পরদিন সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

২০০৬ সালে এ মামলায় আসামি রায়হানুল ইসলাম, জাকির হোসেন ও ওবায়দুর রহমান ওরফে অবেদ আলিসহ তিনজনকে মৃত্যুদন্ড দেন খুলনার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। আব্দুস সোবহান, আব্দুস সালেক, মোঃ শাহীন ও মোঃ মিলনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। আসামী সোয়েবর আলী ও ছাদিক খালাস পান। আসামী বদরুজ্জামান মামুন উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন করে তার বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন। সাজার সাত দিনের মধ্যে এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপীল করলে ওবায়দুর রহমান রহমান অবেদ আলি ২০১২ সালে খালাস পান। রাষ্ট্রপক্ষ এর বিরুদ্ধে আপীল করলে গত ১১ এপ্রিল খালাসের আদেশ বহাল থাকে।

সরেজমিনে সোমবার সকালে কুখরালি গ্রামে গেলে অবেদ আলির ছেলে শেখ আশিকুর রহমান শাওন জানান, আদালত থেকে খালাসের আদেশ যাতে তাড়াতাড়ি পৌছায় সেজন্য তিনি গত ৫ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করেন। এর আগে তিনি বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যার রিয়াজুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করেন। খালাস আদেশ কারাগারে না পৌঁছানোয় বাবাকে ছয় মাসেরও বেশি সময় আটক থাকতে হয়। ২০১৫ সালে তিনি লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। খুলনা কারাগারে তার লিভার ফেটে যাওয়ায় অপারেশন করা হয়। সর্বশেষ গত কোরবানির ঈদের একদিন পর বাবাকে খুলনা ৫০০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রোববার সকাল ৯টার তিকে খুলনা ৫০০ শয্যা হাসপাতালের প্রিজন সেলে মারা যান বাবা । বিশেষ অনুরোধে দুপুর আড়াইটার দিকে ময়না তদন্ত ছাড়াই লাশ তাদের হাতে তুলে দেওআ হয়। একই দিন বিকেলে তার খালাসের আদেশ পৌঁছায় সাতক্ষীরা জেলা জজ আদালতে। রোববার রাত ৮টায় লাশ নিয়ে আসা হয় বাড়িতে। সোমবার সকাল ৯টায় নামাজে জানাজা শেষে বাবা অবেদ আলীর লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

কুখরালি গ্রামের আম্বিয়া খাতুন জানান, মেয়ে নাজমা সুলতানা টুম্পা, নীলুফা ইয়াছমিন ও ছেলে শেখ আশিকুর রহমান শাওন ছোট অবস্থায় থাকাকালিন তার স্বামী অবদে আলীর ফাঁসির আদেশ হয়। অথচ ২০১৩ সালে ময়মনসিং এর আদালতে জেএমবি নেতা শায়খ আব্দুর রহমান পৃথক একটি মামলায় বিচারকের কাছে ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে সাতক্ষীরার জোড়া পুলিশ হত্যা ও গুড়পুকুরের মেলায় বোমা হামলার কথা স্বীকার করেন। অথচ তার স্বামীকে বিনা অপরাধে দীর্ঘ ১৩ বছর তার স্বামীকে কঠিন রোগ নিয়ে সেবা শ্রুশ্রষা ছাড়াই ধুকে ধুকে মরতে হলো। চারকাঠা জমির উপর ভাঙা ঘরবাড়িতে থেকে অভিভাবকহীনভাবে মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়েছে তাদের।

বাবা ফাঁসির আসামী তার মাষ্টার্স পাস করা দু’ মেয়েকে ভাল জায়গায় বিয়ে দিতে পারেননি। ছেলে শাওন মাষ্টার্স পাশ করে বেকার হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অসুস্থ স্বামীকে সন্তানদের নিয়ে হাসপাতালে ও জেলখানায় যেয়ে যে তীব্র বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন তার বর্ণনা দেন আম্বিয়া খাতুন। তিনি তার স্বামীকে বিনা অপরাধে দীর্ঘ ১৩ বছর রোগাক্রান্ত অবস্থায় যথাযথ চিকিৎসা ছাড়াই মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা ও ক্ষতিপূরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেন।

সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. ওসমান গণি বলেন, এ মামলার ফাঁসির দণ্ডাদেশ প্রাপ্ত অপর আসামী জাকির হোসেন সোমবার কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।

(আরকে/এসপি/অক্টোবর ০৮, ২০১৮)