মানিক বৈরাগী


আগামী জাতিয় সংসদ নির্বাচন দ্রুত ঘনিয়ে আসছে।আগামী নির্বাচন কে ঘিরে বহু জল্পনা কল্পনা পরিকল্পনা হিসেব নিকেশ চলছে বিভিন্ন মহুলে।দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্রও উকি দিচ্ছে। ক্ষমতাসীন পক্ষ আবারো ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়।প্রতিপক্ষরাও ক্ষমতা পুনরায় ক্ষমতা ফিরে পেতে চায়। এ নিয়ে জোট প্রতিজোট গঠন হচ্ছে, গড়ছে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।

এ অবস্থায় ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতায় টিকে থাকতে হলে আরো সতর্ক সাবধান হওয়া জরুরি কাম্য। প্রতিদিন বাড়ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ এ প্রতিটি আসনে প্রার্থীর ভিড়।এই ভিড়ে ও জটে প্রতিপক্ষ নিরবে গুছিয়ে নিচ্ছে নিজের ভোটের মাঠ।

আর আওয়ামীলীগ বাড়ছে কোলাহল, কোন্দল, উত্তেজনা, কাঁদাছু ড়াছুড়ি। আশাবাদী ভোটার হচ্ছে হতাশ ও বিভ্রান্ত।
আওয়ামীলীগ এর সভা মজলিশে উন্নয়ন প্রচার না করে চলছে একে অপরের বিরুদ্ধে বিশোধঘার।হামলা মামলা।
কেন এর প্রার্থীর ভিড় গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আওয়ামীলীগ এর এক সভায় বলেছেন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাকেই সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন দি তার পক্ষেই কাজ করবেন।

আমদের অনেক অনেক যোগ্য প্রার্থীদের ভিড়ে সকল মতামত ও যাছাই বাছাই এর ভিত্তিতে একজন কেই মনোময়ন দিব। আগামী তে আওয়ামীলীগ বিজয়ী না হলে দেশের অফুরনিয় ক্ষতি হবে। আবার আওয়ামীলীগ এর সাধারণ সম্পাদক এক বক্তব্যে বলেছেন আগামী তে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় না আসলে আওয়ামীলীগ এর অন্তত কয়েক লক্ষ লোক মারা যাবে বা হত্যার শিকার হবে। তাই আওয়ামীলীগ কে অবশ্যই ক্ষমতায় আনতে হবে।আওয়ামীলীগ এর প্রতিটি নেতা কর্মী কে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা আর এক বক্তব্যে বলেছেন, সবাই কে কিভাবে মনোয়ন দিব, মনোয়ন যাকে দিব তার পক্ষে কাজ করবেন।আর যারা মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন, আওয়ামীলীগ যদি পুনরায় সরকার গঠন করে, তাহলে সরকারিভাবে সরকারের মধ্যে মনোনয়ন বঞ্চিতদের সম্মান জানিয়ে সরকারী ভাবে বিভিন্ন পদে পদায়ন করা হবেে।

সরকার ব্যবস্থাপনায় এমন ৬হাজার পদ রয়েছে যেখানে মনোনয়ন বঞ্চিতদের পদায়ন করে কয়েক হাজার পদ খালি পড়ে থাকে। আমি কক্সবাজারের মানুষ।আওয়ামীলীগ এর কর্মী। কক্সবাজারে আওয়ামী রাজনীতিতে আওয়ামীলীগ এর জনপ্রিয়তা বাংলাদেশের অন্যজেলা থেকে বেশ পিছিয়ে। অনুন্নত,সাম্প্রদায়িকতা আচ্ছন্ন আওয়ামী বিরোধী জোটের ভোট বেশী। তাই কক্সবাজারের চার টি আসনে কোন কালেই চার টি আসনে সব ক'টি পায় নি।হয় মহেশখালী কুতুবদিয়া, কক্সবাজার সদর পেলে চকরিয়া পেকুয়া, উখিয়া টেকনাফ পায়নি।

এই প্রথম তিনটি আসন পেয়েছে তাও আবার বিএনপি না নির্বাচনে না আসার কারনে।একটি আসন জোটগত ভাবে জাতিয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সেই চকরিয়া পেকুয়া আসন টি ৭৫র এর পর থেকে প্রতিবার জয়ের সম্ভাবনার আশা জাগালেও অন্তর্দলিয় কোন্দল,জামাত বিএনপির জোট ও কৌশল গত ঐক্যের কারনে হেরে যায় বার বার।
এই বার চকরিয়া পেকুয়া আসন টি পুণোরুদ্ধারের সুযোগ এসেছে।আগেও এসেছিল আওয়ামীলীগ নেতাদের ঈর্ষা বিদ্ধেষ নির্বাচন পরিচালনার ঘাটতি থাকাতে আমরা পারিনি।

বর্তমানে আবারো সেই সুযোগ হাতছানি দিচ্ছে।কিন্তু ডজন ডজন প্রার্থীর ভিড়ে তৃণমুল কর্মীরা বিভ্রন্ত হচ্ছে।
এক প্রবিণ আমাকে প্রশ্ন করলো,যার ইউনিয়ন,ওয়ার্ড কাউন্সিলর হবার যোগ্যতা নাই, রাজনৈতিক কর্ম অভিজ্ঞতা নাই সেও প্রার্থী।

তো কেন এত প্রার্থিতা

১ম আওয়ামীলীগ সভাপতি ঘোষণা করেছেন সবাই ঐক্য থেকে আওয়ামীলীগ ও আওয়ামীলীগ এর প্রার্থী নৌকার পক্ষে কাজ করুন।বাদ পড়া প্রার্থীদের কে সরকার আবারো ক্ষমতায় এলে ঐ ৬হাজার পদে তাদের কে যোগ্যতার ভিত্তিতে মুল্যায়ন ও পদায়ন করা হবে।

২য়আমি এমপি হতে না পারলে কাউকে হতে দিব না।ঘোষিত প্রার্থী পরাজিত হলে সে হতাশ ও আগামী তে পদ অবারিত।

৩য়আওয়ামীলীগ অনেক নেতা আছে বহুদলিয় পরিবার বা আত্মিয় পরিবেষ্টিত। আর অন্যদলের এজেন্ট বা সুবিধাপ্রাপ্ত। আর আওয়ামীলীগ হয়ে অন্যদলের প্রার্থী র পক্ষে অনুপ্রবেশকারী হিসাবে কাজ করা। একটি উদাহারন দিয়ে বলি অন্যদল থেকে আসা নুন্যতম প্রভাবশালী নেতা, সে নিজেও জানে যে সে মনোনয়ন পাবেনা,না পেলে সমস্যা জামাত বা বিএনপির প্রার্থী বিজয়ী হলে তার ক্ষতি নেই, বরং তার থেকে বিভিন্ন সুবিধা নেয়া যাবে।

গেলো সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অর্থমন্ত্রী একি কাজ করেছে।একি ভাবে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও এমন ঘটেছে। ওয়ান ইলাবেনের পর কক্সবাজার সদর আসনের প্রার্থী কে পরাজিত করা,বিরোধী প্রার্থী থেকে আর্থিক সুবিধা আদায় ও অন্যান সুবিধা পাওয়ার জন্য দুজন আগত আওয়ামীলীগ নেতা শেষ জন সভার বক্তিতার উদাহারন দিতে পারি।

এক বক্তা তার বক্তব্যে বলেন আমরা নৌকার প্রার্থী আমার ছোট ভাই আপনারা সবাই বিজয়ী করার জন্য নৌকা মার্কায় ভোট দিবেন।আপনাদের কাছে আমার এই প্রত্যাশা।কিন্তু তাকে ভোট দিতে না চাইলে রামুর বাইরের প্রার্থী কে ভোট দিবেন না।

২য়-বক্তা বলেন ভাই সব রামুর একটি ঐতিয্য আছে।এই রামু মুক্তিযোদ্ধার ঘাটি। আমি আশা করি আপনাদের ভোট নৌকা মার্কায় ভোট দিবেন। আমার এই ছোট ভাইকে আপনাদের যদি ভোট দিতে না চান, তারপর ও রাজাকাত পোলা কে ভোট দিবেন না। চকরিয়া পেকুয়া আসনের নৌকার প্রার্থী কে পরাজিত করার জন্য অন্য এক মনোনয়ন বঞ্চিত এক নেতা প্রায় ভোট কেন্দ্রে গিয়ে গিয়ে লাইনে দাঁড়ানো ভোটারের কাছে জিজ্ঞাসা করতেছে "ইতে ভোট ক্যান পার, ভোট দিয়ে দে ইতারা কি হর, এমপি অইব বলি মনে অরনে"

এই কথা উচ্চারণের সাথে নৌকার পক্ষে ভোট দেয়ার জন্য লাইনে দাঁড়ানো ভোটার মুহুর্তেই তার মত পরিবর্তন করতে দু সেকেন্ড লাগেনি।বিজয়ী হয় বিএনপি। একি পরিস্থিতি মহেশখালী তে ও ঘটেছে। তো এমন পরিস্থি যে সামনেও হবেনা কে বলবে। তাই পরহিংসুক, খন্দকারি চরিত্রের কারনে প্রার্থীর ভিড়।

আগামী জাতিয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি যখন বাধ্য হয়ে ভোটে আসবে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য আওয়ামীলীগ প্রার্থীর ও জেতা কঠিন হবে। আওয়ামীলীগ একটানা ক্ষমতায় থাকায় দলে বিভাজন বেড়েছে বহু গুনে।প্রতিটি আসনে আওয়ামীলীগ ও এমপি লীগ,অবহেলিত বঞ্চিতরা এখন পরস্পর মুখোমুখি। এই পরিস্থিতে আওয়ামীলীগ সভানেত্রী ও আওয়ামীলীগ এর মনোনয়ন বোর্ড দলিয় প্রার্থী মনোনয়নে খুব সজাগ থাকতে হবে।

নিয়মিত মনিটরিং ও দুর্দিনের নেতা কর্মী কে মাঠে নামাতে হবে।তাদের কে মুল্যায়ন ও নিপিড়িত নির্যাতিত কর্মীদের মনোহতাশা দুরিকরণের দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে খুব নিরবে গনেষ উলটে যেতে পারে। আর উচ্চ পর্যায় থেকে দ্রুত টিম পাঠিয়ে নির্বাচনি মাটে বিভ্রান্তি, কোন্দল পাকানো উদ্যেশ প্রণোদিত, বিতর্কিত মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে প্রচারণা চালানো অইদ্দা চইদ্দা দের দ্রুত থামিয়ে দেয়া নৈতিক মনে করি।

না হয় প্রতিটি বিএনপি জামাত জোটের একক প্রার্থী বিপরিতে আওয়ামীলীগ ডজন খানেক প্রার্থী র মিড়িয়ায় কু প্রচারণা ও নির্বাচনি মাটে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।এই কু প্রচারণা ও খবর বাজিতে আওয়ামীলীগ সমর্থিত সাংবাদিকেরা আগ্রগামী।

এদের খবরের হেড়লাইন দেখলে মনেহয় আমরা আবার তাহের উদ্দিন ঠাকুরের জামানায় বিরাজ করছি।এটিও একটি অশনি সংকেত।জামাত কর্মী অপকর্মে ধরা খেয়ে রেহায় পেতে পুলিশ,র‍্যাব ও অন্যান্য বাহিনী কে পরিচয় দেয়ার সাথে সাথেই বাচবিচার না করে, পুলিশের বরত নাম দিয়ে বিশাল হেডিং দিয়ে মিথ্যা খবর প্রচার ও রটায়।পরে খোজ নিয়ে দেখা যায় সে আওয়ামীলীগ এর কেউ নয়, বরং সে বিএনপি জামাতের লোক।এ জাতিয় খবের জন্য পত্রিকা ওয়ালারা সংশোধনও করেনা পরে।তাহলে নির্বাচনী প্রচারে বিরোধী পক্ষের কাছে আওয়ামীলীগ কে ঠেকানোর জন্য ডকুমেন্ট সহ অস্ত্র তুলে দিচ্ছি না।

এ ক্ষেত্রে আওয়ামীলীগ মিড়িয়া উইং খুবই দুর্বল।আর যারা এই উইংগুলোতে দায়িত্ব রত তারাও আবার বিভিন্ন ভাবে বিতর্কিত। আগামী তে আওয়ামীলীগ কে বিজয়ী হতে হলে এসব ক্ষেত্রেও নজর দেয়া দরকার পরিশেষে আওয়ামীলীগ আবারো ক্ষমতায় যেতে হলে দ্রুত প্রার্থী ভিড় কমাতে হবে। সাথে আওয়ামীলীগ এর প্রচার সেল এর শক্তি বাড়ানো ও বিতর্কিত সাংবাদিক নেতাদের সাময়িক অবসরে দেয়া দরকার মনে করি।

লেখক : কবি সাবেক ছাত্রনেতা।