শামীম হাসান মিলন, চাটমোহর (পাবনা) : পাবনার চাটমোহরে এক পীরের অনুসারীদের বিরুদ্ধে অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগ এনে ব্যবস্থা চেয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী এক গৃহবধূ। এমন অপকর্মে ক্ষুব্ধ এলাকার সাধারণ মানুষ। তবে ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পান না অনেকেই। 

লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলার বিলচলন ইউনিয়নের নটাবাড়ীয়া গ্রামের ওয়াহেদ আলী দুই বছর আগে তার স্ত্রী লতা খাতুনকে নিয়ে স্থানীয় ছাইকোলা ডিগ্রি কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হাসানুর রেজা তাপস এর মুরীদ হন। সেখানে গিয়ে নানা অনৈতিক কার্যকলাপ দেখতে পান লতা খাতুনের অভিযোগ। পরে তার স্বামী ওয়াহেদ আলীকে বিভিন্নভাবে ওই পথ থেকে ফেরানোর চেষ্টা করেন তিনি। এরই মধ্যে ওয়াহেদ আলী গ্রামের অন্য নারীর সাথে অনৈতিক কার্যকলাপে লিপ্ত হয়। এ নিয়ে তাদের সংসারে দেখা দেয় অশান্তি।

এদিকে, অভিযোগের বিষয়ে সরেজমিন অনুসন্ধানে গিয়ে জানা যায়, ওই পীরের মুরীদ ধানকুনিয়া গ্রামের মৃত বাহের আলীর ছেলে বোরহান আলী (৪২), মৃত আব্দুস সামাদ সরদারের ছেলে মোন্নাফ আলী (৩৫) ও মৃত ছবু সরকারের ছেলে গোলাম মওলা (৪০) বিভিন্ন সময় গৃহবধু লতা খাতুনের সাথে অনৈতিক কার্যকলাপের প্রস্তাব দেয়। এতে সহযোগিতা করে তার স্বামী ওয়াহেদ আলী। এমনকি এর আগে বোরহান আলী স্বামীর অনুপস্থিতিতে ঘরে প্রবেশ করে লতা খাতুনকে শ্লীলতাহানীর চেষ্টা চালায়।

অভিযোগ রয়েছে শ্লীলতাহানীর চেষ্টা ব্যর্থ হলে বোরহান ও আক্কাস নামের দুইজন মুরিদ সম্প্রতি লতা খাতুনকে বেধড়ক মারপিট করে। এমনটি এ কথা কাউকে জানালে লতা খাতুনকে প্রাণে মেরে ফেলারও হুমকী দেয় অভিযুক্তরা। লতা খাতুন বলেন, পুলিশ যে ব্যবস্থা করে আমি মেনে নেবো। কিন্তু আমি আমার স্বামীর ঘর করতে চাই।

সাংবাদিক আসার খবর পেয়ে গ্রাম থেকে পালিয়ে যায় লতা খাতুনের স্বামী ওয়াহেদ আলী। অভিযুক্তদের মধ্যে খুঁজে পাওয়া গোলাম মওলা নামের পীরের এক মুরীদকে। তিনি এ বিষয়ে জানান, তাপস পীরের অনুসারীদের কেউ খারাপ কাজের সাথে জড়িত নয়। এটা মিথ্যা অভিযোগ। পরে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য সাংবাদিককে তিনি টাকা দেয়ার চেষ্টা করেন।

লতা খাতুনের বোন নার্গিস খাতুন জানান, থানায় অভিযোগ দেয়ার পর একদিন পুলিশ গ্রামে গিয়ে তাদের সাথে কথা বলেছে। তারপর আর তাদের দেখা যায়নি। নিমাইচড়া ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান খোকন সহ স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি টাকা খেয়ে শালিসের নাম করে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছেন বলে দাবি করেন নার্গিস। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই অভিযোগের কোনো সুরাহা না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

এ বিষয়ে এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য শামসুর রহমান বলেন, আমি লোকমুখে শুনেছি ওই পীরের মুরীদদের মধ্যে এমন অনৈতিক কার্যকলাপ হয়। ওই গৃহবধুর মাধ্যমে সবাই জেনেছে। আমিও এটুকু জানি। তবে এলাকায় এসব খারাপ কাজ আমরা সমর্থন করি না। এর একটা সুষ্ঠু সমাধান হওয়া উচিত।

আলাউদ্দিন হোসেন নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, প্রায়শই এমন অনৈতিক কার্যকলাপ ঘটনা ঘটে। পীরের মুরীদ গোলাম মওলা এলাকায় প্রভাব খাটিয়ে নেতৃত্ব দেন। তার লাঠিয়াল বাহিনী আছে। কিছু বলতে গেলেই তার লাঠিয়াল বাহিনী মারতে আসে।

অভিযোগের ব্যাপারে পীর হাসানুর রেজা তাপস বলেন, আমরা শরীয়ত সম্মতভাবে পরিচালিত হই। ইসলামের বাইরে কোনো কাজ না করার জন্য ভক্ত অনুসারীদের নির্দেশ দেই। কেউ যদি করে ব্যক্তিগতভাবে করেছে। তার সাথে পীর বা দরবার শরীফের কোনো সম্পর্ক নেই এবং এর দায় দায়িত্ব দরবার শরীফ গ্রহণ করবে না। তিনি আরো বলেন, মুরীদদের মাঝে কেউ কেউ বিপথগামী আছে। তাদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নিমাইচড়া ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান খোকন বলেন, মুলত ওই গ্রামে বিভিন্ন পীরের মুরীদদের মধ্যে দ্বন্দ্ব কলহ চলছে। আমি ওই গ্রামে গিয়ে জেনেছি, গৃহবধু যে অভিযোগ করেছে তা সত্য নয়। তবে অভিযুক্তদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে মীমাংসা করে দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার (চাটমোহর সার্কেল) তাপস কুমার পাল জানান, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করতে এলাকায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর টিম পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু বাদির স্বপক্ষে উল্লেখযোগ্য স্বাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তারপরও পীরসহ তার অভিযুক্ত অনুসারী ও বাদি পক্ষকে থানায় ডাকা হয়েছে।

(এসএইচএম/এসপি/অক্টোবর ০৯, ২০১৮)