সাকিব জামাল


শ্রেণিকক্ষে পাঠগ্রহণে, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জনে এ জীবনে যতো শিক্ষকের সংস্পর্শ পেয়েছি সব শিক্ষকের অবদান স্বীকার করছি কৃতজ্ঞ চিত্তে । স্বীকার না করাঅকৃতজ্ঞতা!

বিষয় হলো ৫ই অক্টোবর ছিলো বিশ্ব শিক্ষক দিবস । আমি ঐদিনটিতে আমার নিউজফিডে খেয়াল রেখেছিলাম । শিক্ষকদের নিয়ে আবেগী কোন লেখা তেমনএকটি চোখে পড়েনি! বরং দু-একটি তিরস্কারমূলক পোস্ট চোখে পড়েছে!

এই কারনে ভীষণভাবে আমার মনে যে বিষয়টি নাড়া দিলো তা হলো "ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কে বিচ্ছিন্নতাবোধ" ।

আমার কথা বলি । আমি যখন প্রিয় শিক্ষক হিসেবে কাউকে কল্পনা করতে যাই তখন আমার সামনে যেসব প্রিয়মূখ ভেসে ওঠে তার বেশিরভাগ শিক্ষকই হলেনপ্রাথমিক এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগন । বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের মাত্র দু/তিনজন এর কথা মনে পড়ে! অথচ বেশিসময় ধরে কাটিয়েছি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং এইসময়টিতে বোঝার সক্ষমতাও ছিলো বেশি । কিন্তু এখানেই সম্পর্কহীন থেকেছি শিক্ষকদের সাথে!

আমি চোখ বন্ধ করে নিউরনকে তীব্র আঘাত করেছি তারপরও মাত্র দশ/বারোজন শিক্ষক পেয়েছি যাদেরকে প্রকৃত শিক্ষক মনে হয়েছে । এইসব শিক্ষকদেরবিশেষত্ব হলো- তারা শুধু পড়াশুনাই নয়, জীবন গড়তে, স্বপ্ন গড়তে, নৈতিকবোধ সৃষ্টি করতে আমার পিছনে সময় দিয়েছেন ।

সময় কতো বদলে গেছে! বদলে গেছেন আমাদের শিক্ষকসমাজ। এখন শুধু বাণিজ্যিক সম্পর্কের মতো হয়ে দাড়িয়েছে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক । আমরা যখনপ্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্তরের ছাত্র ছিলাম তখন শিক্ষাকে পন্য মনে হয়নি । কোন বিষয় না বুঝতে পারলে সরাসরি শিক্ষকদের কাছে চলে গেছি- উকিলদের মতপরামর্শ ফি দিতে হয়নি বা ডাক্তারদের মত ভিজিটও দিতে হয়নি! দেখেছি- শিক্ষকদের শ্রেণীকক্ষে পাঠদানসহ ছাত্রদের পরিস্থিতি বিবেচনায় কমবেশি অতিরিক্তসময় ব্যয় করতে । তাদের আর্থিক লোভও ছিলো না । বেশ কষ্ট করে সংসার করেছেন অনেক শিক্ষক তবুও ছাত্রদের বিনে পয়সায় পড়াতে না করেন নি ।এমনকি বিভিন্নভাবে পৃষ্ঠপোষক জোগার করে গরীব মেধাবীদের পড়াশুনায় সহযোগিতা করেছেন অভিভাবকের মত ।

যাহোক, সহজভাবেই এটি বোঝা যায়- বাজারে পন্য বিক্রেতা ক্রেতার কাছ থেকে সম্মান আশা করতে পারেন না খুব একটি । শিক্ষা পন্য না হলে শিক্ষকের মর্যাদাওথাকবে ।

সুতরাং দুটো বিষয়:

১. প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াও শিক্ষকদের জীবন গড়ার শিক্ষা দিতে হবে ছাত্রদের । এবং
২. শিক্ষাকে বাণিজ্যিকীকরণ করা যাবে না ।

তবেই ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের এই বিচ্ছিন্নতাবোধ কমবে বলে আমি মনে করি । এবং কিভাবে এই বিচ্ছিন্নতাবোধ কমিয়ে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটানো যায় এটিও গবেষণার ক্ষেত্র হওয়া উচিৎ । সুন্দর সমাজ গঠন, সুনাগরিক গঠন এবংবুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন একটি জাতি গঠনে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক একটি বড় নিয়ামক ।

লেখক : কবি