নওগাঁ প্রতিনিধি : জমিজমা নিয়ে বিরোধ। একাধিকবার সালিশ বৈঠকও হয়েছে। কিন্তু নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়নি। অবশেষে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে বাড়ির প্রাচীর ঘেঁষে মাটি কেটে গভীর গর্তের সৃষ্টি করা হয়েছে। এতে চরম ঝুঁকির মুখে রয়েছে একটি বসতবাড়ি। ঘটনাটি ঘটেছে নওগাঁর মান্দা উপজেলার সদর ইউনিয়নের রনাহার গ্রামে।

স্থানীয়রা জানান, মান্দা সদর ইউনিয়নের ভোলাম গ্রামের গেন্দি বেওয়া ও তার বোন নয়ান বেওয়া সিএস খতিয়ানমুলে পাশের রনাহার মৌজার ৯০ নম্বর দাগে ৪৪ শতক জমির মালিক ছিলেন। এর মধ্যে গেন্দি বেওয়ার অংশ ছিল ২৭ শতক ও নয়ান বেওয়ার অংশ ছিল ১৭ শতক। গেন্দি বেওয়ার মৃত্যুর পর তার একমাত্র ছেলে মহবতুল্যাহ শাহ মায়ের সমুদয় সম্পত্তি আছির উদ্দিন মন্ডল ও এনায়েত মন্ডলের কাছে বিক্রি করে দেন।

স্থানীয় মজির উদ্দিন মল্লিক, অজির উদ্দিন মন্ডল, বাহার উদ্দিন মন্ডলসহ আরও অনেকে জানান, সিএস খতিয়ানের আরেক ওয়ারিশ নয়ান বেওয়ার মৃত্যুর পর তার বোনের তিন নাতি দবির উদ্দিন শাহ, কবেজ উদ্দিন শাহ ও শাহাবুদ্দীন শাহ অবশিষ্ট ১৭ শতক সম্পত্তির মালিক হন ও তাদের নামে এসএ ও আরএস খতিয়ান প্রস্তুত হয়। এদিকে কবলাসুত্রে মালিক এনায়েত মন্ডল ২৭ শতক সম্পত্তির মধ্যে গেন্দা মন্ডলের নিকট ১৮ শতক সম্পত্তি বিক্রি করেন। সেই সুত্রে গেন্দা মন্ডলের নামে এসএ ও আরএস খতিয়ান প্রস্তুত হয়। অবশিষ্ট ৯ শতক সম্পত্তি এসএ ও আরএস খতিয়ানভূক্ত হয় আরেক কবলাদার আছির উদ্দিনের নামে। এই ৯ শতক সম্পত্তিতে আছির মন্ডলের নাতি নওসাদ গংরা বসতবাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছেন।

অপরদিকে দবির উদ্দিন শাহ, কবেজ উদ্দিন শাহ ও শাহাবুদ্দীন শাহের মৃত্যুর পর তাদের বিভিন্ন ওয়ারিশদের নিকট থেকে কয়েকটি দলিলমুলে একই গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রহিম সাড়ে ৮ শতক সম্পত্তি ক্রয় করেন। পরে ওই সম্পত্তিতে বসতবাড়ি নির্মাণ করে দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে সপরিবারে বসবাস করছেন তিনি। একই দাগে নওসাদ গংএর ওয়ারিশ সাজেনুর খাতুন ৬ শতক সম্পত্তি ক্রয় করেন। অবশিষ্ট সাড়ে ৩ শতকের উত্তরাধিকার সুত্রে প্রাপ্ত হন শাহাবুদ্দীর শাহের ওয়ারিশগন।

ভুক্তভোগী আব্দুর রহিম জানান, আছির উদ্দিন মন্ডলের ওয়ারিশ নওসাদ গংরা ১৯২৪ সালের একটি দলিলমুলে সমুদয় সম্পত্তি দাবি করে দখলের চেষ্টা করলে বিরোধের সৃষ্টি হয়। এনিয়ে পুলিশ ও স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মধ্যস্থতায় একাধিকবার সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও কোনো নিষ্পত্তি হয়নি। পরবর্তীতে নওগাঁ সহকারী জজ আদালতে নওসাদ গংরা মামলা দায়ের করেন।

আব্দুর রহিমের অভিযোগ, মামলার পর শাহাবুদ্দীন গংদের সাড়ে ৩ শতক সম্পত্তি নওসাদ গংরা জবরদখল করে মাটি কেটে গভীর গর্ত তৈরি করেছে। এতে তার বসতবাড়ির প্রাচীর হুমকির মুখে পড়েছে। গভীর গর্তের কারণে যেকোন সময় সীমানা প্রাচীরটি ধসে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।

তবে প্রতিপক্ষ নওসাদ আলী দাবি করেন, রনাহার মৌজার ৯০ দাগে ৪৪ শতক জমির কবলাসুত্রে মালিক আছির উদ্দিন মন্ডল ও এনায়েত মন্ডল। কিন্তু রেকর্ডভূক্ত হওয়ার সময় ভুলবশত ওই সম্পত্তি কবলাদারদের সঙ্গে মহবতুল্যাহ শাহের ছেলেদের নাম অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি মামলা নওগাঁর আদালতে চলমান রয়েছে বলে তিনি জানান।

মান্দা থানার অফিসার ইনচার্জ মাহবুব আলম বিষয়টি অবহিত থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, বসতবাড়ির প্রাচীর ঘেঁষে গর্ত খনন করা সঠিক হয়নি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে উভয়পক্ষকে স্ব-স্ব অবস্থানে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

(বিএম/এসপি/অক্টোবর ১০, ২০১৮)