কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ার খোকসা ডিগ্রী কলেজের প্রথম বর্ষের মেধাবী ছাত্রী সুমাইয়া তরনীর আত্মহননের ঘটনায় অভিযুক্ত ধর্ষক সেই শাহীন আদালতে আত্মসমর্পন করেছেন। 

বুধবার বেলা সাড়ে ১১ টায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট খোকসা আমলী আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিন প্রার্থনা করেন শাহীন।

বিজ্ঞ আদালতের বিচারক মাসুদুজ্জামান জামিন না মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। আত্মহত্যা করার আগে রেখে যাওয়া সুইসাইড নোটে শাহীন তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে বলে উল্লেখ করে এবং তার উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানিয়ে রেখে যায় ওই কলেজ ছাত্রী। কিন্তু খোকসা থানার সদ্য বিদায়ী বিতর্কিত ওসি বজলুর রহমান চাপের মুখেও ধর্ষণ মামলা না নিয়ে গত ৫ অক্টোবর আত্মহত্যা প্ররোচনার অভিযোগে অভিযুক্ত শাহীনের বিরুদ্ধে ৩০৬ ধারায় মামলাটি এন্ট্রি করেন। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত শাহীন আত্মগোপনে ছিল।

প্রথম বর্ষের বিজ্ঞান শাখার মেধাবী ছাত্রী সুমাইয়া তরণী অসুস্থ্য আপন খালাকে দেখতে গত ৩০ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়া জেলা শহরে যাওয়ার জন্য মামার শ্বশুর শাহীনের মোটর সাইকেলে রওনা হয়। কিছু দুর যাওয়ার পর শাহীন নতুন রাস্তা দিয়ে যাওয়ার কথা বলে কৌশলে তাকে পদ্মা নদীর চরে নিয়ে য়ায় এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে তাকে ধর্ষণ করে।

পরে রাত সাড়ে আটটার দিকে ধর্ষক নিজে ছাত্রীটিকে বাড়ির গেটে নামিয়ে দিয়ে যায়। সে রাতেই ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রী তার মা রেশমী পারভীন বন্যাকে সমস্ত ঘটনা খুলে বলে। কিন্তু মান-সম্মানের ভয়ে তার মা বিষয়টি গোপন রাখতে বলেন।

ক্ষোভ, লজ্জা ও ঘৃণায় পরের দিন শনিবার সন্ধ্যায় নিজের ঘরের সিলিং ফ্যানের সাথে ওড়না পেঁচিয়ে মেধাবী ছাত্রী সুমাইয়া তরণী আত্মহত্যা করে। সে সময় ছাত্রীর মৃত্যুর কারণ অন্ধকারে ঢেকে যায়।

অবশেষে ৫ দিনের মাথায় গত বৃহস্পতিবার বিকালে খাতার স্তুপের মধ্যে একটি খাতার পাতা উল্টাতেই ছাত্রীর আত্মহত্যার আগে লেখা একটি সুইসাইড নোট পওয়া যায়। ওই নোটে লেখা ছিল আপন মামার শ্বশুর শাহীন তাকে ধর্ষণ করে। ওই সুইসাইড নোটে নরপশু শাহীনের বিচারও দাবি করে গেছে ওই ছাত্রী। ঘটনার পর থেকে শাহীন গা ঢাকা দেয়। শাহীন কমলাপুর গ্রামের মকবুল হোসেন মজনুর ছেলে। সে খোকসা হেলথ কেয়ার নামের একটি ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের অংশীদারি মালিক।

নিহত ছাত্রীর চাচা ইস্তেকবাল চয়ন জানান, তারা মেয়ের আত্মহননের কারণ বুঝতে না পেরে সে সময় তারা অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছিলেন। সুইসাইড নোট পাওয়ার পর ওই দিনই তারা সেটি থানায় জমা দেন এবং থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে মামলা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু পুলিশ এ ঘটনায় মামলা নিতে অপারগতা প্রকাশ করে।

এ ঘটনায় অবিলম্বে শাহিনের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষুদ্ধ খোকসা ডিগ্রী কলেজের শিক্ষার্থীরা কুষ্টিয়া-রাজবাড়ি মহাসড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন করে।

বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা ২৪ ঘন্টার মধ্যে মামলা গ্রহণ করে শাহীনকে গ্রেফতার করার আল্টিমেটাম শেষ পর্যন্ত চাপের মুখে ধর্ষণের মামলা না নিয়ে আত্মহত্যা প্ররোচনার অভিযোগে ৩০৬ ধারায় মামলাটি এন্ট্রি করেন খোকসা থানার সাবেক ওসি বজলুর রহমান। এ ঘটনা নিয়ে বিতর্কিত হয়ে পড়ায় ওসি বজলুর রহমানকে জনস্বার্থে গত সোমবার খোকসা থানা থেকে কুষ্টিয়া কোর্টের পরিদর্শক হিসেবে বদলী করা হয়।

(কেকে/এসপি/অক্টোবর ১০, ২০১৮)