মানিক বৈরাগী


গ্রেট বৃটেনে বাঙ্গালীদের বসবাসের শত বছরের ইতিহাস আছে। আছে গৌরমবময় রাজনৈতিক ইতিহাস। পাশাপাশি দালালির ইতিহাসও কম নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বাঙ্গালীরা বৃটিশের পক্ষে অবস্থানের ইতিহাস সমৃদ্ধ। আবার ভারত উপমহাদেশে এই বৃটিশ রাজত্বকে খেদানোর লড়াই সংগ্রামের ইতিহাসও সমৃদ্ধ।

বৃটিশ লন্ডনে বসে বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে বিশ্ব জনমত গঠনের ইতিহাস গৌরবোজ্জল ও সমৃদ্ধ। পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে পিতা মুজিব লন্ডন হয়ে বাংলাদেশে আসেন। তৎকালীন পাকিস্তান দূতাবাসে বাংলাদেশের পতাকা উড়ানোর ইতিহাসও কম গৌরবের নয়।

এই নিরিখে বৃটেনে অবস্থানরত বাঙ্গালিরা আজ তাদের ঐতিহ্য রক্ষায় কেন দোনা মোনা করছেন? বর্তমান সময়ে বৃটেন সরকারে বাঙালীদের প্রতিনিধিত্বও খুব শক্তিশালী। কিন্তু সন্ত্রাসীদের অবস্থান ও কম শক্তিধর নয়। বরং, মুক্তিযুদ্ধপক্ষীয়রা বহুধাবিভক্ত।

গ্রেট বৃটেনের প্রত্যেক প্রদেশে আওয়ামীলীগের কমিটি আছে। বৃটেনে কেন্দ্রীয়ভাবেও আওয়ামীলীগের কমিটি আছে। প্রতিটি কমিটি খুব শক্তিশালী। তবে তারা নিজেরা নিজেদেরকে ঠেকাতে খুব হেডমওয়ালা। প্রতিটি গ্রুপ বিরাট বিরাট সভা করে একে অপরের বিরুদ্ধে।

বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা বৃটেন সফরে গেলে সবাই এক জায়গায় আসে, তবে আলাদা আলাদা গ্রুপ করে। সভানেত্রীর সাথে মুহুর্মুহু ছবি তুলতে ভিড় করে। সভা শেষে কেউ কেউ নাকি সভানেত্রীকে একে অপরের বিরুদ্ধে বিচার ও দেয়। যা নেত্রী মোটেও পছন্দ করে না।

আবার, এই বৃটেনেই বাস করে বাংলাদেশের কুখ্যাত অপরাধীরা। এই অপরাধীদের শক্তি ও টাকার অভাব নাই। বৃটেন সারা বিশ্বে সভ্যতার ছবক দিলেও নিজেরা এই সব অপরাধীদের নিরাপদে আশ্রয়প্রশ্রয় দেয়। কথার মারপ্যাঁচে রাজনীতি করার সুযোগও দেয়। তাদের নিরাপত্তাবিধানও করে। বৃটেন নিজেদের সাম্রাজ্যবাদী মোড়লীপনা বিস্তারের স্বার্থে অপরাধী তৈরিও করে জেনেছি। ওসামা বিন লাদেনকে সামরিক প্রশিক্ষণ, জঙ্গীবাদে উদ্বুদ্ধকরণ বৃটেনই করেছে নাকি। ঠিক একইভাবে বাংলাদেশের শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী চৌধুরী মইনুদ্দিন থেকে হালের ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককেও বৃটেনে বসবাসের সুযোগ করে দিয়েছে। তিনি ওখানে বসে বাংলাদেশ বিরোধী জঙ্গী কর্মকান্ডের তদারকি করছেন। ইজরায়েলি উকিল কার্লাইলও বৃটেনে থেকেই রাজ্জাকদের আইনি পরমর্শ দেয়।

বৃটেনে অবৈধভাবে বসবাস করছেন সাবেক সামরিক রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়া ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার গ্রেনেড সন্তান তারেক রহমান। বাংলাদেশের পত্র পত্রিকা, ফেইসবুক, টুইটার, গুগলে তার রাজনৈতিক কর্মকান্ড দেখা যায়। একইভাবে আরেক যুদ্ধাপরাধী লুলা মুসা ওরফে মুসা বিন শমসের বৃটেনে বসবাস করে সারা বিশ্বে অস্ত্র ব্যবসা করে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। সেও বৃটেনে বসে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রন ও নাক গলাতে চায়। তার এক শাবককে বাংলাদেশের রাজনীতিক বানাতে পাকিস্তান-ফেরত স্বৈরাচার এরশাদের পার্টিতে নাম লেখায়। সে আবার আওয়ামীলীগ এর এক বড় নেতার বেয়াইও।

প্রশ্ন বাংলাদেশ বিরোধী ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী, আওয়ামীলীগ বিরোধী কর্মকান্ডে এরা প্রকাশ্যে ষড়যন্ত্রমূলক অপকর্ম ও অপরাধের বিরুদ্ধে বৃটেন আওয়ামীলীগ এর ভুমিকা কি?

মাঝে মাঝে পত্রপত্রিকায় লেখা হয় অমুকের বিরুদ্ধে বৃটিশ সরকার বৃটিশের পাতাল রেলে নাশকতামুলক কর্মকান্ডের জন্য মামলা হয়েছে, পুলিশ তাদের খুঁজছে, এসব খবর আমরা পড়ে উল্লসিত হই; কিন্তু কোন পদক্ষেপ দেখিনা।

বিগত বিএনপি জামাত জোট সরকারের সময় বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত বৃটেনের নাগরিক ও বৃটেনের কুটনীতিক আনোয়ার চৌধুরীর উপর হামলা হয় সিলেটে। এই হামলার পেছনে উল্লেখিত ব্যক্তিবর্গ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। এই খবরও বিবিসি প্রচার করেছে। বৃটেন সরকারও স্বীকার করে। বাংলাদেশের জঙ্গি দলগুলোও উপযুক্ত ব্যক্তিদের পৃষ্ঠপোষকতায় লালিত-পালিত।

লেখক : কবি, সাবেক নির্যাতিত ছাত্রনেতা।