প্রহলাদ মন্ডল সৈকত, রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) : কুড়িগ্রামের রাজারহাটে অতিরিক্ত খরা, বৈরি আবহাওয়া ও বিভিন্ন রোগবালাইয়ে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর আমন ক্ষেত বিনষ্ট হয়ে পড়েছে। এবারে আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশংকা করছে কৃষকরা। সব মিলে প্রতিকার না পেয়ে তাঁরা হতাশায় ভূগছেন।  

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে রাজারহাট উপজেলায় ১২হাজার ৩৩৩ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চারা রোপন করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এবারে আমন ক্ষেতে ১২হাজার ৪৯৫ হেক্টর জমির অর্জিত হওয়া আশা করেন।

এর মধ্যে গত বন্যায় উপজেলা ছিনাই ইউনিয়নে শতাধিক হেক্টর জমির ধান বিনষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া বৈরি আবহাওয়া ও অতিরিক্ত খরার কারণে কৃষকরা সঠিক সময়ে আমন ধানের চারা রোপন করতে পারেনি। বিলম্ব হলেও সেচ দিয়ে চারা রোপন করেন। কিন্তু সঠিক সময়ে পানির অভাবে আমন ধানের ক্ষেতগুলোতে নানা ধরনের রোগবালাই দেখা দেয়। অতিরিক্ত খরায় ক্ষেত চৌচির হয়ে ফেঁটে যায়। দেখা দেয়, খোলপোড়া সহ বিভিন্ন রোগবালাই। এ রোগে প্রায় ৪হাজার হেক্টর জমির ধান বিনষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা করছে কৃষকরা। তবে উপজেলা কৃষি অফিস তা অস্বীকার করেছে।

১১অক্টোবর বৃহস্পতিবার উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এ রোগ দেখা দিলে ধান গাছগুলো হলদে হয়ে বিবর্ণ হয়ে যায়। দু’একদিনের মধ্যে গাছগুলো শুকে খড়ে পরিনত হয়। এক জায়গায় এ রোগ ধরলে কারেন্ট রোগের মতো পুরো জমিতে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ে।

রাজারহাট বাজার থেকে ১কিলোমিটার দুরে মেকুরটারী গ্রামের ১ নং ওয়ার্ডের হাসপাতাল মোড়ে আঃ হক মিয়ার বর্গাকরা ৩০ শতক জমিতে দেখা দিয়েছে ভিন্ন চিত্র। পুরো ক্ষেতের অর্ধেক জমিতেই ধানগাছ পুড়ে খড় হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও খড়ের দেখাও মেলে না। দুর থেকে দেখলে মনে হয় ওই ক্ষেতে কেউ আগুন ধরে দিয়েছে।

ওই ক্ষেতের মালিক আঃ হকের সাথে কথা বলে জানা যায়, জমিতে ব্রি-৫২ ধানের চারা রোপন করা হয়েছে। চারা রোপনের পর থেকে গাছ মরে যাওয়া শুরু হয়। বেশ কয়েকবার চারা রোপন করলে ওই একই অবস্থা বিরাজ করে। ওই ক্ষেতে দু’বার দানাদার স্প্রেও করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও এর প্রতিকার হয় নাই। শুধু আঃ হক নয়, সাহেব বাজার এলাকার আঃ খালেকের ক্ষেতেও একই অবস্থা।

এ ব্যাপারে ওই ওয়ার্ডে দায়িত্বরত উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মোঃ দিলদার হোসেন জানান, অতিরিক্ত খরার কারণে কিংবা ভাল বীজ সংগ্রহ না করায় ফসলের এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিটি এলাকায় খোলপোড়া রোগ দেখা দিয়েছে।

কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে, যেসব জমিতে এ রোগ দেখা দিয়েছে, প্রতিকারের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে বিকাল বেলা নাটিবো-৭৫ ডব্লিউ জি প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৪গ্রাম করে ৫শতক জমিতে সপ্তাহে দু’বার দিতে হবে। এ ছাড়া সপসিন কীটনাশক ১০ লিটার পানিতে ২৬গ্রাম ৫শতক জমিতে এবং বিঘা প্রতি ৫ কেজি এমওপি উপরিভাগে প্রয়োগ করতে হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি অফিসার সৈয়দা সিফাত জাহান বলেন, অতিরিক্ত খরায় আমন ক্ষেতে খোলপোড়া রোগ দেখা দিয়েছে। ইতোধ্যে এ রোগ থেকে প্রতিকারের জন্য কৃষকদের মাঝে ব্যাপক প্রচার সহ পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, সেচ প্রয়োগ করতে কৃষকদের আগ্রহী করতে পারলে এ রোগ প্রতিকার হবে।

উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, খোলপোড়া রোগে তেমন প্রার্দুভাব নেই। কিছু কিছু এলাকায় দেখায় দিয়েছে, তাই সম্পূরক সেচ দিতে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

(পিএমএস/এসপি/অক্টোবর ১২, ২০১৮)