স্টাফ রিপোর্টার : সম্প্রতি পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নয়টি ধারা নিয়ে আলোচনার নামে কোনও প্রহসন মানবে না সম্পাদক পরিষদ। আইনটির নয়টি ধারা বাতিলের দাবি জানিয়ে এই ধারাগুলো মুক্ত গণমাধ্যম ও স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থী বলেও মন্তব্য করছে তারা।

সোমবার সকালে ডিজিটাল আইনের ৯টি ধারা সংশোধনের বিষয়ে ৬ দফা দাবিতে আয়োজিত এক মানববন্ধনে একথা বলেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনটির আয়োজন করা হয়।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকে এর বিভিন্ন ধারা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিল সম্পাদক পরিষদসহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন। তাদের আপত্তির সুরাহা না করেই গত ১৯ সেপ্টেম্বর সংসদে ওই আইন পাস করা হয়।

এর আগে গত শনিবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নয়টি ধারা নিয়ে আপত্তির বিষয়ে তিন মন্ত্রী সম্পাদক পরিষদকে দেয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছেন বলে মন্তব্য করেন ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত।

সম্পাদক পরিষদ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরোধী নয় উল্লেখ করে মাহফুজ আনাম বলেন, ‘পাস হওয়া আইনটি স্বাধীন সাংবাদিকতায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।’

আলোচনার নামে কোনো প্রহসন সম্পাদক পরিষদ মেনে নেবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তথ্যমন্ত্রীসহ সরকারের তিন মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন। তিন মন্ত্রীর পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল, সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগ মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলা হবে এবং মন্ত্রিসভার অনুমোদন পেলে এ নিয়ে আরও আলোচনা করা হবে। কিন্তু গত দুটি মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’

‘এই আইনটি স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মুক্ত গণমাধ্যমের পরিপন্থী। সাইবার জগতের লাগামহীন অবস্থা নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি আইনের প্রয়োজন আছে। কিন্তু বর্তমানের এই আইনটি গণমাধ্যমকেও নিয়ন্ত্রণের সুযোগ রাখা হয়েছে।’

আগামী সংসদ অধিবেশনে আইনটি সংশোধন করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও স্বাধীন সাংবাদিকতা নিশ্চিতের আহ্বান জানায় সম্পাদক পরিষদ।

সম্পাদক পরিষদের দাবিগুলো

১. সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বাকস্বাধীনতা সুরক্ষার লক্ষ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩ ধারা অবশ্যই যথাযথভাবে সংশোধন করতে হবে।

২. এসব সংশোধনী বর্তমান সংসদের শেষ অধিবেশনে আনতে হবে।

৩. পুলিশ বা অন্য কোনো সংস্থার মাধ্যমে কোনো সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে তল্লাশি চালানোর ক্ষেত্রে তাদের শুধু নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু আটকে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া যাবে; কিন্তু কোনো কম্পিউটারব্যবস্থা বন্ধ করার অনুমতি দেওয়া যাবে না। তারা শুধু তখনই প্রকাশের বিষয়বস্তু আটকাতে পারবে, যখন সংশ্লিষ্ট সংবাদপ্রতিষ্ঠানের সম্পাদকের সঙ্গে আলোচনা করে কেন ওই বিষয়বস্তু আটকে দেওয়া উচিত, সে বিষয়ে যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে পারবে।

৪. কোনো সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের কোনো কমপিউটারব্যবস্থা আটকে দেওয়া বা জব্দ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই উচ্চ আদালতের আগাম নির্দেশ নিতে হবে।

৫. সংবাদমাধ্যমের পেশাজীবীদের সাংবাদিকতার দায়িত্বের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অপরাধের ক্ষেত্রে প্রথমেই আদালতে হাজির হওয়ার জন্য তাদের বিরুদ্ধে সমন জারি করতে হবে (যেমনটা বর্তমান আইনে আছে) এবং সংবাদমাধ্যমের পেশাজীবীদের কোনো অবস্থাতেই পরোয়ানা ছাড়া ও যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ ছাড়া আটক বা গ্রেপ্তার করা যাবে না।

৬. সংবাদমাধ্যমের পেশাজীবীর দ্বারা সংঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের গ্রহণযোগ্যতা আছে কি না, তার প্রাথমিক তদন্ত প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমে করা উচিত। এই লক্ষ্যে প্রেস কাউন্সিলকে যথাযথভাবে শক্তিশালী করা যেতে পারে।

৭. এই সরকারের পাস করা তথ্য অধিকার আইনকে দ্ব্যর্থহীনভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ওপর প্রাধান্য দেওয়া উচিত। ওই আইনে নাগরিক ও সংবাদমাধ্যমের জন্য যেসব স্বাধীনতা ও অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে, সেগুলোর সুরক্ষা অত্যাবশ্যক।

মানববন্ধনে মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, নিউএজ সম্পাদক নূরুল কবীর, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, নয়াদিগন্ত সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দীন, সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মুনিরুজ্জামান, করতোয়া সম্পাদক মো. মোজাম্মেল হক, ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন, যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম, বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, ঢাকা ট্রিবিউন সম্পাদক জাফর সোবহান, সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি, ইনডিপেনডেন্ট সম্পাদক এম শামসুর রহমান, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক শহীদুজ্জামান খান, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

(ওএস/এসপি/অক্টোবর ১৫, ২০১৮)