স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ‘ঘ' ইউনিটের ১ম বর্ষ সম্মান শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষার স্থগিত ফল আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টায় প্রকাশ করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান প্রশাসনিক ভবনের কেন্দ্রীয় ভর্তি অফিসে (কক্ষ নং-২১৪) আনুষ্ঠানিকভাবে এ ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ড. নুর-ই-ইসলাম সেলু এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে গতকাল সোমবার সকাল ১১টার দিকে ঢাবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভর্তি পরীক্ষার ফল মঙ্গলবার দুপুর ১টায় কেন্দ্রীয় ভর্তি অফিসে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে।

এর দুই ঘণ্টা পর দুপুর ১টা ৪ মিনিটে আরেক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উপাচার্য দফতরের অ্যাসাইনমেন্ট অফিসারের পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তির কার্যক্রম স্থগিত করা হলো। অর্থাৎ ‘ঘ’ ইউনিটের ফল প্রকাশ স্থগিত করা হলো। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যথাসময়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হবে।

গত ১২ অক্টোবর শুক্রবার ‘ঘ’ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা শুরুর পৌনে এক ঘণ্টা আগে হাতে লেখা প্রশ্ন ফাঁস হয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। হাতে লেখা প্রশ্নের বাংলায় ১৯টি, ইংরেজিতে ১৭টি, সাধারণ জ্ঞান ৩৬টি (বাংলাদেশ ১৬, আন্তর্জাতিক ২০) মোট ৭২টি প্রশ্ন হুবহু মিলে যায়।

সেদিন সকাল ১০টা ২৮ মিনিটে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের কপিগুলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অফিসে নিয়ে আসেন কয়েকজন সাংবাদিক। সেটি বিশ্ববিদ্যালয় সহকারী প্রক্টর সোহেল রানার কাছে জমা দেন তারা। পরীক্ষা শেষে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার সঙ্গে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন হুবহু মিলে যায়।

তাৎক্ষণিক সহকারী প্রক্টর সোহেল রানা বলেন, পরীক্ষার আগে প্রশ্নগুলো বের হলে সেটি ফাঁস হওয়া বলা যেতে পারে। কিন্তু পরীক্ষা চলাকালে বের হলে সেটাকে প্রশ্ন ফাঁস বলা যাবে না। আমার মনে হয় কেউ পরীক্ষার হল থেকে ছবি তুলে বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছে। এ চক্রকে আমরা ধরার চেষ্টা করছি। আর এটি হয়তো নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না ক্যাম্পাসের বাইরে কেন্দ্র বেশি হওয়ায়। এ সমস্যাগুলো ক্যাম্পাসের বাইরের কেন্দ্রগুলোতে হয়ে থাকে।

ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ এনে পরীক্ষা বাতিলের দাবি তোলে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো।

এদিকে শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতায় ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস ও ডিজিটাল জালিয়াতির অভিযোগে ৬ জনকে গ্রেফতার করে সিআইডি।

এ ঘটনায় রাজধানীর শাহবাগ থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা কামরুল আহসান।

মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়, আসামিরা পরীক্ষার দিন রাত ১২টা ৫ মিনিট থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত প্রশ্নফাঁস করে। তারা মোবাইল সিমকার্ড, ইন্টারনেট, ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে জালিয়াতির মাধ্যমে ডিজিটাল সিস্টেমে প্রবেশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন দফতরের নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র সংগ্রহ এবং তা স্থানান্তর করে অবৈধভাবে অর্থ গ্রহণ করে আসছিল।

রবিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী। তিনি বলেন, সিআইডি প্রশ্নপত্র জালিয়াতি চক্রের ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতাররাসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছি। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। কেউ অপরাধ করে ছাড় পাবে না।

গ্রেফতাররা হলেন- জাহিদুল ইসলাম (৪৫), ইনসান আলী রকি (১৯), মোস্তাাকিম হোসেন (২০), সাদমান সালিদ (২১), তানভির আহমেদ (২১) ও আবু তালেব (১৯)।

এর আগে গত বছরও ভর্তি পরীক্ষায় ‘ঘ’ইউনিটের প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। টানা তিনবার ‘ঘ’ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ আমলে না নিয়ে ফল প্রকাশ করতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

(ওএস/এসপি/অক্টোবর ১৬, ২০১৮)