বান্দরবান প্রতিনিধি : বান্দরবানের দূর্গম সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী ম্যালেরিয়া রোগ। জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে গত ১০ দিনে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানাগেছে। তবে স্বাস্থ্য বিভাগ ৬ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে।

থানছি উপজেলা চেয়ারম্যান ক্য হ্লা চিং মারমা জানান, থানছি উপজেলার মায়ানমার সীমান্তবর্তী দুর্গম এলাকা গুলোতে বয়স্ক ও শিশুরা অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। রোগীরা প্রচন্ড জ্বরে দেই-এক দিন ভোগার পর মারা যায়। প্রাথমিক ভাবে রোগ নির্ণয় করতে না পারলেও পরে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে রোগের লক্ষণ দেখে স্যালিব্রেল ম্যালেরিয়া বলে ধারনা করা হয়। থানছি উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা জিন্না পাড়া, অংসা খেয়াং পাড়া, রায়বাহাদুর পাড়া, সত্যমণি ত্রিপুরা পাড়া, চিং থোয়াই হেডম্যান পাড়ায় গত ১০ দিনে ১২ জনের প্রাণহানীর ঘটনা ঘটেছে।

সীমান্তবর্তী লিক্রে, আধাঁর মানিক, অং থোয়াই প্রু পাড়াসহ আরো বেশ কয়েকটি পাড়ায় ২ শতাধিক শিশু ও বৃদ্ধা ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে বলে দাবী করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। রেমাক্রী ইউপি চেয়ারম্যান মালিরাম ত্রিপুরা জানান, সিংগাফা মৌজার অন্তর্গত অধিকাংশ পাড়ায় ম্যালেরিয়া জ্বরে ভুগছে অর্ধশতাধিক মানুষ। চিকিৎসা সেবা না থাকায় হতাশ এলাকাবাসী।

এদিকে উপজেলা চেয়ারম্যান ক্য হ্লা চিং মারমা আরো জানান, কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে থানছি উপজেলায় অত্যধুনিক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মান করা হলেও ডাক্তারসহ প্রয়োজনীয় স্টাফ না থাকায় রোগীরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে যুগের পর যুগ। বর্তমানে ১ জন নার্স দিয়ে রোগী দেখা শোনা করতে গিয়ে ব্যহত হচ্ছে সার্বিক চিকিৎসা কার্যক্রম। তিনি ম্যালেরিয়া উপদ্রুত এলাকায় দ্রুত মেডিক্যাল টিম পাঠানোর দাবী জানান।

অপরদিকে থানছি থেকে ম্যালেরিয়া রোগ দ্রুত অন্যান্য উপজেলায়ও ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানান বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য কাঞ্চনজয় তংচ্যঙ্গ্যা। তিনি জানান, থানছিতে ম্যালেরিয়া রোগের সংবাদ পাওয়ার পর রোয়াংছড়ি উপজেলায়ও ম্যালেরিয়া আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে।

সিভিল সার্জন ডা: মং তে ঝ জানান, ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংবাদ পাওয়ার পর গতকাল ৪টি ম্যাডিক্যাল টিম থানছিতে পাঠানো হয়েছে। ২ জন ডাক্তারের তত্বাবধানে মেডিক্যালটিম গুলো কার্যক্রম চালাবে। তিনি আরো জানান, ইতিমধ্যে ৬ জনের মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। সিভিল সার্জন আরো জানান, প্রয়োজনীয় ওষুধ না থাকায় ম্যালরিয়া উপদ্রুত এলাকায় চিকিৎসা দিতে হিমিশিম খেতে হবে মেডিক্যালটিমকে। বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের দেয়া নগদ অর্থের বাজার থেকে ওষুধ সংগ্রহ করে প্রাথমিক ভাবে রোগিদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হবে।

স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেবে মতে ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে থানছি উপজেলায় ৩জন লামা উপজেলায় ২ জন এবং সদর উপজেলার ডলুপাড়ায় ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন ক্রাইসংপ্রু (৯) চহ্লাপ্রু মারমা (৯) উ থোয়াই চিং মারমা (৫) বিরেন ত্রিপুরা (৮) জগৎ জ্যোতি ত্রিপুরা (১২) জ্যোতিময় ত্রিপুরা (১২)।

থানছি সদর ইউপি চেয়ারম্যান মাংসার ম্রো জানান, দীর্ঘ এক যুগেরও বেশী সময় ধরে প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্য বিভাগ ও বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থাগুলো ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে বিনামূল্যে ম্যালেরিয়া প্রতিষেধক ওষুধ মেশানো মশারী বিতরণ করার পর ম্যালেরিয়া জোন খ্যাত অঞ্চলগুলো থেকে ম্যালেরিয়া রোগ অনেকাংশে নির্মূল হয়েছে। পাশ্ববর্তী রাষ্ট্র মায়ানমারারের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে কার্যকর কোন ব্যবস্থা না থাকায় এ রোগ বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো আক্রান্ত হয়। স্বাস্থ্য সচেতন না হওয়া এবং থানছিতে চিকিৎসা সেবার কোন ব্যবস্থা না থাকায় মৃতের সংখ্যা বেড়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

(এএফবি/এইচআর/জুলাই ১৮, ২০১৪)