সিনিয়র প্রতিবেদক : আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-০৩ (সদর-রামু) আসন নিয়ে চলছে শেষ মুহুর্তের নানা জটিল সব হিসেব নিকেষ ও সমিকরণ। দলীয় অন্তঃকোন্দল, জনবিচ্ছিন্নতা ও নির্বাচনের হাওয়ায় শোরগল সর্বদক্ষিণের জনপদ কক্সবাজারের রাজনৈতিক অঙ্গন।

নতুন ও পুরাতন দুই প্রজন্মের মাঝে বিস্তর ফারাক হওয়ার কারণে বারবার আসনটি আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষেকরা।

নির্বাচনের আগ মূহুর্তে এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সংখ্যা ও পরিসর ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে। দুই একজন প্রার্থী ইতিমধ্যে জনসংযোগও শুরু করেছেন।

এই আসনের যে কয়জন মনোনায়ন প্রত্যাশী আছেন তারা নিজেদের শেষ মুহুর্তের লবিং তদবির নিয়ে রাজধানী কেন্দ্রীক যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত প্রার্থী পরিবর্তন হচ্ছে কিনা, হলেও তা কতটা বিশ্বাসযোগ্য তা নিয়েও সংশয় কাজ করছে স্থানীয় নেতা কর্মীদের মাঝে।

সরেজমিনে আওয়ামী লীগের প্রবীন বেশ কয়েকজন সমর্থকের সাথে কথা বললে তারা জানান, ‘এই আসনে এমন একজনের মনোনায়ন বেশীর ভাগ ভোটার প্রত্যাশা করেন যাঁর সাথে এ অঞ্চলের মানুষের আত্মার সম্পর্ক রয়েছে।’

যিনি দল ও কর্মীদের সম্মান করবেন। যিনি আগামী প্রজন্মের মাঝে দৃষ্টান্ত তৈরি করতে পারেন এমন নিবেদিত, সৎ, কর্মক্ষম, এবং জামায়াত বিএনপির আন্দোলন মোকাবিলা করার ক্ষমতা রাখে এমন শক্তিশালী নেতৃত্ব খুব বেশী দরকার এ অঞ্চলে।’

তাঁরা আশংকা প্রকাশ করে বলেন, ‘যদি বর্তমান অবস্থা চলতে থাকে তাহলে নতুন কর্মীদের মাঝে হতাশা আরো বাড়বে, বাড়বে কোন্দল।’

সরেজমিনে কক্সবাজার সদর ও রামুর বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, এ আসনের সবচেয়ে কনিষ্ঠ মনোনায়ন প্রত্যাশীর নাম ইশতিয়াক আহমেদ জয়। যিনি বর্তমানে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। যিনি সদর রামু আসনের গ্রামে গ্রামে শেখ হাসিনার উন্নয়নের গল্প শিরোনামে আওয়ামীলীগ সরকারের উন্নয়ন প্রচার করছেন এবং সামাজিক ও ধর্মীয় নানা কর্মকা-তে অংশ নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন জনসংযোগ।এই ছাত্রনেতার প্রচার প্রচারনা সৃষ্টিশীল অভিনবত্ব যোগ হওয়ায় দেশব্যাপী সকলের নজর কেড়েছেন।

সম্প্রতি শারদীয় দুর্গাপূজায় বিভিন্ন ম-প পরিদর্শনকালে তরুণ জননেতা জয়ের সঙ্গে প্রতিবেদকের সাথে দেখা হয়ে গেলে তিনি বলেন, আওয়ামী রাজনৈতিক পরিবারে যেহেতু জন্ম সে হিসেবে জন্মের পর থেকেই আমি রাজনীতির মাঠে। আমার বড় চাচা ও মেজ চাচা দুজনেই জাতির জনকের ঘনিষ্ট সহচর ছিলেন। বুদ্ধি হওয়ার পর আমার বাবা চাচা আমাকে প্রথম যে রাজনৈতিক মহাপুরুষের নাম শিখিয়েছেন তাঁর নাম সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমান।

বয়সে এখন আমি তরুণ। কিন্তু আমার কাঁধেই বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠনের এ অঞ্চলের ভার। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তরুণদের খুব কাছ থেকে দেখেছি। তাদের কথা তাদের মত করে বোঝার চেষ্টা করেছি। সমাধানের চেষ্টা করেছি।’

কখনো পেরেছি, আবার কখনো পারিনি। আমার নির্বাচনী এলাকায় ৩ লাখ ৬২ হাজার ভোটার রয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে হাজার হাজার তরুণ। তাদের কান্নার রঙ আমার চেনা। তাদের হাসিমাখা মুখ আমার পরিচিত। নবীন প্রবীন সকলের সাথে আমার হৃদ্যতার সম্পর্ক।’

জয় আরো বলেন, ২০০৭ সালের ১/১১ সামরিক দুশাসনের অস্থির সময়ে পড়াশুনার মাঝপথেই লন্ডন থেকে দেশে ফিরে আসি। সে সময় কক্সবাজারে কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা ও গুটি কয়েক আওয়ামীলীগ নেতার নেতৃত্বে পুরো কক্সবাজারের ছাত্রসমাজকে জাগ্রত করেছি। জননেত্রীর মুক্তির জন্য তরুণদের মাঝে গণজোয়ার সৃষ্টি করেছি।

গণতন্ত্রের মানসকন্যাকে মুক্ত করার জন্য মানুষের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে গনস্বাক্ষর সংগ্রহ করেছি। ২০০৮ এর নির্বাচনে নৌকার মনোনীত প্রার্থীর জয়ের জন্য সাধ্য মতো কাজ করেছি। সাধারন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে ধারন করে দেশরত্নের ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়ন করতে তারুন্যের প্রতিনিধি হয়ে এই জনপদে কাজ করে যাচ্ছি।

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই কখনো রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প, কখনো পরিচ্ছন কক্সবাজার গড়ার আন্দোলন, আবার কখনো কোরবানির ঈদের দিনে বর্জ্য অপসারণ করে ভাল কিছু করার চেষ্টা করেছি। ভাল সৃষ্টিশীল কাজের মধ্য দিয়ে সমাজ পরিবর্তনের লক্ষ্যে কক্সবাজারে এগিয়ে নিয়ে যেতে এই প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে আমি আরো ব্যাপক ভাবে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে চাই।’

সামাজিক উদ্যোগগুলো সর্বমহলে বেশ প্রশংসিত হয়েছে। ছাত্ররাজনীতির সাথে যুক্ত কর্মীদের দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করেছে, নতুন পথ দেখিয়েছে।

দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে ইশতিয়াক আহমেদ জয় বলেন, ‘আমার কাজ আমি করে যাব। সোনার বাংলা গড়ায় সবাইকে পাশে চাই। মনোনায়ন চাইব, নেত্রী এবং দল যদি আমাকে যোগ্য মনে করে তবে অবশ্যই মনোনয়ন পাব। সবশেষে নেত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। উনি যখন যেখানে যা করতে নির্দেশ দিবেন তা পালন করতে নিজেকে প্রস্তুত রেখেছি।

স্থানীয় রাজনীতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সব বিভেদ দূর করে সকল শ্রেণির মানুষকে নিয়ে কাজ করাই আমার আসল লক্ষ্য। আর তাই মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কক্সবাজার ০৩ (সদর-রামু) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি।’

জয় বলেন, ‘আমি কক্সবাজারের সন্তান। এই সমুদ্র আর সমুদ্রতীরের সবকিছুই আমার খুবই আপন। কিন্তু মাঝে মাঝে খুব মন খারাপ হয়,হতাশ হই। কারণ,পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার আর্ন্তজাতিক মানের পর্যটনকেন্দ্র হয়ে উঠতে পারেনি। এই শহর হওয়া উচিত ছিল বাংলাদেশের শুধু নয় পুরো দক্ষিন এশিয়ার পর্যটন রাজধানী।

আমার শহর ও আমার সমুদ্রকে আমি বিশ্বমানের দেখতে চাই। চাই ভারতের গোয়ার সাথে পাল্লা দিক আমার কক্সবাজার। নেপাল ভুটান কিংবা মালদ্বীপ না গিয়ে মানুষ কক্সবাজার বেড়াতে আসুক।

আমাদের সমুদ্রে সীমায় যে বিপুল পরিমান সম্পদ রয়েছে যাকে আমরা “ব্লু ইকোনোমি” সম্দ্রু অর্থনীতি বলছি তার সঠিক ব্যবহারের জন্য আমি আমার তরুন প্রজন্মকে কাজে লাগাতে চাই।’

আপনাদের ভালবাসা সাথে থাকলে আর প্রানপ্রিয় নেত্রী সুযোগ দিলে আমি কক্সবাজার’কে পুরো পৃথিবীর কাছে অপরুপ ও ঈর্ষনীয় করে সাজিয়ে তুলতে কাহ করবো।’

(জেজে/এসপি/অক্টোবর ২৮, ২০১৮)