রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সমাজকল্যাণমন্ত্রী ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের কোনো ভবিষ্যত নেই। তাদের সাত দফা দাবিও অযৌক্তিক ও অসাংবিধানিক। তাই  এই দাবি মেনে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। 

তিনি বলেন, সংবিধান অনুসারে আগামি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে সংসদ ভেঙ্গে দেওয়া কিংবা প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের প্রশ্নই ওঠে না। বরং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এসব দাবি তুলে নির্বাচনে আসার পথ নিজেরা রুদ্ধ করছে। তারা নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইছেন।

মন্ত্রী রবিবার বিকালে সাতক্ষীরার তালায় ওয়ার্কার্স পার্টির সম্মেলন পূর্ব উদ্বোধনী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতা শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে এসব কথা বলেন।]

তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কেবল মাত্র সাংবাদিকদের জন্য প্রযোজ্য নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাইবার ক্রাইম বন্ধে এ ধরনের আইন আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন নির্বাচনের পর এ বিষয়ে আরও ভাবা হবে।

তিনি বলেন, আমি নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি আগামি নির্বাচনে বিএনপি জামায়াত ক্ষমতায় আসতে পারবে না।

প্রশ্নের জবাবে রাশেদ খান মেনন আরও বলেন, নির্বাচনকালিন মন্ত্রিসভা ছোট করার বিষয়টি সাংবিধানিক বিধান নয়। তারপরও প্রধানমন্ত্রী সেটি চাইলে করতে পারেন। এটা সম্পূর্ন তার নিজের এখতিয়ার।

তিনি বলেন, গতবারের নির্বাচনে বিএনপিকে আনার জন্য প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভা ছোট করেছিলেন । এবার তার আর প্রয়োজন নেই।

তালা উপজেলা ওয়ার্কার্স পার্টি সম্পাদক প্রভাষক সরদার রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে উপজেলা পরিষদ চত্বরের শহীদ মিনার পাদদেশে আয়োজিত সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য সাংসদ এড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য দীপংকর সাহা দীপু, সাতক্ষীরা জেলা সম্পাদক উপাধ্যক্ষ মহিবুল্লাহ মোড়ল, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য অধ্যাপক সাবীর হোসেন, উপাধ্যক্ষ ময়নুল ইসলাম, সদর শাখার সম্পাদক এড. ফাহিমুল হক কিসলু, জেলা যুবমৈত্রির সভাপতি স্বপন কুমার শীল প্রমুখ নেতা।

এর আগে মন্ত্রী তালা প্রেসক্লাবে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বলেন, বর্তমান সরকার আমলে সংবাদপত্রের পূর্ন স্বাধীনতা রয়েছে। তবে যেখানে সাংবাদিকদের সমস্যা রয়েছে সে সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, ডিজিটাল আইন বিষয়ে সাংবাদিকদের আপত্তি রয়েছে। আমিও তাদের সঙ্গে একমত। আমি চাই না সংবাদপত্রের কণ্ঠ রোধ করা হোক। তবে সাইবার ক্রাইম দিনে দিনে বেড়ে যাচ্ছে। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। তা না হলে শুধু রাজনীতি নয়, ব্যক্তি পর্যায়েও ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।

মেনন আরও বলেন, ২০১৩ সালে জামায়াত এই সাতক্ষীরাকে জিম্মি করে রেখেছিল। সে সময় জনগনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ। আমরা সেদিন বীজ বপন করেছিলাম জানিয়ে তিনি বলেন আজ দেখুন সংগঠনের চেহারা। ২০১৪ এর নির্বাচনে বিএনপি জামায়াতের আগুন ও বোমা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শান্তিপ্রিয় জনগনের নেতৃত্ব দিয়ে আপনাদের ম্যান্ডেট লাভ করেছিলেন মুস্তফা লুৎফুল্লাহ। আবার নির্বাচন এসেছে। তিনি গত পাঁচ বছরে অনেক উন্নয়ন করেছেন। তিনি কোনো দুর্নীতি করেন নি। তিনি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিও ভঙ্গ করেন নি। নিজের আদর্শকে ধারণ করে তিনি অন্যের আদর্শের প্রতি সম্মান দেখিয়েছেন।

মুস্তফা লুৎফুল্লাহ আবারও ১৪ দলের প্রার্থী হবেন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, কেউ কেউ ১৪ দলে বিভেদ সৃষ্টি করতে চাইছে। মুস্তফা লুৎফুল্লাহ আন্দোলন সংগ্রাম করবেন, আবার সংসদেও যাবেন মন্তব্য করে মেনন বলেন ডিজিটাল বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। গত ১০ বছরে মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন ২০০৫ সালে আমাদের মাথাপ্রতি আয় ছিল ৫৪২ ডলার। আর এখন তা ১৭৫২ ডলারে উঠেছে।

দেশ খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ন হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি সরকারের অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান বলেছিলেন দেশ খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ন হলে বৈদেশিক সাহায্য মিলবে না। মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন আরও বলেন বাংলাদেশ এখন ৩ কোটি ৬০ লাখ মে.টন চাল উৎপাদন করে। আমরা নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে তা বিদেশে রফতানি করতে পারছি। এমনকি ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকেও আমরা খাওয়াচ্ছি।

মৎস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে চতুর্থ অবস্থানে জানিয়ে তিনি বলেন, গার্মেন্টস শিল্পে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। তিনি বলেন এখন আর বাংলাদেশের মানুষ বিদেশ থেকে আসা ব্যবহৃত পোশাক ব্যবহার করে না। বরং বিদেশিরা আমাদের গরম কাপড় তাদের দেশে কিনে নিয়ে যায়। খাদ্যের জন্য, ওষুধের জন্য, করুণার জন্য বাংলাদেশ এখন আর কারও দিকে চেয়ে থাকে না উল্লেখ করে তিনি বলেন ২০১১ তে শেখ হাসিনা যখন ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দেন তখন বিএনপি তা নিয়ে হাসাহাসি করেছিল। তারা দেশের গ্রাম থেকে কমিউনিটি ক্লিনিকগৃুলি বন্ধ করে দিয়েছিল। দুই বছরের মধ্যে দেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করবো।

দেশের মানুষের দারিদ্র্য সীমা হ্রাস পেয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সমাজে সমতার অভাব বেড়েছে , বৈষম্য বেড়েছে। দেশের মোট সম্পদের ৩৭ শতাংশ ভোগ করে ১০ শতাংশ মানুষ। তিনি বলেন তার দল সমতা ভিত্তিক, ন্যায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে আধুনিক বাংলাদেশ গড়তে চায়। যেখানে থাকবে না কোনো সাম্প্রদায়িক হানাহানি। তিনি প্রশ্ন রাখেন আমরা কি গত দশ বছরের উন্নতি অগ্রগতি ধরে রাখবো নাকি বিএনপি জামায়াতের হত্যা খুন মানুষ পোড়ানোর দিকে যাবো। মাত্র একদিনের ভোট আমাদের পাঁচ বছরের ভাগ্য পরিবর্তন করবে মন্তব্য করে তিনি বলেন আগামি নির্বাচনে আপনারা আবারও মুস্তফা লুৎফুল্লাহকে বিজয়ী করুন।

রাশেদ খান মেনন বলেন, ড. কামাল হোসেন বলেছেন ৭ দফা না মানলে শাস্তি দেবেন । কী শাস্তি দেবেন তিনি এই প্রশ্ন রেখে মেনন আরও বলেন ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে শাস্তি দিয়েছেন। ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টায় আইভি রহমানসহ ২৪ জনকে হত্যা করে শাস্তি দিয়েছেন । আরও কী শাস্তি অপেক্ষা করছে তা জানতে চান তিনি।

তিনি বলেন, মইনুল হোসেনকে কেনো জেলখানায় পাঠানো হলো তা নিয়ে হুমকি দিচ্ছে ঐক্যফ্রন্ট। তিনি বলেন আসলে তারা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে পুনর্বাসন দেওয়ার লক্ষ্যে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে মাঠ গরম করছেন ।এতে ভীত হবার কিছুই নেই বলে জানান তিনি। খুনীদের হাতে দেশ যাবে না , জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের হাতেও দেশ যাবেনা উল্লেখ করে তিনি বলেন মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের প্রজন্ম যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন বাংলাদেশ জঙ্গিদের হাত থেকে নিরাপদ দুরত্বে থাকবে।

(আরকে/এসপি/অক্টোবর ২৯, ২০১৮)