নিউজ ডেস্ক : জামায়াতে ইসলামীর রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন। এই বিজ্ঞপ্তি জারির পর নির্বাচনে অংশগ্রহণের অধিকার হারাল যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত এই সংগঠনটি।

মুক্তিযোদ্ধা গাজি গোলাম দস্তগীর-বীর প্রতীক বললেন, আজ প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার জন্য এক প্রশান্তি এনে দিয়েছে আমাদের নির্বাচন কমিশন। বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক এ এম আমিন উদ্দিনের মন্তব্য, জামায়াতের এই রেজিস্ট্রেশন বাতিলের ফলে রাজনৈতিক দল হিসাবে তাদের পরিসমাপ্তি ঘটল।

বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২–এর আওতায় রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতে ইসলামীকে রেজিস্ট্রেশন করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। দলটির রেজিস্ট্রেশন নম্বর ছিল ১৪। ২০০৯ সালে হাইকোর্টে দায়ের করা ৬৩০ নম্বর রিট পিটিশনের রায়ে আদালত জামায়াতে ইসলামীর রেজিস্ট্রেশন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করায় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০এইচ ধারা অনুযায়ী জামায়াতে ইসলামী রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হল। বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেছেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ।

হেলালুদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায়ের কোনও কপি না থাকায় তারা এত দিন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারছিলেন না, হাইকোর্টের রায়ের ওপর আপিল বিভাগের কোনও স্থগিতাদেশ না থাকায় রেজিস্ট্রেশন বাতিলের বিষয়ে গেজেট প্রকাশ করা হয়।

২০১৩ সালের ১ অগস্ট জামায়াতে ইসলামীর রেজিস্ট্রেশন বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় বাংলাদেশের হাইকোর্ট।

বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক এ এম আমিন উদ্দিন বিষয়টির আইনি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, জামায়াতের এই রেজিস্ট্রেশন বাতিলের ফলে রাজনৈতিক দল হিসাবে তাদের পরিসমাপ্তি ঘটল। জামায়াতের রেজিস্ট্রেশন বাতিলের সিদ্ধান্ত হওয়ায় সরকার গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে এই রায় বাস্তবায়িত করল। এর ফলে জামাত সমস্ত রাজনৈতিক অধিকার হারাবে। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে তাদের ঘৃণিত ভূমিকার কারণে রাজনীতিতে তাদের নিষিদ্ধ করার যে গণদাবি ছিল তা-ও পূর্ণ হল। স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কাজ করে রাজনৈতিক অধিকার ভোগের ধৃষ্টতার অবসান হল এবং এর মাধ্যমে শহিদের আত্মা শান্তি পাবে।

মুক্তিযোদ্ধা গাজি গোলাম দস্তগীর তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমরা জীবন বাজি রেখে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিলাম। সেই রক্ত আর মৃত্যুর দামে কেনা দেশে যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে, খুন-ধর্ষণ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, তাদের নির্বাচন কমিশনের রেজিস্ট্রেশন বাতিলের বিষয়টি আমাদের কাছে আনন্দের।

শহিদ আলতাফ মাহমুদের মেয়ে শাওন মাহমুদ তার প্রতিক্রয়ায় বলেন, আমি খুব অল্প ভালতে আলোকিত হই। জামায়াতের রেজিস্ট্রেশন বাতিল, তেমনই এক অল্প ভালর উজ্জ্বল এক আলো। আমাদের বহু বছরের প্রতীক্ষার আলোকিত সময় শুরুর আর এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া।জামায়াতেকে রাজনৈতিক ভাবে পঙ্গু করবার পর জামাতকে নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু হোক। অন্য রাজনৈতিক দলে মিশে থাকা জামায়াতে ইসলামীর সদস্যদের চিহ্নিত করা হোক। প্রচার শুরু হোক জামাত বিরোধী আন্দোলনের।

(ওএস/এসপি/অক্টোবর ৩০, ২০১৮)