রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা শহরের গফুর সাহেবের বাগানবাড়ি এলাকায় আসফিয়া খাতুন চাঁদনীর আত্মহত্যার ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসুচি পালিত হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ১১টায় সাতক্ষীরার কারিমা মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।

কর্মসূচিতে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল ও পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান অংশ নেন।
মানববন্ধন চলাকালে শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা উত্ত্যক্ত করে চাঁদনীকে আত্মহত্যার পথে ঠেলে দেওয়ার দায়ে মেহেদি হাসানের বিচার দাবি করেন। মানববন্ধনে নেতৃত্ব দিয়ে জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল ও পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান বলেন ‘মেহেদিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে’। মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন জেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শফিকুল ইসলাম, প্রধান শিক্ষক আজিজুল ইসলাম, শিক্ষক আবদুল হক, আবদুল মালেক, রুস্তম আলি ও ছাত্র ছাত্রীরা।

সরেজমিনে মঙ্গলবার সকালে গফুর সাহেবের বাগানবাড়ি ও গড়েরকান্দা এলাকায় গেলে আব্দুল মোমিন, রুবেল হোসেন, নার্গিস খাতুনসহ কয়েকজন জানান, তিন বছর আগে স্ত্রী জোহরা খাতুন, মেয়ে চাঁদনী ও মিনুকে রেখে অন্যত্র চলে যান আব্দুল গফুর। এরপর থেকে জোহরা পাড়ায় পাড়ায় মাংস বিক্রি করে সংসার চালাতেন। চালাতেন মেয়ে দু’টির পড়াশুনাও। কারিমা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ শ্রেণীতে পড়াশুনারত চাঁদনীর সঙ্গে গড়েরকান্দার আব্দুর রহমান মুন্সির ছেলে আবু হুরাইরার ভালবাসা গড়ে ওঠে। এনিয়ে চলে চিঠি চালাচালি। সোমবার রাতেই পুলিশ আবু হুরাইরার বাড়ি থেকে চাঁদনীর লেখা কয়েকটি প্রেমপত্র উদ্ধার করেছে। এরপর থেকে তালাবদ্ধ করে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছে হুরাইরার পরিবার।

তারা জানান, গফুর সাহেবের বাগানবাড়ি এলাকার চট্টগ্রামে কর্মরত এ বনকর্মকর্তার স্ত্রী রুমা খাতুনের বাড়িতে অচেনা লোকদের যাতায়াত নিয়ে প্রতিবাদ করে সাংবাদিক শফিকুল ইসলামের ছেলে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের ছাত্র মেহেদী হাসান। বখাটে প্রকৃতির মেহেদীর এহেন আচরনে রুমা খাতুন ক্ষুব্ধ ছিল। বিষয়টি নিয়ে রুমা এলাকার প্রভাবশালী সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রী মুন্নি বেগমকে অবহিত করে। এরপর থেকে রুমা ও মুন্নি বেগম ক্ষুব্ধ ছিল মেহেদী হাসানের উপর। তবে গত ২০ অক্টোবর স্কুল থেকে ফেরার পথে চাঁদনীকে নিয়ে কটুক্তি করায় মেহেদীর সঙ্গে বিরোধ বাধে। গত শনিবার দুপুরে রুমা খাতুনের বাড়ির পাশে অবস্থানকারি মুন্নি খাতুনের সঙ্গে মেহেদীর কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে মেহেদী মোটর সাইকেল চালিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।

বিকেলে সুলতানপুরের কয়েকজন যুবক এসে মেহেদীর বাড়িতে চড়াও হয়। এ নিয়ে থানায় অভিযোগ দেন মুন্নি খাতুন। সাংবাদিক, ক্ষমতাসীন দলের জেলা পর্যায়ের কয়েকজন নেতার হস্তক্ষেপ স্বত্বেও বিষয়টি মিটিয়ে নেননি মুন্নি খাতুন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত বুঝতে পেরে শনিবার রাতেই মেহেদী হাসানকে বৈকারী তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠান তার বাবা। উত্যক্ত করার অভিযোগে রোববার চাঁদনীকে দিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে একটি অভিযোগ করানো হয়। রোববার স্কুল থেকে ফেরার পথে চাঁদনীকে উত্যক্ত করার কথা উল্লেখ করানো হয়। যদিও মেহেদী ওই সময় ছিলো তার বৈকারী আত্মীয়ের বাড়িতে।

এদিকে সোমবার সকাল ৯টার দিকে আসফিয়া খাতুন চাঁদনীকে নিজের ঘরের মধ্যেই আত্মহত্যা করে। সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তার মা জোহরা খাতুন জানান, রোববার রাতে জামা কাপড় কেনা নিয়ে গণ্ডগোলের কারণে চাঁদনী আত্মহত্যা করতে পারে। যদিও তার দু’ ঘণ্টার মধ্যেই মুন্নি খাতুনের দেখা হওয়ার পর পাল্টে যায় মায়ের বক্তব্য। রোববার সকালে মেহেদী হাসান রান্তায় চাঁদনীকে এসিড মারতে চেয়েছিল বলে জোহরা খাতুন প্রতিবেশীদের জানান।

তবে মুন্নি খাতুনের দায়েরকৃত অভিযোগটি নিয়ে আপোষনামা করার ব্যাপারে সোমবার দুপুরে এক সাংবাদিককে অবহিত করে মেহেদীকে পুরাতন সাতক্ষীরার ফাঁড়িতে নিয়ে আসতে বলেন, উপপরিদর্শক মনির হোসেন। বিকেল ৫টার দিকে ফাঁড়িতে আসার পরপরই মেহেদীকে আটক করেন মনির হোসেন। পরে চাঁদনীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে জোহরা খাতুনের দায়েরকৃত মামলায় মহেদীকে গ্রেফতার দেখিয়ে মঙ্গলবার আদালতে পাঠানো হয়।

সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাঃ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বিষয়টি স্পর্শকাতর। মেহেদী হাসান একজন বখাটে যুবক। তার সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তার কাছে মেয়েটি অভিযোগ জানিয়েছিল কিনা তা জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোস্তফা কামাল বলেন, তিনি মিটিংয়ে আছেন। এ ব্যাপারে পরে কথা বলবেন।

(আরকে/এসপি/অক্টোবর ৩০, ২০১৮)