স্পোর্টস ডেস্ক, ঢাকা : সাকিব আল হাসানকে শাস্তি দেওয়াটা ঠিক হয়নি- দাবিটা শ’ খানেক লোকের মানববন্ধনের পরই ধামাচাপা পড়ে গেছে। এখন পরিস্থিতি বুঝে শাহবাগ ছেড়ে সেই একনিষ্ঠ সাকিব ভক্তদেরও দাবি, শাস্তির মেয়াদটা যেন কমানো হয়।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়ও এ দাবিকারীদের জন্য কোনো সুখবর নেই বিসিবিতে। একাধিক বোর্ড পরিচালক এ-জাতীয় সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, ‘শাস্তি কমানোর প্রশ্নই আসে না!' প্রশ্ন না আসার কারণও আছে। সাকিব আল হাসানকে শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্তটি তো আর হুট করে নেয়নি বিসিবি।

তার শুনানি হয়েছে, যে বোর্ড সভায় সিদ্ধান্তটি হয়েছে সেটিতে যোগ দেওয়ার আগে সাকিবের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ একান্তে কথাও বলেছিলেন বিসিবি সভাপতি। তাই বোর্ড সভায় সাকিব ইস্যু নিয়ে আলোচনায় চূড়ান্ত পর্যায়ে নাজমুল হাসানই পরামর্শ দিয়েছিলেন, 'আপনারা ভেবে সিদ্ধান্ত নেবেন, পরে আবার শাস্তি পরিবর্তনের জন্য অনুরোধ করবেন না।'

সভাপতির পরামর্শ তখন 'অহেতুক' মনে করার অবস্থায় বোর্ড পরিচালকরা! ছয় মাস না, সাকিবকে পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করার দাবিও তখন উড়ছিল বোর্ড সভায়। সাকিবের ঔদ্ধত্যে ত্যক্ত-বিরক্ত বোর্ড সভাপতিও চমকে উঠেছিলেন বলেই ওই পরামর্শটি দিয়েছিলেন, যেন সবাই ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেন। সেই ভাবনা-চিন্তার ফল পাঁচ কিংবা দুই বছরের পরিবর্তে সাকিবের ওপর ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা আরোপ।

আর এ সিদ্ধান্তের পক্ষ নেন ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খানও। নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, বিষয়টি ভোটে তোলার পর প্রথমে কিছুটা ইতস্তত করলেও সাকিবের শাস্তির ইস্যুতে 'হ্যাঁ' ভোটই দিয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক এ অধিনায়ক। যদিও সাকিবের দাবি ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যানের মৌখিক অনুমতি নিয়েই ক্যারিবিয়ান লিগ খেলতে গিয়েছিলেন তিনি। অবশ্য পরবর্তী সময়ে এটি অস্বীকার করেছেন আকরাম খান।

সম্ভবত এ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য তাঁর সামনে একটা পথই খোলা আছে, সাকিবের শাস্তির মেয়াদটা অন্তত কমিয়ে আনা! অবশ্য পরিচালনা পর্ষদের সিংহভাগই সাকিবের শাস্তির মেয়াদ কমানোর বিপক্ষে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরিচালক যেমন বলছিলেন, 'এখন শাস্তি কমিয়ে দেওয়া মানে দলকে আরেকটি বার্তা দেওয়া যে ভুল করলেও অসুবিধা নেই, শাস্তি দিয়ে সেটি আবার কমানো হবে।

এখন যদি কমানোই হবে, তাহলে সেদিন কেন শাস্তি দিয়েছিলাম আমরা? সেদিন কি আমরা ভুল করেছিলাম?' আরেক পরিচালকের ক্ষোভ, 'শুনেছি বোর্ড সভাপতির সঙ্গে সাকিব দেখা করেছে। সেটা সে করতেই পারে। কিন্তু এই দেখা করার মানে যদি হয় সভাপতির কাছ থেকে শাস্তির মেয়াদ কমিয়ে নেওয়ার আশ্বাস আদায় করা, তাহলে আমার ঘোরতর আপত্তি আছে। আগে আমাকে নিশ্চয়তা দিতে হবে, এরপর আমি আপিল করব- এটা তো ধৃষ্টতার পর্যায়ে পড়ে!'

বিসিবি পরিচালকদের দুর্ভাগ্য যে সাকিব আল হাসানের ভাবভঙ্গিটা সেরকমই। ভক্তরা মানববন্ধন করে তাকে বিসিবি 'কয়েদখানা' থেকে মুক্ত করবেন কিংবা নানামুখী চাপে নিষেধাজ্ঞা ভেঙে মাঠে ফিরবেন তিনি। একটা সময় সাকিবের ক্যাম্প থেকে বলা হচ্ছিল, বোর্ড তো শাস্তির চিঠিটাই সাকিবকে দেয়নি। কিন্তু তিন দিন আগে সেটি দেওয়ার পরও তো আপিল করেননি সাকিব।

তিনি গিয়েছেন বোর্ড সভাপতির কাছ থেকে মৌখিক ছাড়ের আশ্বাস নিতে। একজন বোর্ড পরিচালক মনে করছেন, 'ও (সাকিব) আর বদলাল না! আপনি নিশ্চিত থাকুন, শাস্তি কমালে কয়েক মাস পরই দেখবেন ও আবার কিছু একটা করে বসেছে। আপনি ভুল করেছেন, সেটা তো আপনাকে মানতে হবে! ওর মধ্যে সেই চেতনাটা এসেছে কিনা, তা নিয়েই আমার ঘোর সন্দেহ আছে।'

এ সন্দেহটা অবশ্য বহু পুরনো। ২০১১ বিশ্বকাপে গ্যালারির দর্শককে উদ্দেশ করে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করেও ক্ষমা চাননি সাকিব। ব্যাটিং ফেলে গ্যালারির দিকে ব্যাট হাতে তেড়ে যাওয়া, দর্শক পেটানো, টিভি ক্যামেরায় অশালীন ভঙ্গি এবং আরো অনেক কাণ্ডই করেছেন সাকিব।

সেসব বলতে বলতে ৭ জুলাইয়ের বোর্ড সভায় নাকি অনেক পরিচালকই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন! 'বিশ্বাস করবেন না, যাঁরা সচরাচর চুপচাপ থাকেন, সেই তাঁরাও সেদিন সাকিবের বিভিন্ন ঘটনার কথা বলছিলেন', জানিয়েছেন আরেকজন বোর্ড পরিচালক। সেদিনের বোর্ড সভার পর সভাপতির কণ্ঠেও ছিল বোর্ড রুমে ছড়িয়ে পড়া আবেগের রেশ।

তবে সিদ্ধান্তটি আবেগনির্ভর হলে পাঁচ বছরের জন্যও নিষিদ্ধ হতে পারতেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু সেটি হয়েছে ছয় মাসের, কারণ বোর্ড সভাপতি শর্ত দিয়েছিলেন পরে যেন কেউ শাস্তি কমানোর অনুরোধ না করেন। সকালে শাস্তি দিয়ে বিকেলেই তা কমালে বিসিবির শাস্তির বিধানটাই হয়ে পড়বে হাস্যকর!

(ওএস/পি/জুলাই ১৮, ২০১৪)