চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি : শীতের আগমন স্পষ্ট। শীত যেন দরজার কড়া নাড়িয়ে দাড়িয়ে আছে। সকালের রোদের আলোয় ঘাসের ওপর ঝরে পড়া শিশির বিন্দু। গাছে গাছে লতা পাতা আর ঘাসের ওপর ঝরছে শিশির বিন্দু। শিশির ভেঙে গ্রামের চাষি ছুটে যাচ্ছে সবুজ ধানের ক্ষেতে। শীত শুরুর সাথে সাথে খেজুর গাছ প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চুয়াডাঙ্গা জেলার গাছীরা। এবার একটু আগেই শীতের দেখা মিলছে চুয়াডাঙ্গা জেলায়। দিনে মেঘলুপ্ত সূর্যের খরতাপ আর রাতে কুয়াশার সাথে সাথে বইছে হিমেল হাওয়া। ভোর থেকেই ব্যস্ত গাছিরা দা, ঠুঙি, দড়ি নিয়ে ছুটে চলেছেন মাঠে। কদিন পরেই গাছ থেকে গাছিদের প্রক্রিয়াজাত করা খেজুরের রস দিয়ে তৈরী করা হবে চিড়ার মোয়া, গুড় ও পাটালি। শীতের সকালে  গ্রামের গৃহস্থ বাড়িতে খেজুরের রস দিয়ে বানানো হবে মুখরোচক পিঠা, পুলি, পায়েস,ক্ষীর।

জেলার বিভিন্ন গ্রামে লক্ষ করলে দেখা যাবে গাছিরা এখন খেজুর গাছ কাটতে শুরু করেছেন। দামুড়হুদা উপজেলার ভগিরথপুরসহ আশপাশের গ্রামের মেঠো রাস্তার পাশে সারি দিয়ে লাগানো খেজুর গাছে গুড়ি কাটতে ব্যস্ত এখন গ্রামের কৃষকেরা। আঞ্চলিক ভাষায় এটাকে গাছ-তোলা বলা হয়ে থাকে। তোলা/ছোলা গাছে এক সপ্তাহ পরেই আবার চাচ দিয়ে নল লাগানো হয়। এ সময় শীতের সাথে খেঁজুর রসের থাকে এক নিবিড় সম্পর্ক। খেঁজুর গাছ পরখ করে রস সংগ্রহের জন্য প্রস্ততি নেয় তারা। বিশেষ কায়দায় কোমরে রশি বেঁধে খেঁজুর গাছের উপরে উঠে ধারাল কাঁচি দিয়ে বাদামী রংঙের কপালি বের করে। আর কিছুদিন পরই সেখান থেকে খেঁজুরের রস সংগ্রহ করে।

গ্রামের খেজুর রস সংগ্রকারী চাষী মিশন আলী জানান আগাম গুড় ও পাটালি উঠলে লাভও বেশ ভালোই হয়। সেই আশাতেই চলতি বছরও গুড় তৈরির দিকে ঝুঁকছে গাছিরা। তিনি বলেন অনেক বছর থেকেই খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করি আমি। এ রস থেকে তিনি গুড় ও পাটালি তৈরি করে জেলার বিভিন্ন শহর হাট বাজারে বিক্রি করেন। একই গ্রামের কৃষক বিল্লাল বলেন, ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে বিকেল পর্যন্ত রস জাল দিয়ে গুড় তৈরি করা হয়। ৫০ টি গাছ কাটতে একজন শ্রমিককে ২৫০ টাকা দিতে হয়। এসব গাছ থেকে ৩০ ভাড় রস হয়। এক ভাড় গুড়ের ওজন হয় ১৫/ ১৮ কেজি। বাজার ভাল থাকলে একভাড় গুড় বিক্রি হয় ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা পর্যন্ত।

চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নাঈম-আস-সাকিব জানান, আনুমানিক দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার খেজুর গাছ রয়েছে। এর মধ্যে সদরেই খেজুর গাছের সংখ্যা বেশী। চলতি মৌসুৃমে জেলায় ২৫০০ মেট্রিকটন গুড় উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে।

(টিটি/এসপি/নভেম্বর ০২, ২০১৮)