জোটন চন্দ্র ঘোষ, হালুয়াঘাট : ময়মনসিংহ জেলার সীমান্তবর্তী হালুয়াঘাট উপজেলার ভারতের মেঘালয় ঘেঁষা গারো পাহাড়ের পাদদেশ সবুজ-শ্যামল ছায়া দ্বারা পরিবেষ্টিত যার পাশে রয়েছে ভারতের মেঘালয় রাজ্য তারঐ সন্নিকটে ভুবনকূড়া ইউনিয়নের তেলিখালী গ্রামে ৩ নভেম্বার সকালে ঐতিহাসিক তেলিখালী যুদ্ধদিবস পালিত হয়েছে। 

জানা যায়, প্রায় ৪৭ বছর পূর্বে ঐতিহাসিক তেলিখালী প্রান্তর যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়ে উঠেছিল। বাংলার সাহসী দামাল ছেলেরা তৎকালীন সময়ে জীবন কে বাজি রেখে মরণপণ সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে জয় করেছিল ঐতিহাসিক তেলিখালী। সেদিন পতন হয়েছিল পাকহানাদার বাহিনীর শক্তিশালী ঘাঁটি। বিজয়ের মাধ্যমে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয়ের পথ সূচিত হয়েছিল। আর এ অগ্রযাত্রায় বুকের তাঁজা রক্ত দিয়ে আত্মত্যাগ করেছিলো মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্যান্য বাহিনীর গর্বিত সন্তানরা। সেদিন ২ প্লাটুন পাক হানাদার বাহিনী ধ্বংস হয়েছিল।

৭১’র ৩ নভেম্বর তেলিখালী সীমান্ত এলাকায় হানাদার বাহিনীর শক্তিশালী দুর্গ সেদিন ভয়ংকর মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছিল। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরা সাব-সেক্টরের বিপরীতে তেলিখালীর তদানীন্তন ই পি আর ক্যাম্পে পাক বাহিনীর ৩৩ পাঞ্জাব রেজিঃমেন্টের ২ প্লাটুন সেনা, ভারী অস্ত্র ও ১ প্লাটুন রাজাকার-আলবদর বাহিনী মোতায়েন করে শক্তিশালী ঘাটি গড়েছিল। মুক্তিবাহিনীর অভিযানের সামনে এটিই ছিল একমাত্র বাঁধা। বাধা ডিঙ্গিয়ে সিদ্ধান্ত হয় পাক হানাদার বাহিনীর তেলিখালী ক্যাম্প দখল করা। আর সেই ঐতিহাসিক তেলিখালী রণাঙ্গনে শহীদ হয়েছিল ৭ বীরমুক্তিযোদ্ধা।

তারা হলেন সরিষাবাড়ির শওকত আলী, হালুয়াঘাটের মোঃ আক্তার হোসেন, ফুলপুরের মোঃ হযরত আলী, ময়মনসিংহ সদরের মোঃ আলাউদ্দিন, মোঃ শাহজাহান, শ্রী রঞ্জিত গুপ্ত, নোয়াখালীর সিপাহী মোঃ ওয়াজি উল্লাাহসহ নাম না জানা আরো অনেকেই। তাই প্রতি বৎসরের ন্যয় দিনটিকে স্মরণীয় রাখার জন্যে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করেছে উপজেলা প্রশাসন।

আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে ঐতিহাসিক তেলিখালী যুদ্ধদিবস উদযাপন করা হয়। ঐতিহাসিক তেলিখালী যুদ্ধে বীর শহীদদের কবর জিয়ারত, দোয়া মাহফিল ও কাঙ্গালীভোজ সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।

উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকির হোসেন’র সভাপতিত্বে উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান উদ্বোধক ছিলেন ময়মনসিংহ-১ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য জুয়েল আরেং। প্রধান অতিথি ছিলেন ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক ডা. সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, পৌর মেয়র খায়রুল আলম ভূঞা, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কবিরুল ইসলাম বেগ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ আব্দুর রশিদ, সহকারী কমিশনার ভূমি লুৎফুন্নাহার, হালুয়াঘাট সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আলমগীর পিপিএম,বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক, ভুবনকুড়া ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এম এ সুরুজ মিয়া প্রমুখ।

অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহ। এছাড়াও আরো উপস্থিত ছিলেন, শহীদ পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ, সাংবাদিক, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, উপজেলা আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ সহ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন ।

(জেসিজি/এসপি/নভেম্বর ০৩, ২০১৮)