তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক : ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (সংক্ষেপে ডব্লিউডব্লিউডব্লিউ) উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে যিনি গোড়াপত্তন করেছিলেন ভার্চুয়াল দুনিয়ার, সেই টিম বার্নারস লি এখন ইন্টারনেট নিয়ে হতাশ। তার মতে, ঘৃণা ছড়াতে এখনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া ফেসবুক ও গুগলের মতো সিলিকন ভ্যালির টেক জায়ান্টরা এত বেশি প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে যে, তাদের বিচ্ছিন্ন হওয়া প্রয়োজনীয় হয়ে উঠতে পারে। অন্যথায় প্রতিযোগী বা মানুষের রুচির পরিবর্তন তাদের গুরুত্ব কমিয়ে  দেবে। খবর রয়টার্স।

লন্ডনে জন্ম নেয়া কম্পিউটার বিজ্ঞানী টিম বার্নারস লি ১৯৮৯ সালে ওয়েব উদ্ভাবন করেন। এরপর থেকে শুরু হওয়া ডিজিটাল বিপ্লব যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একগুচ্ছ প্রযুক্তি জায়ান্টের জন্ম দিয়েছে, যাদের সম্মিলিত আর্থিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব অনেক স্বাধীন রাষ্ট্রের চেয়ে বেশি। এই যেমন অ্যাপল, মাইক্রোসফট, অ্যামাজন, গুগল ও ফেসবুকের সম্মিলিত বাজার মূলধন ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি ডলার, যা গত বছর জার্মানির মোট দেশজ উৎপাদনের চেয়ে বেশি।

ওয়েবের জনক বলেন, একটি প্রতিষ্ঠান এমনভাবে রাজত্ব করছে যে, অন্য কোনো বিকল্প উঠে আসছে না বা এ ব্যবস্থা ভেঙে দিচ্ছে না। এ ধরনের কেন্দ্রীভূতকরণের সমস্যা আছে। তিনি সাবধান করেছেন যে, উদ্ভাবন ও রুচির পরিবর্তনের গতি কিছু বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানকে টেনে নামিয়ে দিতে পারে। শুধু ক্ষুদ্র প্রতিযোগীরা তাদের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে নাকি বাজারের পরিবর্তন, মানুষের আগ্রহ অন্য কোথাও পরিবর্তিত হওয়ায় তারা বাজার হারাচ্ছে; সেটা আমাদের আগেই দেখা উচিত।

টিম বার্নারস লি বর্তমানে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেয়া ও ঘৃণা ছড়াতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ঘটনা বাড়ায় ইন্টারনেট নিয়ে তিনি হতাশ। বিশেষ করে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ক্যামব্রিজ অ্যানালাইটিকার মাধ্যমে ৮ কোটি ৭০ লাখ ফেসবুক ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য অন্যের হাতে চলে যাওয়ায় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তার মতে, এ ঘটনা অনেকগুলোর ডগামাত্র।

লি বলেন, ওয়েবের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আমি হতাশ। ব্যক্তি ক্ষমতায়নের অনুভূতি আমরা হারিয়ে ফেলেছি এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমার মনে হয় আশায়ও ফাটল ধরেছে।

তিনি বলেন, টুইটারে এক বিন্দু ভালোবাসা দিলে মনে হবে সাড়া দেয়ার মানুষই নেই। আর এক বিন্দু ঘৃণা দিলে আপনার মনে হবে এটা আরো জোরদারভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। আপনি জেনে অবাক হবেন যে এটা ঘটছে, কারণ মাধ্যম হিসেবে টুইটার এমনভাবেই তৈরি করা হয়েছে।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ০৩, ২০১৮)