মতিউর রহমান মুন্না, নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) : ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ করা হয়েছে হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে। দিন দিন বাড়ছে রোগীর চাপ, বেড়েছে চিকিৎসা সেবার মানও। কিন্তু রোগীর তুলনায় চিকিৎসক ও সেবাদানকারী কর্মীর সংখ্যা আজও বাড়েনি। বর্তমানে জনগুরুত্বপূর্ন এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মাত্র ৫ জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা।

১৩টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে হবিগঞ্জ জেলার জনসংখ্যার দিক দিয়ে বৃহত্তম নবীগঞ্জ উপজেলা। এ উপজেলার লোক সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ লাখ। এ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দাও এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন।

হাসপাতাল সুত্রে জানা যায়, প্রতিদিন বর্হিঃ বিভাগে গড়ে ৩০০ থেকে ৩৫০ জন রোগী সেবা নেন। এ ছাড়াও অন্তঃ বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৪৫ থেকে ৫০ জন রোগী ভর্তির পাশাপাশি জরুরী বিভাগে রোজ ২০০ থেকে ২৫০জন রোগী সেবা পেয়ে থাকেন।

হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা সুরুজ আলী বলেন, আগে কোন সমস্যা হলেও হবিগঞ্জ বা সিলেট যেতে হতো। কিন্তু এখন নবীগঞ্জ হাসাপাতালেই ভালো চিকিৎসা হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. আব্দুস সামাদ বলেন, সম্প্রতি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ করা হয়েছে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে। চিকিৎসা সেবার মান আগের তুলনায় ভালো হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। কিন্তু এতো রোগীর তুলনায় চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় সেবাদানকারী কর্মীর সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছেনা। দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে চিকিৎসক ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারির সংকট। বর্তমানে ২২ জন চিকিৎসকের স্থলে ৫ জন চিকিৎসক চিকিৎসা সেবা প্রদান করছেন। এ সংকট দূর হলে চিকিৎসা সেবার মান আরো বাড়বে বলে মনে করেন এই চিকিৎসক।

শনিবার সকালে জরুরী বিভাগে দায়ীত্বে থাকা উপ-সহঃ ডাঃ ইদ্রিছ আলম জানান, প্রয়োজনীয় জনবল সংকট থাকা সত্তে¡ও ২৪ ঘন্টা রোগিদের শতভাগ চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।

সিনিয়র স্টাফ নার্স চন্দ্রনা সুত্র ধর জানান, বিগত কয়েক বৎসর যাবৎ নরম্যাল ডেলিভারীতে হবিগঞ্জ জেলার মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে আসছে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। প্রতি মাসেই শতাধিকেরও বেশি গর্ভবতী নারীদের নরম্যাল ডেলিভারী করা হচ্ছে। গত মাসেও ১১২ টি ডেলিভারী সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান এই নার্স।

আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ ইফতেখার হোসেন চৌধুরী জানান, রোগী ও হাসপাতালের নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের নিজস্ব অর্থায়নে স্থাপন করা হয়েছে সিসি ক্যামেরা, হাসপাতালের সৌন্দর্য্য বর্দ্ধনে সকল কর্মকর্তা কর্মচারীর অর্থায়নে নির্মান করা হয়েছে ফুলের বাগান, রোগীকে অডিও ভিজ্যুয়ালের মাধ্যমে প্রতিদিন সকাল ও রাতে দেওয়া হচ্ছে স্বাস্থ্য শিক্ষা, সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে হাসপাতালে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতায়ন ব্যবস্থ্যা রয়েছে এছাড়াও রোগীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার স্বার্থে রয়েছে বিশুদ্ধ সুপেয় পানির সুব্যবস্থা। বিশেষ করে হাসপাতালের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার স্বার্থে চিকিৎসকরা নিজেরাই ৫জন ভলান্টিয়ার নিয়োগ করেছেন। নবজাতকের নিবিড় পর্যবেক্ষন কেন্দ্র চালুকরন করার পক্রিয়া চলছে। অতিশীঘ্রই এর কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা জানান, ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ করার পর থেকেই রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ৫০ শয্যার জন্য যে পরিমান জনবল প্রয়োজন তা এখনো আমাদের কম রয়েছে। নবীগঞ্জবাসীকে আরো বেশি সেবা দিতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি চিকিৎসক ও স্টাফের সংকটের সমাধানের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

(এমআরএম/এসপি/নভেম্বর ০৩, ২০১৮)