স্টাফ রিপোর্টার : অতিরিক্ত দৈহিক উচ্চতায় আক্রান্ত রোগী মো. জিন্নাত আলীর মস্তিষ্কের টিউমার বড় আকার ধারণ করেছে। এ জন্য অপারেশন লাগবে। জিন্নাত চাইলে আগামী সপ্তাহেই তার অপারেশন করা হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। রবিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ডা. মিল্টন হলে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া।

তিনি বলেন, ‘২২ বছরের জিন্নাত প্রায় ৪ বছর আগে প্রফেসর ফরিদ উদ্দিনের অধীনে এন্ডোক্রাইনোলজী বিভাগে ভর্তি হন। তখন তার মস্তিষ্কে এক ধরনের টিউমার পাওয়া যায়। ওইসময় তাকে অপারেশনের পরামর্শ দেয়া হয়, কিন্তু তিনি অপারেশনে অসম্মতি জানিয়ে হাসপাতাল থেকে চলে যান। গত ২২ অক্টোবর জিন্নাত আবার বিএসএমএমইউতে ভর্তি হয়। সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর তার ডায়াবেটিস, ডিসলিপিডিমিয়া, অস্টিওআথাইটিস এভিং সেলুলেটিস অব রাইট লেগ ধরা পড়ে ‘

তিনি আরও বলেন, ‘তার মূল সমস্যা হলো অ্যাক্রোজাইজেন্টিজম যার কারণ মস্তিষ্কে পিটুইটারি টিউমার। এ পর্যন্ত আমাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা বলছে তার অপারেশন লাগবে। আজ পর্যন্ত তিনি অপারেশনে রাজি হননি। আমরা তাকে কাউন্সিলিং করছি।’

এ ধরনের অপারেশন কতটা নিরাপদ? সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, ‘১৯৭৮ সালে আমি যখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিউরোসার্জারি বিভাগে কাজ করি তখন থেকেই এই টিউমারের অপারেশন হয়। কিন্তু তখন অতটা সাকসেস ছিল না। এখন এই অপারেশন আগের চেয়ে অনেক নিরাপদ। তবে তার অপারেশনের সময় কিছু জেনারেল ফ্যাক্টর খেয়াল রাখতে হবে, যেমন: রক্তক্ষরণ, ইনফেকশন।’

তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এই অপারেশনের পর একজন রোগীর শরীরে পানি ধরে রাখার হরমোন কাজ করে না। ফলে প্রচুর প্রসাব হয়। দিনে ১৮ থেকে ২০ লিটার প্রসাব হতে পারে। এটাই আমাদের চিন্তা।’

অপারেশনের পর কি পুরোপুরি সুস্থ হবে জিন্নাত? এমন প্রশ্নের উত্তরে উপাচার্য বলেন, ‘অপারেশনের পর আবার টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেক্ষেত্রে তাকে রেডিওথেরাপি দেয়া হবে।’

এ রোগের চিকিৎসা ব্যয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই রোগে টিউমার অপারেশনে ওটি চার্জ ১২ হাজার, ৩০ দিন হাসপাতালে থাকার খরচ (কেবিনে ১০২৫ টাকা দিন), অপারেশনের সময় প্রায় ১০ হাজার টাকার ওষুধপত্র।’

প্রি-অপারেটিভ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসায় জিন্নাতের ২০ হাজার খরচ হয়েছে। এ ছাড়া তার চিকিৎসার সম্পূর্ণ দায়ভার স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম নিয়েছেন বলে তিনি জানান।

বিএসএমএমইউর এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘তিনি আমাদের বিভাগে ভর্তি থাকলেও তার প্রধান চিকিৎসা সার্জারি। তাই তাকে আমরা নিউরোসার্জারি বিভাগে স্থানান্তর করব।’

এ বিষয়ে নিউরোসার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ টি এম মোশাররফ হোসেন বলেন, এই রোগীর মূল চিকিৎসা অপারেশনের মাধ্যমে টিউমার রিমুভ করা। তার পূর্ণ চিকিৎসা ও অপারেশন দেশেই সম্ভব। আমরা সব বিভাগ একসঙ্গে হয়ে তার চিকিৎসা করছি।

জিন্নাত আলী গত ২২ অক্টোবর থেকে বিএসএমএমইউর ৪০৪ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন। তার বাড়ি কক্সবাজারের রামু উপজেলার গর্জনিয়া বড়বিল গ্রামে। বৃদ্ধ বাবা আমীর হামজার এক মেয়ে, তিন ছেলের মধ্যে জিন্নাত তৃতীয়।

জিন্নাতের বয়স যখন ১২ বছর, সেসময় থেকেই দ্রুত উচ্চতা বাড়তে থাকে। প্রতি বছর দুই থেকে তিন ইঞ্চি করে আকৃতি বাড়তে থাকে। এভাবে ১০ বছরের মধ্যে প্রায় চার ফুট উচ্চতা বেড়ে জিন্নাত এখন ৮ ফুট ৬ ইঞ্চির এক মানব।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ০৪, ২০১৮)