বিনোদন ডেস্ক : সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, প্রেম-বিরহ, আরাধনা- কোন অনুভূতির জন্য গান করেননি তিনি, সেই প্রশ্ন খুঁজে পাওয়া মুশকিল। প্রেমে ব্যর্থ হৃদয়ের জন্য তিনি গেয়েছেন ‘কারে দেখাবো মনের দুঃখ গো’। আবার ভালোবাসায় মাতাল মনের জন্যও গান নিয়ে হাজির তিনি। গেয়েছেন ‘তুমি আমার জীবন, আমি তোমার জীবন’সহ অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গান।

বিশেষ করে বাংলা চলচ্চিত্রের গানে তিনি সমুদ্রের মতোই। কয়েক দশক ধরে সেই সমুদ্রে সাঁতার কেটে চলেছেন শ্রোতারা। তার কণ্ঠ মধু ছড়ায়, তার শত শত গান মানুষের মুখে মুখে বাজে। তিনি কিংবদন্তি এন্ড্রু কিশোর।

আজ ৪ নভেম্বর, রবিবার তার জন্মদিন। জীবনের বিশেষ এই দিনটিতে তিনি সিক্ত হচ্ছেন ভক্ত-অনুরাগীদের ভালোবাসায়। পরিবার, প্রিয়জন, বন্ধু-স্বজনদের শুভেচ্ছায় তিনি ভেসে যাচ্ছেন আনন্দে।

কী করছেন এন্ড্রু কিশোর এবারের জন্মদিনে? জানতে চাইলে আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এ শিল্পী বলেন, ‘জন্মদিনে কখনই তেমন বিশেষ কিছু করি না। এবারও সাদামাটাভাবেই কাটবে দিনটি। জন্মদিন জীবনের স্বাভাবিক একটি বিষয়। এ নিয়ে আমার কোনো বাড়াবাড়ি নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমাদের সবার প্রিয় আইয়ুব বাচ্চুও হঠাৎ করেই সবাইকে কাঁদিয়ে পরপারে চলে গেছেন। তার শোক কাটাতে পারছি না। এমন সময় কোনো আনন্দ ছুঁতে পারছে না মনকে। সে আমার বন্ধু ছিলো। অনেক সময় তার সঙ্গে কেটেছে। এত স্মৃতির মানুষ, কাছের মানুষ চলে গেলে যে শূন্যতা আসে তা হুট করে পূরণ হয় না। আমি সবার কাছে বাচ্চুর জন্য দোয়া চাই, আমার জন্যও দোয়া চাই।’

তিনি জানান, পরিবার-বন্ধুদের কিছু আবদার থাকে। জন্মদিনের কিছু আয়োজন হয়। সেখানে অংশ নেন তিনি। তবে এবারে তার শাশুড়ি অসুস্থ। তাই তেমন কিছুই করা হচ্ছে না।

বর্তমানে প্লেব্যাক ও স্টেজ শো নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সম্প্রতি মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানের কথা ও ফরিদ আহমেদের সুর-সঙ্গীতে ‘অধিকার’ ছবির একটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি।

পাশাপাশি আলম খানের সুর-সংগীতে গেয়েছেন প্রয়াত সব্যসাচী লেখক ও কবি সৈয়দ শামসুল হকের লেখা শেষ তিনটি গান। নতুন গান রেকর্ডিং ছাড়াও আগামী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে কলকাতার নজরুল মঞ্চে সংগীত পরিবেশন করবেন তিনি।

প্রসঙ্গত, এন্ড্রু কিশোর আব্দুল আজিজ বাচ্চুর অধীনে প্রাথমিকভাবে সংগীত পাঠ গ্রহণ শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর থেকেই তিনি নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, আধুনিক, লোক ও দেশাত্মবোধক গান রাজশাহী বেতারে গাইতেন।

এন্ড্রু কিশোরের চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৭ সালে আলম খান সুরারোপিত মেইল ট্রেন চলচ্চিত্রের ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানের মধ্য দিয়ে। তার রেকর্ডকৃত দ্বিতীয় গান বাদল রহমান পরিচালিত এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী চলচ্চিত্রের ‘ধুম ধারাক্কা’।

তবে এ জে মিন্টু পরিচালিত ১৯৭৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত প্রতীজ্ঞা চলচ্চিত্রের ‘এক চোর যায় চলে’ গানে প্রথম দর্শক তার গান শুনে এবং গানটি জনপ্রিয়তা লাভ করে। তিনি চলচ্চিত্রের জন্য ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘ভালবেসে গেলে শুধু’, ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘আমার সারা দেহ খেও গো মাটি’, ‘বেদের মেয়ে জোছনা’, ‘ভালো আছি ভালো থেকো’, ‘যদি বউ সাজো গো’, ‘আমার বুকের মধ্যেখানে’, ‘ভেঙ্গেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা’, ‘সব সখীরে পার করিতে’সহ বহু কালজয়ী গানে কণ্ঠ দিয়েছেন।

ব্যাক্তিজীবনে এন্ড্রু কিশোরের দুই সন্তানের জনক। প্রথম সন্তানের নাম সঙ্জা র দ্বিতীয় জনের নাম সপ্তক।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ০৪, ২০১৮)