জোটন চন্দ্র ঘোষ, হালুয়াঘাট : হালুয়াঘাটে শীতের শুরতেই ভাপাপিঠা তৈরির ধুম পড়েছে। সকালের কুয়াশা কিংবা সন্ধ্যার হিমেল বাতাসে কদর বেড়েছে ভাপা পিঠার। গরম আর সুগন্ধি ধোঁয়ায় মন আনচান করে ওঠে সবার। পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকাতেই শীতের আগমনি বার্তায় ‘শীতের ভাপা পিঠা’ বিক্রির ধুম পড়েছে। 

শীত এলেই এক শ্রেণীর মৌসুমী শীতের পিঠা ব্যবসায়ীরা সকাল-বিকাল এবং গভীর রাত পর্যন্ত এ ব্যবসায় ব্যস্ত সময় কাটান। উপজেলার পৌর শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে রাস্তার মোড়ে সবখানেই চলছে ঐতিহ্যবাহী ভাপা পিঠা। এই পিঠার স্বাদে ক্রেতারা মনমুগ্ধ শীতের সময় এখানকার নিম্নআয়ের অনেক মানুষের উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন ভাপা পিঠার ব্যবসা। কুয়াশায়ঢাকা সকালে গরম গরম ভাপাপিঠার মজাই আলাদা।

একদিকে ভাপাপিঠার স্বাদ অন্যদিকে চুলার আগুন আর জলীয়বাষ্পের উত্তাপ যেনো চাঙ্গা করে দেয় দেহ মন। পিঠা প্রেমিক মানুষ শীতের পিঠার স্বাদ পেতে ফুটপাতের পিঠার দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন। অনেকেই পিঠার দোকানের চুলার পাশে বসেই গরম পিঠা খাওয়াকে রেওয়াজে পরিণত করেছেন। অনেকে পরিবারের চাহিদা মেটাতে পিঠা ক্রয় করে বাসায় নিয়ে যাচ্ছেন।

এ ছাড়া সন্ধ্যার পর বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, অফিস, দোকান, ক্লাব, আড্ডায়ও পিঠার আয়োজন লক্ষ্য করা যায়। শীতকালীন এ পিঠায় শ্রমজীবী, রিক্সা চালাক, ড্রাইভার, শ্রমিকসহ অভিজাত পরিবারের লোকজনের কাছে অত্যন্ত প্রিয় খাবার শীতের এই পিঠা।

মৌসুমী ব্যবসায়ীদের বেকারত্ব দুরীকরণ ও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি লালন করেছেন দেশীয় এ সংস্কৃতি। পাশ্চাত্যের আধুনিকতায় গা- ভাসিয়ে শহরের লোকজন ফিজা, কেক, মোগলাইসহ বিভিন্ন তৈলাক্ত ও ক্ষতিকর খাবারের বদলে দেশের চিরচেনা চালের গুঁড়া, আটা, ময়দা, নারকেল ও গুড়ের তৈরী পিঠা ব্যবসা এখন জমজমাট। চালের গুঁড়ার সাথে আটা বা ময়দা মিশিয়ে তৈরী করা হচ্ছে ভাঁপা পিঠার মত দেশীয় জাতের পিঠা। ছোট-ছোট আটটি চুলা দিয়ে কয়েল লাখড়ী পুড়িয়ে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পিঠা তৈরী ও বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা।

হালুয়াঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর সন্মুখে,জয়িতা মহিলা মার্কেট চত্ত্বরে, পাঠাগার মোড়ে, গরু বাজার মোড়ে, মধ্য বাজার, উত্তর বাজারসহ বিভিন্ন ভাপা পিঠার দোকানে সকাল-সন্ধ্যা হলেই ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লেগেই থাকে। পরিবেশনের ক্ষেত্রে বিলম্ব হলে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মান-অভিমান ও বাক-বিতন্ডা হলেও পিঠা সংগ্রহে পিছপা হচ্ছেন না ক্রেতারা। লাইন ধরে পিঠা ক্রয় করছেন ক্রেতারা।

সাহাপাড়া গ্রামের পিঠা ব্যবসায়ী হাবীবুর রহমান হাবীব জানান, দীর্ঘ ১০ বছর ধরে এ ব্যবসা চালাচ্ছেন তিনি। গরমে তিনি বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করলেও শীত মৌসুমে তিনি ভাপা পিঠা ও সিদ্ধডিম বিক্রি করে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে সূখে শান্তিতে দিনাতিপাত করছেন। তার হাতের তৈরি পিঠা ক্রেতারাও বেশ পছন্দ ও আগ্রহ করে ক্রয় করছেন। বন্ধু-বান্ধবসহ অনেকেই মিলেমিশে তার দোকানে ভিড় করছেন। তার হাতের পিঠার রয়েছে বেশ সুনাম। প্রতি পিঠার মূল্য নিচ্ছেন পাঁচ টাকা ও দশ টাকা করে। প্রত্যকদিন প্রায় ২ হাজার টাকার পিঠা বিক্রি করে লভ্যাংশ থেকেই স্বাচ্ছন্দ্যে চলছে তার সংসার।

(জেসিজি/এসপি/নভেম্বর ০৪, ২০১৮)