কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনে দল থেকে প্রার্থী চান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা।

এবার এ আসনে জাসদ সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে মনোনয়ন দেয়া হলে মানবে না দলটির নেতা-কর্মীরা।

এমনকি ইনু মনোনয়ন পেলে দুই উপজেলার সব ইউনিটের নেতারা গণপদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আর এমন ঘোষণা আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ট মিত্র মহাজোটের শরীক জাসদের নেতা-কর্মিদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ নিয়ে দলটির নেতা-কর্মিরা মুখোমুখি অবস্থানে আছেন।

এদিকে ২৮ অক্টোবর কুষ্টিয়ার মিরপুরে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ও জাসদকে বর্জনের দাবীতে মিরপুর ও ভেড়ামারা উপজেলা আওয়ামীলীগের যৌথসভা করেছে। সেখানে দুই উপজেলার আওয়ামী, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মিরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় মিরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হালিমের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, মিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন, ভেড়ামারা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব আক্তারুজ্জামান মিঠু, সহ-সভাপতি আবুল হোসেন, সাধারন সম্পাদক ও পৌর মেয়র আলহাজ্ব শামিমুল ইসলাম ছানা, জেলা আওয়ামীলীগের অন্যতম নেতা এ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম রানা, মিরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ আনোয়ারুজ্জামান বিশ্বাস, রবিউল হক রবি, হাবিবুর রহমান, বিশ্বজিৎ বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল আমীন বিশ্বাস, জেলা যুবলীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম প্রমুখ।

ভেড়ামারা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক নজরুল ইসলাম নজু বলেন, “গণবাহিনীর নেতা, কুখ্যাত সন্ত্রাসী জাসদের নেতা হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই। তাকে হারিয়ে এই ভেড়ামারা-মিরপুরে আওয়ামীলীগের সঠিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের এ লড়াই।” আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুল ইসলাম রানা বলেন, “যে নৌকায় ভোট দিলে ইনু এমপি হবে আমরা সেই নৌকায় ভোট দিবো না। আমরা চাই জাসদের ইনু না আওয়ামীলীগের এমপি।”

জেলা যুবলীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম বলেন, “মিরপুর-ভেড়ামারায় ইনু সাহেব আজকে মাঠে-ঘাটে-গ্রাম-পাড়া ও মহল¬ায় আওয়ামী লীগকে নিঃশেষ করে তার জাসদ কায়েম করার পাঁয়তারা করছেন। যে নির্যাতন চালাচ্ছে তার প্রতিকার দরকার।”

ভেড়ামারা পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি শামিমুল ইসলাম ছানা বলেন, “আজকে হাসানুল হক ইনুর গুন্ডা বাহিনীর বিরুদ্ধে মিরপুর-ভেড়ামারার আওয়ামীলীগ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।”

ভেড়ামারা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান মিঠু বলেন, আমরা জাসদ নয়, আওয়ামীলীগের এমপি চাই। প্রয়োজনে আমরা আওয়ামীলীগ থেকে একযোগে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে জাসদের পরাজয় নিশ্চিত করবো।”

মিরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক কামারুল আরেফিন বলেন, “২০০৮ সালে ইনু সাহেব নৌকায় নির্বাচন করে এমপি হয়েছেন। জীবনে উনি স্বপ্নে দেখেননি, ভাবেনও নি, ছেঁড়া কাথায় শুয়ে কোটিপতি হয়েছেন উনি। কারন ১ লাখ ৭০ হাজার ভোট পেয়েছেন তা উনি কোনদিন ভাবেনও নি। আর ২০১৪ সালের নির্বাচনে আমরা ভিক্ষা দিয়েছি। আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দরা দয়া করেছে। এবার আমরা দেখাবো, আসতে হবে মাঠে, আমরা লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। আমরা নৌকার বিরুদ্ধে নয়, আপনার মতো নৌকার মাঝির বিরুদ্ধে।”

এদিকে যৌথসভা ও জাসদকে নিয়ে নানা মন্তব্য করায় আওয়ামী লীগ নেতাদের ওপর চরম ক্ষুব্ধ হয়েছে দলটির নেতারা। এ নিয়ে দলীয় ফোরামে সভা করে প্রতিবাদ জানানো হবে বলে দলটির একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

অন্যদিকে ৩১ অক্টোবর মিরপুরে জাসদের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনায় উপজেলা জাসদের সভাপতি মহাম্মদ শরীফের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জাসদ কেন্দ্রীয় নেতা মহাম্মদ আব্দুল্লাহ।

এসময় তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্য বলেন, “মিরপুর-ভেড়ামারায় জাসদের এমপি রয়েছে তাই শুধু মিরপুর ভেড়ামারায় জাসদ রয়েছে এ কথা ঠিক নয়। রংপুর, বগুড়া, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জসহ সারা দেশে জাসদ রয়েছে। জাসদ সাধারন মানুষের দল, শ্রমিকের দল এ জাসদকে হারানোর ক্ষমতা কোন জোয়ার্দ্দারের নেই, কোন মেয়রের নেই, কোন চাঁদাবাজের নেই।”

তিনি স্থানীয় আওয়ামীলীগকে উদ্দ্যোশ্য করে বলেন, “আপনি এক জাইগায় আমাদের হারাবেন? এক আসনে হারালে আমরা আপনাদের ৪০ জাইগায় হারিয়ে দেবো।

মিরপুর উপজেলা জাসদের একাধিক নেতা অভিযোগ করে বলেন,‘ ২০০৮ সালের নির্বাচনে ইনু’র বিজয় ঠেকাতে অনেক আওয়ামী লীগ নেতা মাঠে ছিলেন। এবারো তারা নানা অভিযোগ সামনে এনে হাসানুল হক ইনুর মনোনয়নের বিরোধিতা করছে। যারা বিরোধিতা করছে এদের বিরুদ্ধেই মানুষের নানা অভিযোগ। এসব গডফাদাররা নিজেদের অপরাধ আড়াল করতে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে।’

তবে দুই দলের অনেক নেতা-কর্মি মনে করেন,‘আওয়ামী লীগ ও জাসদের মধ্যে দুরত্ব বাড়ায় ফায়দা লুটছে বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মিরা। এ দুই উপজেলায় দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে জামায়াত ও বিএনপির নেতা-কর্মিরা। জামায়াত ও বিএনপির শীর্ষ নেতাদের অনেকের সাথেই আওয়ামী লীগ নেতাদের ওঠাবসা এমনকি আত্মীয়তা রয়েছে। আবার গত কয়েক বছরে বিএনপির অনেক নেতা-কর্মি জাসদে যোগ দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মিদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করছে এমন অভিযোগও রয়েছে। এসব কারনে নির্বাচনের আগে এসব দ্বন্দ্ব মিটিয়ে না ফেললে বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে বলে মনে করেন অনেকে।

মিরপুর উপজেলা জাসদের অন্যতম নেতা কারশেদ আলম বলেন,‘ ১৪ দলীয় জোটের ঐক্য নষ্ট করার জন্য কতিপয় মানুষ মাঠে নেমে জনগনকে বিভ্রান্ত করছে। জাসদ জনগনের দল। ২০০৮ সালের পর কেন্দ্রীয় সভাপতি হাসানুল হক ইনু দুই উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। যার সুবিধাভোগী ছিল আওয়ামী লীগ নেতারা। এখনো হাসানুল হক ইনু সবাইকে নিয়ে রাজনীতি করছেন। আওয়ামী লীগের কিছু নেতা জামায়াত-বিএনপিকে সাথে নিয়ে রাজনীতি করছে। তাদের সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে। আর জাসদকে ঘায়েল করার চেষ্টা করছে। এসব যারা করছে তারা শেখ হাসিনার উন্নয়নকে ব্যাহত করতে চাই।’

মিরপুর উপজেলা জাসদের সাধারন সম্পাদক আহমদ আলী বলেন, আওয়ামী লীগ নেতারা সভা করে যেসব অভিযোগ করেছে তার কোন ভিত্তি নেই। হাসানুল হক ইনু দুই উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। সাধারন মানুষের তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়। তার জনপ্রিয়তার কারনে অনেকেই আবোল তাবোল বকছেন। বিষয়টি নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে পরবর্তি সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

(কেকে/এসপি/নভেম্বর ০৭, ২০১৮)