মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : মাইনষের ধারে চাইয়া চিইন্না খাই। শ্যাষ যে কবে চুলা জ্বালাইছি হেইয়া মনে নাই। মাইয়া-পোলা থাহে দূরে। এ্যাহন থাহার মধ্যে আছে হুদা (শুধু) ঘরডাই। হুনছি ঘরডাও নাকি লইয়া যাইবে। বিদ্যুত কেন্দ্র বানাইবে। হ্যালে মুই এই বুড়া বয়সে কই যামু। কেডা আমারে দ্যাখবে এ কথা বলেই কেঁদে ফেলে পাঁচজুনিয়া গ্রামের সত্তোরোর্ধ বৃদ্ধা সোনাবানু। 

বৃহস্পতিবার দুপুরে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ধানখালী ইউনিয়নের পাঁচজুনিয়া, ছৈলাবুনিয়া, নিশানবাড়িয়া ও চম্পাপুর ইউনিয়নের দেবপুর গ্রামের এ বৃদ্ধার মতো হাজারো নারী-পুরুষ ও শিশুরা মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে তিন ফষলী জমি রক্ষার দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধনে অংশ নেয়। ধানখালী ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন সড়ক ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তায় শুইয়ে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের পথ রোধ করে পৈত্রিক ভিটা ও বেঁচে থাকার শেষ সম্বল রক্ষার দাবি জানায়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় গত ১৮ অক্টোবর পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক বরাবরে ধানখালী ও চম্পাপুর ইউনিয়নের চার গ্রামের মানুষ তিন ফষলী জমি রক্ষার দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করেন। তারা দাবি করেন সেনাকল্যান সংস্থা ও আশুগঞ্জ কোম্পানী প্রায় এক হাজার একর জমি অধিগ্রহনের জন্য গ্রামবাসীদের তিন ও ছয় ধারা নোটিশ প্রদান করেছে। বৃহস্পতিবার পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মতিউল ইসলাম চেীধুরী সরেজমিনে তথ্য যাচাইয়ের জন্য ধানখালী ইউনিয়নে আসলে হাজার হাজার নারী-পুরুষ ও স্কুল-কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রীরা এ জমি অধিগ্রহন বন্ধের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।

পরে তিন ফষলী জমি রক্ষার দাবিতে অন্দোলনরত গ্রামবাসীদের সাথে দুপুরে ধানখালী ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তানভীর রহমানের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) মামুনুর রশিদ, কলাপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান আঃ মোতালেব তালুকদার, ধানখালী ইউপি চেয়ারম্যান রিয়াজ তালুকদার,চম্পাপুর ইউপি চেয়ারম্যান রিন্টু তালুকদার, শিক্ষানুরাগী আনসার উদ্দিন মোল্লা, সমাজকর্মী মো. আতাউর রহমান মিলন মিয়া, গ্রামবাসী মো. মোস্তফা মেহেদী, ফরিদ তালুকদার, আফজাল হোসেন ও আঃ মন্নান।

সভায় মো. আতাউর রহমান মিলন মিয়া বলেন, জমি অধিগ্রহনের কথা শুনে বেঁচে থাকার শেষ সম্বল হারানোর শঙ্কায় ইতিমধ্যে বহু মানুষ ষ্ট্রোক করে অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে।

আনসার উদ্দিন মোল্লা বলেন, ধানখালীতে দুটি বিদ্যুত কেন্দ্র হয়েছে। এখানে আর কত্ োবিদ্যুত কেন্দ্র হবে। বিভিন্ন চরে হাজার হাজার একর জমি অনাবাদি পড়ে আছে অথচ তিন ফষলী এ জমি নেয়ার জন্য তাদের চাপ দেয়া হচ্ছে। তারা রজীবন দিবেন তবুও এক ইঞ্চি জমি আর কোন বিদ্যুত কেন্দ্রকে দিবেন না।
ফরিদ উদ্দিন তালুকদার বলেন, কৃষি নির্ভর ৮৫ ভাগ মানুষের বেঁচে থাকার শেষ সম্বল এ জমি অধিগ্রহন করা হলে ৯৫ ভাগ ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে। মুজিবনগর খ্যাত ধানখালী ও চম্পাপুরের নৌকা পাগল মানুষকে ভিটেমাটি না ছাড়া করার দাবি জানান।

কলাপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান আঃ মোতালেব তালুকদার বলেন, বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মান করতে এতো জমি দরকার কিনা বিসয়টি ভাবা উচিত। কেননা এ দুই ইউনিয়নের মানুষ তিন ফষলী এই কৃষি জমির উপর নির্ভরশীল।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) মামুনুর রশিদ বলেন , জমি অধিগ্রহনে জনগনের যাতে কোন ক্ষতি না হয় সে বিসয়টি সরকারকে অবহিত করবেন।

সভায় জেলা প্রশাসক মতিউল ইসলাম চেীধুরী বলেন, বর্তমান সরকার হলো কৃষি,শিল্প ও উন্নয়ন বান্ধব সরকার। তাই তিন ফষলী জমিতে যাতে আবার কোন বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মান না হয় এ বিসয়টি তিনি সরকারের উর্ধ্বতন মহলে অবহিত করবেন এবং হাজারো গ্রামবাসীর দাবি তুলে ধরবেন। তিন ফষলী জমির ক্ষতি যাতে না হয় এ বিষয়টি তিঁনি দেখবেন বলে গ্রামবাসীদের আশ্বস্ত করেন।

(এমকেআর/এসপি/নভেম্বর ০৮, ২০১৮)