মাদারীপুর প্রতিনিধি : মাদারীপুর শহরের শকুনী লেকের পাড়ের রাস্তায় গভীর রাতে ফেলে যাওয়া বৃদ্ধা মা জোবেদা খাতুন (৭০) ৮ দিন অতিবাহিত হলেও কেউ খোঁজ নিতে আসেনি। বৃহস্পতিবার দুপুরে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় বেডে ঘুমন্ত অবস্থায় আছেন। তিনি গত ৮দিন ধরে চিকিৎসাধীন থাকলেও তার খোজে কেউ আসেনি। 

জানা গেছে, গত ৩১ অক্টোবর গভীর রাতে তার সন্তানরা মাদারীপুর শহরের শকুনী লেকের উত্তর পাড়ে রাস্তায় ফেলে রেখে যায়। পরের দিন ১ নভেম্বর সকালে সরকারি নাজিমউদ্দিন কলেজের ইংরেজী বিভাগের শিক্ষার্থী বিলাশ হালদার ও মেহেদী ইসলাম হাটার সময় বৃদ্ধাকে পড়ে থাকতে দেখে এগিয়ে যায়। গিয়ে দেখে হাতে-মাথায় রক্তাক্ত অবস্থায় এক বৃদ্ধা পড়ে আছে। তাৎক্ষণিক তারা বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়।

ঐ বৃদ্ধা প্রথম দিন নিজের নাম আর সন্তান-বউ মিলে ফেলে রেখে যাওয়ার কথাটুকুই শুধু বলতে পেরেছিল। স্বামীর নাম অজয় মল্লিক, ছেলেদের নাম আলমগীর ও সোবাহান বলেছিল। তারপর থেকে আর কথা বলতে পারছে না। কিছুটা স্মৃতিশক্তি হারিয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে বৃদ্ধা। হাসপাতালে ভর্তির পরে মাঝে মধ্যে ইশারা দিয়ে কথা বললেও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কোন সাড়া শব্দ নেই তার। হাসপাতালের বেডে ঘুমিয়ে আছেন।

উদ্ধারকারী শিক্ষার্থী বিলাশ হালদার জানান, আমরা দু’জনে বৃদ্ধাকে রাস্তার উপর দেখে তাৎক্ষণিকভাবে সদর হাসপাতাল নিয়ে ভর্তি করি। রাস্তায় যখন প্রথম দেখি তখন তার শারীরিক অবস্থা ভালোছিল না। এখন আগের চেয়ে একটু ভালো।

হাসপাতালে পারভিন নামের এক নার্স জানান, যখন বৃদ্ধা মাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তার চেয়ে এখন শারীরিক অবস্থা একটু ভালো। ভর্তির পরে একদিন স্বামীর নাম অজয় মল্লিক, ছেলেদের নাম আলমগীর ও সোবাহান বলেছিল। বাড়ি কোথায় তা বলেনি। এর পর থেকে আর কথা বলেনি। ইশারা দিয়ে মাঝে মধ্যে কিছু বলার চেষ্টা করে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কোন ইশারাও দিচ্ছে না।

মাদারীপুর সিভিল সার্জন ডা. ফরিদ উদ্দিন বলেন, হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে আমাদের তত্ত¡াবধানে আছে। শারীরিক অবস্থা পূর্বের চেয়ে কিছুটা ভালো। আমরা সঠিকভাবেই তার চিকিৎসা চালাচ্ছি। পরিবারের কেউ এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে আসেনি।

মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম জানান, সন্তানরা যদি এখনোও তার মাকে নিয়ে গিয়ে সেবা-যত্ন করতে চায়, আমাদের কোন অভিযোগ নেই। তবে যদি এমন অবস্থায় ফেলে রাখে, তাহলে তাদের পরিচয় পাওয়া গেলে আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া যদি কোন হৃদয়বান ব্যক্তি বর্তমানেও বৃদ্ধাকে নিতে চায়, তাহলে তাদের জিম্মায় দেয়া হবে। আমরা সরকারী তরফ থেকে সহযোগিতা করে যাচ্ছি।

(এএসএ/এসপি/নভেম্বর ০৮, ২০১৮)