চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি : চুয়াডাঙ্গাসহ চার উপজেলায় সবজি ক্ষেতে ব্যাপক হারে কীটনাশকের ব্যবহার দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১২ সালে চুয়াডাঙ্গা জেলায় প্রায় ৫০ কোটি টাকার কীটনাশক বিক্রি হয়েছে। গত ৬ বছর আগেও জেলায় বছরে কীটনাশক বিক্রির পরিমান ছিলো মাত্র ৫/৭ কোটি টাকা। কীটনাশক বিক্রতাদের তথ্য মতে বর্তমানে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে প্রায় ১৭০ কোটি টাকা কীটনাশক বিক্রয় হয়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলাতে । অধিক ফলনের আশায় সবজিতে কীটনাশক ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছেন কৃষকরা। এ ক্ষেত্রে কীটনাশক ব্যবহারের বিধিও মানা হচ্ছে না। ফলে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের জন্য একদিকে যেমন সবজি আবাদে খরচ বাড়ছে। আবার অধিক মূল্যে ক্রয় করা কীটনাশক মিশ্রিত সবজি খেয়ে মানুষ পেটের পীড়াসহ নানান ধরণের জটিল রোগে আক্তান্ত হচ্ছেন।

চুয়াডাঙ্গা জেলায় ব্যাপকহারে বেগুন, পটোল, চিচিঙ্গা, ঝিঙে, লাউ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, চালকুমড়া, করলা, বরবটি, ডাটাশাক, লালশাক, পালংশাক, শিম প্রভৃতি সবজির আবাদ হচ্ছে। এ সকল সবজিতে , এডমায়ার, ভিতত্তিকা ,এমাজিন,শেকল,ডায়াভিট মের্টাল, ডায়োজিন, এডমায়ার, ডেসিস, কারটাপসহ মানবদেহের মারাত্মক ক্ষতিকারর কীটনাশক।

সবজিতে যে কোন সমস্যা দেখা দিলে কৃষকরা ছুটে যান কিটনাশক বিক্রয়তার দোকানে বা কোম্পানীর প্রতিনিধিদের কাছে। তাদের পরামর্শ মোতাবেক সবজিতে কিটনাশক প্রয়োগ করেন। এ ক্ষেত্রে কৃষকরা ৩০% টাকা দোকানে জমা দিয়ে বাকিতে কিটনাশক ক্রয়ের সুযোগ পান। সবজি উঠলে বিক্রি করে বাকি টাকা পরিশোধ করে অধিকাংশ কৃষকরাই । সেই কারণে দোকানীদের হচ্ছামত কীটনাশক বিক্রয় সুযোগকে সতব্যবহার করছে ।

চুয়াডাঙ্গায় বর্তমানে ১০০/১১০টি কীটনাশক কোম্পানি ব্যবসা করে বলে জানা গিয়েছে। গত বছর এরা ব্যবসা করেছে প্রায় ১০০কোটি টাকার মত। ৫/৬ বছর আগে জেলায় মাত্র ২০/২২টি কোম্পানি ছিলো। তাদের ব্যবসা ছিলো মাত্র ৫/৭ কোটি টাকা মাত্র। তখন আবাদি জমির পরিমানও বেশি ছিলো। এখন জমির পরিমান কমলেও বাড়েছে কোম্পানি এবং কিটনাশক ব্যবহারের পরিমান। কিটনাশক কোম্পনীগুলো প্রয়োজনে অপ্রোয়জনে কৃষকদের কিটনাশক ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করে। কীটনাশকের ব্যবহার কমানো ও পরিবেশ বান্ধব ফসল উৎপাদনের উদ্দেশ্যে কৃষি বিভাগের গাফলতিই দায়ি আছে বলে মনে অনেকই। তারপরও কিটনাশক ব্যবহার কমাতে হলে আইপিএম পদ্ধতিকেই আরও কার্যকর করা জরুরি বলে মনে করেন সবজি চাষিরা।

২০০৬-২০০৭ সালের জরিপ অনুযায়ী চুয়াডাঙ্গায় মোট আবাদি জমির পরিমান ছিলো নিরানব্বই হাজার তিন শ” ত্রিশ হেক্টর। ২০১০-২০১১ সালের জরিপ তা কমে হয়েছে সাতানব্বুই হাজার পাঁচ শ’ কুড়ি হেক্টর। এর মধ্যে আঠারো হাজার হেক্টর জমিতে তিন মরসুমে সবজি আবাদ হচ্ছে।কীটনাশক ব্যবহার বৃদ্ধির বিষয়টি শিকার করে কৃষি বিভাগ জানায় অধিক ফলনের আশায় মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের দিকে ঝুুঁকছে কৃষক।

নুরুল ইসলাম চৌধুরী, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, রাজশাহী মেডিকেল , তিনি বলেন, এ সকল কীটনাশক ব্যবহারের কমপক্ষে ৭ দিন পর সবজি গ্রহন করতে হবে। যা কৃষকরা মানছেন না। কীটনাশক মিশ্রিত সবজি খেয়ে মানুষের নার্ভার সিসটিমে আঘাত করছে। এর ফলে হাত-পা কাঁপা, মাথাকাঁপা, প্যারালাইসেস হওয়া, কিডনী ফেল হওয়া, স্বাসকষ্ট, হার্ট এ্যাটাক্ট,চর্ম রোগসহ ক্যান্সার জাতীয় রোগ হতে পারে। বর্তমানে এসব রোগীর সংখ্যায় বেশি ।

কৃষিবিদ মোর্শেদ এর মতে, প্রায় সবজিতে দেয়া কীটনাশক সেবন করা রোগিরা হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের অধিকাংশই রোগির মৃত্যু হয়। সেই কিটনাশকই আমরা সবজির মাধ্যমে একটু একটু করে গ্রহণ করছি। যা আমাদের শরীরে প্রবেশ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নষ্ট করে দিচ্ছে। এগুলো আমরা আপাত দৃষ্টিতে বুঝতে পারছিনে। তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এটি মারাত্মত ক্ষতি। এ থেকে রক্ষা পেতে কৃষকদের জনসচেতনা বাড়ানোর সাথে সাথে ভোক্তাদেরকেও সচেতন হতে হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

কৃষক ও ভোক্তদের সচেতনতার পাশাপাশি কিটনাশক ব্যবহারের বিষয়ে সরকারকে যতদ্রুত সম্ভব জোড়ালো পেদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে বলে মনে করেন এলাকার সচেতন মহল। অন্যথায় এই কিটনাশক স্লো পয়জেন আকারে শরীরে ডুকে সকল রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা ধ্বংশ করে জীবনকে মারাত্মক হুমকির মুখে ফেলবে।

(টিটি/এসপি/নভেম্বর ০৯, ২০১৮)