রূপক মূখার্জি, নড়াইল : সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দূর্গা পূজার পর লক্ষ্মীপূজা শেষে গত মঙ্গলবার আমাবশ্যা তিথিতে শ্যামা পূজা ও দীপাবলি উৎসব সম্পন্ন হয়েছে। এবার শুরু হতে যাচ্ছে শ্রী শ্রী কাত্যায়নী পূজা। পাঁচদিন ব্যাপী এই পূজাকে ঘিরে লোহাগড়ায় উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। চলছে মন্ডব নির্মাণ আর প্রতিমার রঙের কাজ। কর্মব্যস্ত সময় পার করছেন আয়োজক কমিটির সদস্যরা। স্থানীয় প্রশাসনও পূজা উদযাপনের জন্য নিরাপত্তা মূলক ব্যবস্থা নিয়েছেন।

নড়াইলে লোহাগড়ায় কাত্যায়নী পূজা উপলক্ষে সনাতন ধর্মালম্বীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দিপনার সৃষ্টি হয়েছে। শীতের আগমনি বার্তায় প্রকৃতি তার চঞ্চলা বেশ ছেড়ে শান্ত স্নিগ্ধ সাজে সজ্জিত। হেমন্ত ও শীতের শুভ সন্ধিক্ষণে কালের দূর্গতি নাশে সর্বরূপিনী, সিংহ বাহনী শ্রী শ্রী কাত্যায়নী দেবীর শুভ আর্বিভাবে লোহাগড়ায় উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। আগামী ১৩ নভেম্বর মঙ্গলবার ৬ষ্ঠী পূজার মাধ্যমে এ পূজা শুরু হবে। ১৭ নভেম্বর বির্সজনের মাধ্যমে কাত্যায়নী পূজা শেষ হবে।

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, লোহাগড়ায় প্রায় এক যুগেরও অধিক সময় ধরে শ্রী কাত্যায়নী দেবীর পূজা-অর্চনা পালিত হয়ে আসছে। বর্তমান সময়ে লোহাগড়ায় কাত্যায়নী পূজা ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে। জেলার ইতিহাসে ঠাঁই করে নিয়েছে লোহাগড়ার ঐতিহ্যবাহী কাত্যায়নী পূজা। মাগুরার পর নড়াইলের লোহাগড়ায় শ্রী কাত্যায়নী পূজা জাঁকজমকের সাথে পালিত হয়ে আসছে।

হিন্দু ধর্মীয় শাস্ত্র মতে, দ্বাপর যুগে ভগবান শ্রী কৃষ্ণ পৃথিবীতে আবির্ভূত হন। শ্রী কৃষ্ণ রুপী স্বয়ং ভগবানকে পুত্র, বন্ধু, পতি এবং প্রভু রুপে পাওয়ার জন্য ব্রজবাসীগণ শ্রী শ্রী কাত্যায়নী দেবীর ব্রত পালন করেছিলেন। দ্বাপর যুগে কোন এক হেমন্তের প্রারম্ভে পূর্ণ সলিলা যমুনা নদীর তীরে মাস ব্যাপী ব্রত ও পূজা অনুষ্ঠানের প্রচলন হয়। ব্রজবাসীগণ ব্রহ্ম মুহুর্তে যমুনা নদীতে ¯œান করে যমুনা তীরে বালুকা নির্মিত কাত্যায়নী মূর্তিতে ফুল, ফল ও অন্যান্য উপকরণ দ্বারা আরাধনা শুরু করেন। এভাবে এক মাস উপাসনার পর দেবী তুষ্ঠ হয়ে ব্রজবাসীগণকে অভীষ্ঠ ফল প্রদান করেন। অতঃপর পূজান্তে বালুকা নির্মিত দেবী মূর্তী যমুনায় বিসর্জন দিয়ে ব্রজবাসীগণ মহা ধুম ধামে মহোৎসব পালন করেন। এরপর থেকে পৃথিবীর দেশে দেশে শ্রী শ্রী কাত্যায়নী দেবীর পূজা পালিত হয়ে আসছে।

এ বছর লোহাগড়ায় জয়পুর পরশমনি মহাশ্বশান, গন্ধবাড়িয়া, মাইট কুমড়া, কুন্দশী, কুন্দশী, নলদীর বৈকুষ্ঠপুর, কালাচাঁদপুর, মিঠাপুর, চাপুলিয়া, বলাডাঙ্গা, লাহুড়িয়ার কল্যাণপুর, ঝামারঘোপ, দিঘলিয়া ও ইতনাসহ ১২টি পূজা মন্ডবে শ্রী শ্রী কাত্যায়নী পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, এসব মন্ডব গুলোতে চলছে সাজ-সজ্জার কাজ। প্রতিমা শিল্পীরা মনের মাধুরী মিশিয়ে কাত্যায়নী দেবীর মূর্তিতে রঙের আচড় দিয়ে চলেছেন। ব্যস্ত সময় পার করছেন আয়োজক কমিটির সদস্যরা।

উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি ও জেলা পরিষদ সদস্য প্রবীর কুমার কুন্ডু মদন জানান, নির্বিঘ্ন ভাবে কাত্যায়নী পূজা উদযাপনের জন্য সকল মন্ডবে প্রস্তুতি প্রায় শেষের পথে। সুষ্ঠু ও সুন্দর ভাবে এ পূজা পালনের জন্য তিনি সকলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

এদিকে, কাত্যায়নী পূজা উপলক্ষ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা মূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে বলে লোহাগড়া থানার ওসি প্রবীর কুমার বিশ্বাস জানিয়েছেন।

(আরএম/এসপি/নভেম্বর ১০, ২০১৮)