বিনোদন ডেস্ক : পিতা নেই, কিন্তু পাহাড় সমান পিতার স্বপ্ন আগলে রেখেছেন পরম যত্নে, বছরের পর বছর। পরিবারের সবাইকে হারিয়ে এতগুলো দিন, সেই ভীষণ কষ্টের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি, একা। তার সেই কষ্টকে হার মানানোর, প্রতিকূলতার কাছে দমে না যাওয়ার একটা গল্প আছে। সেই গল্প অবলম্বনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর নির্মিত হয়েছে তথ্যচিত্র ‘হাসিনা— এ ডটার’স টেল’। আগামী শুক্রবার ১৬ নভেম্বর মুক্তি পেতে যাচ্ছে গত দুই বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের এ ফসল। যদিও এই তথ্যচিত্রের ভাবনা দানা বাঁধে আরও তিন বছর আগে।

সবার জন্য প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়ার আগের দিন বৃহস্পতিবার ১৫ নভেম্বর স্টার সিনেপ্লেক্সে এ তথ্যচিত্রের প্রিমিয়ার অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) নির্বাহী পরিচালক সাব্বির বিন শামস।

মঙ্গলবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট কনভেনশন হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমরা মূলত প্রকাশনার কাজ করে থাকি। আমরা ভাবছিলাম তরুণদের জন্য ডকুমেন্টেশনাল কিংবা আর্কাইভের কোনও কাজ করতে পারি কিনা। বাংলাদেশ এর উন্নয়নের জায়গা থেকে শুরু করে, ইতিহাসের জায়গা থেকে শুরু করে, স্বাধীনতার জায়গা নিয়ে আমরা মুজিব গ্রাফিক নভেলের কাজ করেছি। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখছি বাংলাদেশের উন্নয়নে নেতৃত্ব দিতে। তার যে উন্নয়নের রাজনীতি সেই সম্পর্কে আমরা একটি ধারণায় পৌঁছেছি। গত কয়েকদিন আগেও আমরা তরুণদের সঙ্গে একটি ফোকাস গ্রুপ আলোচনায় গিয়ে দেখি, তরুণরা ’৯০ সম্পর্কে ভুলে গেছেন। রাস্তায় পাখির মতো মানুষ মারা হয়েছে, সেই সময় শেখ হাসিনা নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন আন্দোলনে। এ ইতিহাস তরুণরা ভুলে গেছেন!’

সাব্বির বিন শামস বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাজগুলোতে টার্মস অব রেফারেন্স হচ্ছে বঙ্গবন্ধু যে কাজগুলো অসমাপ্ত রেখে গেছেন। তখন আমরা চিন্তা করলাম এরকম একটা কাজ করতে পারি কিনা। এটা ডকুমেন্টেশন হতে পারে কিংবা গ্রহণযোগ্য একটা কাজ আমরা করতে পারি কিনা। আমরা অ্যাপেলবক্সের সঙ্গে বসে কী ধরণের মানুষ আসবে, এটা কীভাবে সামনে এগোবে— এগুলো সবই নির্ধারণ করি। পাঁচ বছর ধরে কাজ করে, দুই বছরের মতো সময় লেগেছে একটা জায়গায় দাঁড় করাতে। আমাদের এই কাজে শেখ রেহানার সন্তান এবং সিআরআইয়ের ট্রাস্টি রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক নিজে প্রতিটা জায়গায় গিয়ে সব সময় নিবিড়ভাবে সঙ্গে ছিলেন। আমাদের আরেকজন ট্রাস্টি নসরুল হামিদ বিপু সম্ভাব্য সব চেষ্টা করে গেছেন।’

সিআরআইয়ের ক্রিয়েটিভ কো অর্ডিনেটর শিবু কুমার শীল বলেন, ‘এই ছবিতে প্রথম যখন শুনছিলাম পিপলু ভাই বানাচ্ছেন, তখন আমার কাছে অদ্ভুত লেগেছে। তিনি কখনও সিনেমা বানাননি, তাকে কীভাবে দেওয়া হলো? কিন্তু প্রথম রাফ কাট দেখার পর আমি চমকে গিয়েছি। মহাত্মা গান্ধীর পরে এ ধরনের ডকুমেন্টারি আর দেখা যায়নি।’

নির্মাতা পিপলু খান বলেন, ‘তারা যেভাবে বড় করে বলছেন আমার সম্পর্কে, ব্যাপারটা সেরকম নয়। এটা একটা আকস্মিক ঘটনা ছিল।’

তিনি বলেন, “আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে একজন করে রাজনীতিবিদ বাস করে। আমি যেদিন প্রথম প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এই কাজ নিয়ে কথা বলতে বসি, আমি তাকে বলেছি যে, আমি ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’ বলে কাজ করতে পারবো না, আমি আপনাকে ‘আপা’ বলবো। কারণ তাকে নিয়ে কাজ করতে গেলে আমাকে তার কাছে যেতে হবে।’

পিপলু খান বলেন, ‘বলা যায়, কোনও প্ল্যানিং ছাড়াই আমি কাজ করতে বসি। আমি ভাবি, বঙ্গবন্ধুর কন্যার সঙ্গে একটা সুযোগ, দেখি না কী হয়। ছবিটা আমাকে অনেক বদলে দিয়েছে। এই ছবিটা বানানোর উদ্দেশ্য এ দেশের নাগরিক হিসেবে এ দেশের একটি বড় ইতিহাসের অংশ ধরার চেষ্টা। আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কিছু বানাইনি, আমি বঙ্গবন্ধুর কন্যার গল্প তুলে ধরেছি।’

এই তথ্যচিত্রের বিপণনের দায়িত্বে থাকা সৈয়দ গাওসুল আলম শাওন বলেন, ‘এটি একটি ডকু-ফিকশন। ১৫ তারিখ সিনেপ্লেক্সে প্রিমিয়ার হবে। ১৬ তারিখে মুক্তি পাবে ৪টি প্রেক্ষাগৃহে। স্টার সিনেপ্লেক্সে, ব্লক বাস্টার, মধুমিতা এবং চট্টগ্রামের সিলভার স্ক্রিনে। বঙ্গবন্ধুর কন্যার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে তৈরি— এটি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তৈরি করা নয়, ইতিহাসকে ধারণ করে রাখার একটা প্রচেষ্টা।’

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ১৮, ২০১৮)