শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট : সুন্দরবন সংলগ্ন সমদ্র বন্দর মোংলা ও চিংড়ি উৎপাদনের বৃহত এলাকা নিয়ে বাগেরহাট- ৩ (মোংলা- রামপাল) সংসদীয় আসন। ভৌগোলিক কারণে দেশের অগ্রসমান অর্থনীতিতে রয়েছে এ অঞ্চলের বিশেষ ভূমিকা। মোংলা ও রামপালকে ঘিরে রয়েছে অর্থনৈতিক জোন। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ চায় আসনটিতে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে। এবার সাংগঠনিক ভাবে শক্তিশালী বিএনপি চায় এই আসনে বিজয়ী হতে।

স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালের সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাট-৩ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে এমপি নির্বাচিত হন কুবের চন্দ্র বিশ্বাস। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে এমপি হন বিএনপি প্রার্থী আফতাব উদ্দিন হাওলাদার। এরপর ১৯৮৬ সালে বিএনপির আফতাব উদ্দিন হাওলাদার জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে দ্বিতীয়বার এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগ থেকে এমপি নির্বাচিত হন তালুকদার আব্দুল খালেক। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি থেকে বিনা ভোটে এ.ইউ আহমেদ এমপি নির্বাচিত হন।

পরবর্তীকালে একই বছরের ১২ জুন ও ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে এমপি নির্বাচিত হন তালুকদার আব্দুল খালেক। ২০০৮ সালে তালুকদার আব্দুল খালেক খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র থাকায় তার স্ত্রী হাবিবুন্নাহার তালুকদার আওয়ামী লীগ থেকে এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনেও বিনা ভোটে তালুকদার আব্দুল খালেক আওয়ামী লীগ থেকে আবারও এমপি নির্বাচিত হন। বিগত খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন করতে দলীয় নির্দেশে এমপি থেকে পদত্যাগ করেন তালুকদার আব্দুল খালেক। তালুকদার আব্দুল খালেক খুলনা সিটি মেয়র নির্বাচিত হবার পর তার স্ত্রী হাবিবুন্নাহার তালুকদার এই আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে বিনা ভোটে এমপি নির্বাচিত হন।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ৬ প্রার্থীর সবাই এমপি হবার প্রতিযোগীতায় নেমেছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন, বর্তমান এমপি হাবিবুন্নাহার তালুকদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক ব্যারিস্টার শেখ ওবায়দুর রহমান ওবায়েদ, খুলনা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক শেখ মো. আবু হানিফ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য শেখ ইকবাল লতিফ সোহেল, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট শেখ নবীরুজ্জামান বাবু ও চিত্র নায়ক শাকিল খান। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী এসব প্রার্থীর প্রচার-প্রচারনা জমে উঠেছে রামপাল-মোংলা আসনে।

তবে, এই আসন থেকে ৪ বারের এমপি ও বর্তমান খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের রয়েছে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে শক্ত অবস্থান। অপরদিকে এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রদল নেতা সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও বাগেরহাট জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সহ-দপ্তর সম্পাদক কৃষিবীদ মো. শামিমুর রহমান শামিম। তবে, বিএনপি নেতা শামিমের এলাকায় নেই কোন প্রচার-প্রচারনা। বাগেরহাট জেলা জামায়াতের সম্পাদক শেখ আবদুল ওয়াদুদ। এলাকায় এছাড়া অন্যকোন দলের প্রার্থী নেই।

আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার খালেক পত্নী বর্তমান এমপি হাবিবুন্নাহার তালুকদারও এলাকায় জনপ্রিয়তায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী অন্যসব প্রার্থীর থেকে অনেক এগিয়ে রয়েছেন। এমপি হাবিবুন্নাহার তালুকদার দলীয় ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে গনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তার গনসংযোগে প্রধান ভূমিকা রাখছেন তার স্বামী খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার খালেক।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমান এমপি হাবিবুন্নাহার তালুকদার বলেন, রামপল- মোংলার যা উন্নয়ন হয়েছে তা আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েই হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলের মৃত মোংলা বন্দর এখন লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করে। মোংলা-ঘষিয়াখালী আন্তর্জাতিক নৌচ্যানেল খনন, মোংলা বন্দরের আধুনিকায়ন, খুলনা-মোংলা রেললাইন, খানজাহান বিমানবন্দর নির্মাণ, রামপালে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ অসংখ্য উন্নয়ন কর্মকান্ড চলছে। রামপাল-মোংলাকে বর্তমান সরকার যেভাবে সাজাতে শুরু করেছে তাতে বিএনপি-জামায়াতের ঈর্ষান্বিত হওয়ার কথা। আমি দলীয় মনোনয়ন ও জয়ের বিষয়ে শতভাগ আশাবাদী।

বিএনপির নেতাকর্মীরা বলেন, এই আসনে গত ৮ বছর ধরে দলকে শক্তিশালী করে ড. ফরিদ দলীয় নেতাকমীসহ সাধারন মানুষের সাথে রয়েছেন। তিনি এলাকার সন্তান হিসেবে প্রতিবছর দুটি উপজেলায় চক্ষু চিকিৎসা শিবির পরিচালনা করে নিজ খরচে রোগীদের ঢাকায় নিয়ে অপারেশন, শত-শত শিক্ষার্থী, প্রবীণ- দরিদ্র জনগোষ্ঠি ও প্রতিবন্ধীদের অকাতরে অর্থ সহয়তা দিয়ে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যেই এলাকায় তার ক্লিনইমেজ তৈরী হয়েছে। আসনটিতে বিজয়ী হতে বিএনপির প্রার্থী হিসেব একমাত্র ড. ফরিদই এলাকায় গনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, এই আসনে বিগত বিএনপি- জামায়াত জোট থেকে জামায়াতের প্রার্থী নির্বাচনে বার-বার পরাজিত হয়েছে। এ কারণে এই আসনটি উদ্ধারে বিএনপির হাইকমান্ডের নির্দেশে আমি বিগত ৮ বছর ধরে রামপাল-মোংলায় দলের প্রতিটি দলীয় কর্মসূচি পালন করেছি। এই আসনে দলের সাংগঠনিক অবস্থা অত্যন্ত মজবুত। দলের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের সুখদূখে তাদের সব রকম সহযোগীতা করেছি। এই আসনে জামায়াতকে নয়- সাধারন মানুষ এখন বিএনপির প্রার্থী চায়।

আমার রাজনৈতিক, পেশাগত ও সামাজিক কাজের অভিজ্ঞতা দিয়ে এই লবণাক্ত এলাকার নিরন্য কৃষক, বেকার যুবকদের মোংলা শিল্প এলাকা ও সুন্দরবন কেন্দ্রীক ইকো-ট্যুরিজমের মাধ্যমে বিকল্প কর্মসংস্থানসহ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উন্নয়নে অবদান রাখতে চাই। তিনি দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনে বিজয় হবেন বলে আশাবাদী।

(এসএকে/এসপি/নভেম্বর ১৪, ২০১৮)