স্টাফ রিপোর্টার : আয়কর মেলার দ্বিতীয় দিনে বুধবার রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে করদাতা ও সেবা প্রার্থীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এ সময় অনেক করদাতাকে মেঝেতে বসেও রিটার্ন ফরম পূরণ করতে দেখা গেছে।

মেলায় আগত করদাতাদের উল্লেখযোগ্য অংশই আয়কর রিটার্ন জমা দিচ্ছেন। এছাড়া কর সনাক্তকরণ নম্বর (ই-টিআইএন) নেয়ার মাধ্যমে নতুন করে আয়করের খাতায়ও নাম লিখাচ্ছেন অনেকে। বুধবার ঢাকা অফিসার্স ক্লাব সরেজমিন ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে চোখে পড়ে নারী-পুরুষ উভয়েই মেঝেতে বসে রিটার্ন ফরম পূরণ করছেন। এদের একজনের নাম প্রিন্স মাহমুদ। তিনি একটি বহুজাতিক কোম্পনিতে চাকরি করেন। তিনি বলেন, এর আগে অফিসের লোকের মাধ্যমেই রিটার্ন জমা দিতাম। এবারই প্রথম নিজের ফরম নিজেই জমা দিতে এসেছি। এখানে এসে হেল্পডেস্ক থেকে শুনে নিয়েছি কি কি করতে হবে? সে অনুযায়ী রিটার্ন ফরম পূরণের জন্য কোনো জায়গা না পেয়ে মেঝেতে বসেই করছি।

তাসলিমা আকতার নামে অন্য একজনকেও মেঝেতে বসে রিটার্ন ফরম পূরণ করতে দেখা যায়। তিনি বলেন, মেঝেতে বসে হলেও কাজটা শেষ করে ফেলা ভালো। এক বছরের মত আর টেনশন থাকলো না। কর দেয়ার জন্য মেলায় এক ছাদের নিচে সব সুবিধা পাওয়া যায়। ফরম পূরণে ভুল হচ্ছে কিনা সন্দেহ হলেই সেটা হেল্পডেস্ক থেকে দেখিয়ে নেয়া যায়। তাই মেলাতেই রিটার্ন দাখিল করতে এসেছি। তাছাড়া কার্পেট বিছানো থাকায় মেঝেতে বসে ফরম পূরণে তাদের কোনো অভিযোগও নেই।

মেলায় দেখা যায় বেশ কিছু আইনজীবী করদাতাদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন। মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন মিনু এমনই একজন কর আইনজীবী। তিনি বলেন, ব্যক্তি শ্রেণির বা কোম্পনি, যারা কর দিতে আসছেন তাদেরকে আমরাসহ এনবিআরের হেল্প বুথ থেকে সাহয়তা করা হচ্ছে। কীভাবে রিটার্নগুলো সুন্দরভাবে পূরণ করে জমা দিতে হবে, কোথাও রেয়াত পাওয়া যাবে কি-না এসবসহ সামগ্রিক বিষয়ে করদাতাদের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলা-২০১৮ গতকাল (মঙ্গলবার) শুরু হয়েছে। ‘উন্নয়ন ও উত্তরণ, আয়করের অর্জন’ স্লোগানে সারাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশে শুরু হওয়া এই নবম আয়কর মেলার প্রতিপাদ্য ‘আয়কর প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে সামাজিক ন্যায়বিচার ও ধারাবাহিক উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ’।

কেন্দ্রীয়ভাবে এবার মেলা বসেছে রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে। গত দুই বছর ধরে আগারগাঁওয়ে নির্মাণাধীন রাজস্ব ভবনে মেলা অনুষ্ঠিত হলেও এবার তা ফিরে এসেছে পুরনো প্রাঙ্গণে। ঢাকার পাশাপাশি এদিন সারাদেশে শুরু হয়েছে এই মেলা।

মেলার আয়োজক জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মেলা চলবে। মেলা শেষ হবে আগামী ১৯ নভেম্বর। গত ৮ বছরে আয়কর মেলা পেয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ, বেড়েছে জনপ্রিয়তা। মেলায় সেবাগ্রহীতার সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণও। ২০১০ সালে শুরু হওয়ার পর থেকে আয়কর মেলায় সেবাগ্রহীতা ও রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বেড়েছে ১৯ গুণ। একই সময়ে মেলা থেকে নিবন্ধন নেয়া নতুন করদাতার সংখ্যা বেড়েছে ৫ গুণ ও রিটার্ন জমা দেয়ার সংখ্যা বেড়েছে ৬ গুণ।

এনবিআরের তথ্যমতে, ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরে ৭ দিন, জেলা শহরে ৪ দিন, ৩২ উপজেলায় দু’দিনব্যাপী এবং ৭০টি উপজেলায় একদিন ভ্রাম্যমাণ আয়কর মেলা অনুষ্ঠিত হবে। ব্যানার, ফেস্টুন, বেলুন ও আলোকসজ্জায় সেজেছে মেলাগুলো।

এছাড়া আয়কর মেলা সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে মোবাইল অপারেটরদের মাধ্যমে করবিষয়ক এসএমএসও পাঠানো হয়েছে। টিভি ও টকশোতেও থাকবে মেলা সম্পর্কে আলোচনা। সচেতনতা বাড়াতে তৈরি করা হয়েছে আয়কর ডকুমেন্টারি ও ডকু ড্রামা, যা প্রচার করা হবে বিভিন্ন টেলিভিশন ও মেলায়।

মেলায় মিলছে যেসব সুবিধা-

করদাতারা সহজেই আয়কর রিটার্ন জমা দিতে পারছেন। ঢাকায় প্রতিটি কর অঞ্চলের জন্য আলাদা বুথ থাকছে। নেয়া যাচ্ছে নতুন কর শনাক্তকরণ নম্বর (ই-টিআইএন)। এনবিআরের ‘ই-পেমেন্ট’ ওয়েবসাইট ব্যবহার করে পরিশোধ করা যাচ্ছে কর। মুক্তিযোদ্ধা, নারী, প্রতিবন্ধী ও প্রবীণ করদাতাদের জন্য রয়েছে আলাদা বুথ। মেলায় স্থাপিত সোনালী ও জনতা ব্যাংকের বুথে করদাতারা আয়কর জমা দিতে পারছেন। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের অধীন শুল্ক, ভ্যাট, সঞ্চয় অধিদফতর, বিসিএস (কর), একাডেমি, কাস্টমস একাডেমি এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের পৃথক পৃথক বুথ রয়েছে। এসব বুথ থেকে মেলায় আগত দর্শনার্থীরা সংশ্লিষ্ট বিভাগ সম্পর্কে সব তথ্য জানতে পারছেন।

করদাতাদের মেলা প্রাঙ্গণে আয়কর রিটার্ন, ই-টিআইএন আবেদন ফরম এবং চালান ফরম সরবরাহ করা হবে। করদাতাদের সুবিধার্থে মেলায় হেল্প ডেস্ক, তথ্যকেন্দ্র ও আয়কর অধিক্ষেত্র সংক্রান্ত বুথ রয়েছে। এসব বুথের মাধ্যমে করদাতাদের আয়কর রিটার্ন ফরম পূরণ, চালান ও পে-অর্ডার প্রস্তুতসহ আয়কর আইনবিষয়ক প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। করদাতাদের সুবিধার্থে মেলায় রয়েছে ফটোকপির ব্যবস্থাও।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ১৪, ২০১৮)