স্টাফ রিপোর্টার : উল্টো রথে চলেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা কার্যক্রম। ভর্তি পরীক্ষায় লিখিত ও এমসিকিইউ মিলিয়ে ২১ পেলেই ‘বি’ ইউনিটে চান্স পাবে একজন ভর্তিচ্ছু।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ‘বি’ ইউনিটের পরীক্ষায় ফল বিপর্যয় হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ভর্তি পরীক্ষার আগে ‘স্ট্যান্ডার্ড মানের প্রশ্নপ্রত্র’ প্রণয়নের ঘোষণা দিয়ে পরীক্ষা শেষে ফল বিপর্যয় দেখে এখন উল্টো পথে হাঁটছে প্রশসান। বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ‘বি’ ইউনিটের ফল বিপর্যয় নিয়ে বিশদ আলোচনা শেষে শর্ত শিথিল করা হয়।

সভা সূত্রে জানা গেছে, বুধবার রাতে কলা, সামাজিক বিজ্ঞান ও আইন অনুষদভুক্ত ‘বি’ ইউনিটের ফল বিপর্যয় ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদভুক্ত ‘সি’ ইউনিটের প্রশ্নপত্রে অসঙ্গতি নিয়ে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কিমিটি সভা আহ্বান করে। সভায় ‘বি’ ইউনিটের ফল বিপর্যয় নিয়ে আলোচনা শেষে পাশের শর্ত কমিয়ে আনা হয়।

ভর্তি নির্দেশিকায় শর্ত ছিল এমসিকিউ পরীক্ষায় ৬০ নম্বরের মধ্যে ৪০ শতাংশ অর্থাৎ সর্বনিম্ন ২৪ পেতে হবে। কিন্তু এ পাশের শর্ত কমিয়ে ৩০ শতাংশ অর্থাৎ এমসিকিউ ৬০ নম্বরের মধ্যে ১৮ পেয়েই উত্তির্ণ হবে একজন ভর্তিচ্ছু। আর ২০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় ভর্তি নির্দেশিকা অনুযায়ী সর্বনিম্ন ৭ পেতে হবে। তবে সভায় এ শর্ত কমিয়ে করা হয়েছে মাত্র ৩।

অর্থাৎ এখন এই ইউনিটে ৮০ নম্বরের পরীক্ষায় ২১ পেয়েই উত্তির্ণ হবে একজন ভর্তিচ্ছু। ফল বিপর্যয়ের কারণে গত ৪ নভেম্বর এই ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও ফল প্রকাশ করতে পারছে না সংশ্লিষ্টরা। তবে এবার দুই একদিনের মধ্যেই ফল প্রকাশের আশা প্রকাশ করেছেন ওই ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কমিটির একজন সদস্য।

শর্ত শিথিলের কারণ অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওই ইউনিটের পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন মহলে আলোচিত হতে থাকে প্রশ্নের ধরন নিয়ে। অতিরিক্তি জটিল এবং অবান্তর প্রশ্নে ভরপুর এই ইউনিটের তিন শিফটের প্রশ্নপত্র। একইসঙ্গে লিখিত অংশের প্রশ্ন নিয়ে বিতর্ক সবথেকে বেশি। একাধিক উত্তর হতে পারে এমন প্রশ্নও অন্তর্ভুক্ত ছিল বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ।

ভর্তি পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্তত ১০ জন শিক্ষকের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা জানান,‘ভর্তি পরীক্ষার লিখিত অংশের ১৬০টি করে খাতা মূল্যায়ন করতে দেয়া হয় ইউনিট সংশ্লিষ্ট প্রতি শিক্ষককে। সেখানে পাসের হার হার ১-২ শতাংশ।

বাংলা বিভাগের একজন অধ্যাপক জানান, ‘তার ১৬০টি খাতার মধ্যে লিখিত অংশে একজন ৫ নম্বর, ২ জন ৪ নম্বর ও অধিকাংশ ৩ এবং ২ করে নম্বর পেয়েছে।

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক দুই বারের উপাচার্য ও ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সাত্তার বলেন, আমরা এখানে অনার্স পাস করা নয় অনার্স পড়ানোর জন্য ভর্তি পরীক্ষা নিয়েছি। শিক্ষার্থীদের মান অনুযায়ী প্রশ্ন হলে তারা জাস্টিস পেত। প্রশ্নপত্র প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আমাদের সকলকে আরো যত্নবান ও সতর্ক হতে হবে।

ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক পরেশ চন্দ্র বর্মণ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা স্নাতক পাস কোনো শিক্ষার্থীকে এখানে ভর্তি করাব না অথবা এটা কোনো চাকরির পরীক্ষাও নয়। বিষয়টি প্রশ্ন কর্তাদের ভাবা উচিত ছিল। কঠিন প্রশ্ন মানেই মানসম্মত প্রশ্ন নয়। এই ইউনিটের প্রশ্নগুলো ভর্তিচ্ছুদের সঙ্গে রিলেটেড না। ফলে যা হবার তাই হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন উর রশিদ আসকারী বলেন, প্রশ্নপত্র অপেক্ষাকৃত কঠিন হওয়ায় নির্ধারিত শর্তে নির্দিষ্ট সংখ্যক আসন পূর্ণ না হওয়ায় শর্ত কিছুটা শিথিল করা হয়েছে যাতে সবগুলো আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারে।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ১৫, ২০১৮)