সুকুমল কুমার প্রামানিক, রাণীনগর (নওগাঁ) : আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন বিক্রি শুরু করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। ১২ নভেম্বর সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মনোনয়ন কেনার মধ্য দিয়ে এ কার্যক্রম শুরু হয়। গত কয়েক দিনে নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনের বিএনপির সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ৮ জন মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। অনেকে ফরম জমা দিয়েছেন এবং অনেকেই জমা দিবেন। 

প্রাথমিক অবস্থায় ৫ হাজার টাকা জমা দিয়ে মনোনয়ন কেনা হলেও মনোনয়ন ফরম জমা দেয়ার সময় অফেরতযোগ্য ২৫ হাজার টাকা জমা দিতে হবে বলে জানা গেছে। এর আগে ১১ নভেম্বর রবিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপিকে নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন।

জানা গেছে, গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিএনপি অংশ না নেয়ায় একতরফা ভাবে নির্বাচন হয়। ফলে নওগাঁ-৬ আসন হারায় বিএনপি। এবার এ আসনে বিএনপিতে নতুন মুখের আগমন ঘটেছে। যে যার মতো করে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দলীয় টিকিট পেতে।

নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন তারা হলেন, বিএনপির সাবেক প্রতিমন্ত্রী মো: আলমগীর কবীর, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো: আনোয়ার হোসেন বুলু, বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের সহযোগী ও পারিবারিক কর আইনজীবী, সুপ্রিম কোট্রের বিশিষ্ট আইনজীবী, জাতীয়তাবাদী কর আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম মহাসচিব অ্যাড: মো: জিল্লুর রহমান, কেন্দ্রীয় তাঁতীদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক মো: এচাহক আলী, নওগাঁ জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ও সাবেক গোনা ইউপি চেয়ারম্যান মো: আমিনুল হক বেলাল, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি মো: সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, নওগাঁ জেলা তাঁতীদলের সাধারণ সম্পাদক শেখ আব্দুস শুকুরসহ এ আসনে আরেকজও মনোনয়ন ফরম কিনেছেন তার নাম ঠিকানা জানা যায়নি। এছাড়াও এ আসন থেকে বিএনপির আরো মনোনয়ন ফরম কিনতে পারেন বলে এক সূত্রে জানা গেছে। মনোনয়ন উত্তোলনের সময় সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাথে দলের অন্যান্য নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

এক সময় নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনের এ দুই উপজেলা জঙ্গি এলাকা এবং বাংলাভাইয়ের অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত ছিল। ১৯৯১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সাবেক প্রতিমন্ত্রী মো: আলমগীর কবীর। ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শেষের দিকে আলমগীর কবির এলডিপিতে যোগ দেন।

এরপর আলমগীর কবীরের আপন ছোট ভাই মো: আনোয়ার হোসেন বুলু বিএনপির হাল ধরতে রাণীনগর বালিকা বিদ্যালয়ে বিএনপির আয়োজিত এক সভায় যোগ দেন। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীর তোপের মুখে পরে আলমগীরের কুশপূত্তলি দাহ করেন। এরপর এই দুই উপজেলার বিএনপি নেতা কর্মীদের মধ্যে বিশ্বাস হয় যে, আলমগীর কবীরের বিরুদ্ধে আনোয়ার হোসেন বুলু। সে সময় থেকে প্রায় ১০ বছর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো: আনোয়ার হোসেন বুলু এ দুই উপজেলার বিএনপির নেতা কর্মীদের অভিভাবক হিসেবে শক্ত হাতে দলের হাল ধরেছিলেন।

এ লক্ষ্যে এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ, প্রচার-প্রচারণা ও তৃণমূল নেতা কমীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। আলমগীর কবীর এলডিপিতে যোগদানের বছরই আবার পদত্যাগ করেন। এরপর দীর্ঘদিন তিনি কোন দলে যোগদান করেছিলেন না। কিন্তু হঠাৎ করেই আলমগীর কবীর পুনরায় বিএনপিতে ফিরে এসেছেন এবং বিএনপির মনোনয়ন ফরমও সংগ্রহ করেছেন। কে পাবে এ আসনের মনোনয়ন টিকিট। এ নিয়ে এলাকায় চলছে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা। বিএনপি নেতা কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। কে পাবেন বিএনপি থেকে এ আসনের মনোনয়ন পত্র তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছে এলাকাবাসী।

(ওএসকেপি/এসপি/নভেম্বর ১৫, ২০১৮)