স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর : নবান্ন উৎসব আনন্দ কৃষদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে দিনাজপুরে শুরু হয়েছে “প্রাণ চিনিগুড়া চাল নবান্ন উৎসব”। 

আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় দিনাজপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভা যাত্রার মধ্যদিয়ে দিনাজপুর শহরের গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানে তিন দিনব্যাপী নবান্ন উৎসবের উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দিনাজপুর বজলুর রশীদ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বঙ্গ মিলারস লিমিটেডের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহান শাহ আজাদ,জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ আবু সায়েম, জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা সাইফুল আলম, বঙ্গ মিলারস লিমিটেডের ক্যাটাগরি ম্যানেজার মুস্তাফিজুর রহমান সহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন।

বঙ্গ মিলারস লিমিটেডের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহান শাহ আজাদ বলেন, প্রাণ চিনি গুড়া চাল বর্তমানে ১০০টির বেশি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। যার সিংহভাগ চাল দিনাজপুর জেলা থেকে সংগৃহীত হয়। এ কারণে দিনাজপুরের কৃষদের সাথে এই আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য প্রাণ নবান্ন’র এই আয়োজন করেছে। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা সাইফুল আলম, বঙ্গ মিলারস লিমিটেডের ক্যাটাগরি ম্যানেজার মুস্তাফিজুর রহমান প্রমূখ উপস্থিত ছিলে।

তিনদিনব্যাপী এই আয়োজনে রয়েছে কৃষদের নিয়ে হাডুডু খেলা, বৌছি, বিস্কুট দৌড়, ফ্যাশন শো, গুপ্তধন উদ্ধার, পাতিল ভাঙ্গা এবং নৃত্যা অনুষ্ঠান। মেলার বসেছে আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ২০টি বাহারী পিঠার ষ্টল।

উল্লেখ্য ,বাংলা ক্যালেন্ডারের পাতায় পহেলা অগ্রহায়ন বাঙ্গালী কৃষকদের ঘরে উৎসবের দিন। প্রতিবছর এই দিনটিতে নতুন ধান ঘরে তুলে নবান্ন্ উৎসবে মেতে উঠে দেশের খাদ্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিত দিনাজপুরের কৃষকরা। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। আর এবার আমন ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় আনন্দের মাত্রাটা একটু অন্যরকম। নতুন ধানের ভাত, পিঠা, লাড়– আর পায়েশ দিয়ে খাওয়া-দাওয়ার এক উৎসব চলছে এই অঞ্চলের কৃষকদের ঘরে ঘরে। নবান্ন উৎসবে বিভিন্ন স্থানে বসেছে মেলা ও নানান রকম গানের আসর।

আবহমান বাঙ্গালী সংস্কৃতিতে যুগ যুগ ধরে চলে আসছে নবান্ন উৎসব। শ্রাবন মাসে আমন ধান রোপনের কৃষকরা অপেক্ষা করে এই দিনটির জন্য। চারমাস পর অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম এই দিনটিতে কৃষকরা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করে আমন ধান কাটার। আমন ধান ঘরে তোলার প্রথম এই দিনটিতে কৃষকদের পাশাপাশি ব্যস্ত থাকে কিষানীরাও। তারা নতুন এই ধান ঢেকিতে ভেঙ্গে রান্না করে নতুন চালের ভাত। আর নতুন চালের পিঠা, পায়েশ ও বিভিন্ন রকম লাড়– তৈরীতে ব্যস্ত থাকেন। সব মিলিয়ে এই দিনটি কৃষকদের জন্য একটি উৎসবের দিন।

নবান্ন উৎসব একটি সার্বজনীন উৎসব হলেও এই অঞ্চলের হিন্দু স¤প্রদায়ের লোকেরা এই উৎসব পালন করে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে। তারা নতুন ধানের চাল দিয়ে রান্না করা খাবার পূজা অর্চনার মাধ্যমে পুর্ব পুরুষদের জন্য উৎসর্গ করে। এরপর তারা নিজেরা আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের নিয়ে নতুন ধানের বিভিন্ন রান্না করা খাবার খায়। এদিনে রান্না করা হয় বিভিন্ন রকম তরিতরকারীও।

জেলায় এবার আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। ৩ দিনব্যাপী নবান্ন উৎসব পালিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. তৌহিদুল ইকবাল।

উত্তরের জেলা গুলোতে নান আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে নবান্ন উৎসব। দিগন্ত বিস্তৃত ধান ক্ষেত নবান্ন উৎসবের বার্তা বয়ে এনেছে। আবহমান বাংলার ঐতিহ্য নবান্ন উৎসব কৃষকের ঘরে ঘরে আনন্দ বয়ে নিয়ে আসুক এমনটাই প্রত্যাশা করছেন সকলেই।

(এসএএস/এসপি/নভেম্বর ১৫, ২০১৮)