আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : দক্ষিণাঞ্চলের ছয় জেলার প্রবেশদ্বার বরিশালের গৌরনদী উপজেলা। বিগত এরশাদ সরকারের সময়ে এ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নকে আলাদা করে নতুন করে ঘোষনা করা হয় আগৈলঝাড়া উপজেলা। এ দুই উপজেলাকে নিয়েই সংসদীয় ১১৯, বরিশাল-১ আসন গঠিত।

এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে মন্ত্রী আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বরিশাল-১ আসনে তিনি একক প্রার্থী হিসেবে দলের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। নির্বাচনী পরিসংখ্যান মতে, বিগত ১০টি সংসদ নির্বাচনে এখানে পাঁচবার আওয়ামী লীগ, তিনবার বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থী দুইবার জয়লাভ করেছে। বর্তমান সরকারের আমলে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের কারণে আসন্ন নির্বাচনেও এখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয়লাভের সম্ভাবনা বেশি। আওয়ামী লীগে একক প্রার্থী হলেও এ আসনে বিএনপিতে রয়েছে বিভক্তি। যার ফলে বিএনপির চার নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। তবে বিভক্তি ঘুচিয়ে গেলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মিলে এ আসনে ভোটের লড়াই হবে প্রতিযোগিতামূলক। হালনাগাদ ভোটার তালিকা অনুযায়ী এ আসনে বর্তমানে ২ লাখ ৫৭ হাজার ২২০ জন ভোটারের মধ্যে ১ লাখ ২৯ হাজার ১৭ জন পুরুষ ও ১ লাখ ২৮ হাজার ২০৩ জন নারী।

এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুলøাহ। গোটা দক্ষিণাঞ্চলের দলের নেতাকর্মীরা একমাত্র অভিভাবক হিসেবে তাকে (আবুল হাসানাত) শ্রদ্ধা করেন। স্থানীয় নির্বাচন ও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তার সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন নেতাকর্মীরা। ১৯৭৩ সালে তৎকালীন বাকেরগঞ্জ-১৩ (বর্তমান বরিশাল-১) আসনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বোনজামাতা আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রী হন। ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর সাথে অন্য যারা নিহত হয়েছিলেন তাদের মধ্যে আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ছিলেন অন্যতম। আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের মৃত্যুর পর তার বড় পুত্র আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ ১৯৯১ সালে বরিশাল-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬ সালে পুনরায় এ আসন দিয়ে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। যেসময় আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্ধী ছিলো বিএনপি মনোনীত ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব।

ওয়ান ইলেভেনের সময় দায়ের করা হয়রানী মূলক মামলা জটিলতায় ২০০৮ সালে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় এ আসন দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন তার (হাসানাত) স্নেহভাজন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস। তিনি বিএনপির প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহানকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সবশেষে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় আবুল হাসানাত আব্দুলøাহ নির্বাচিত হন। বর্তমান সরকারের ব্যাপক উন্নয়নের ওপর ভর করে একাদশ নির্বাচনেও জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।

বরিশাল-১ আসনে বিএনপির মনোনয়নপত্র সংগ্রহের পর ইতোমধ্যে জমা দিয়েছেন নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনীত প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান, কার্যনির্বাহী কমিটির আরেক সদস্য এ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল, কেন্দ্রীয় কমিটির বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান ওয়ান ইলেভেনের সময় দলের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়ানো সংস্কারপন্থি নেতা সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন।

সূত্রমতে, দলের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়ানোর কারণে সংস্কারপন্থি নেতা সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন ও দলের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি করায় আকন কুদ্দুসুর রহমান দীর্ঘদিন থেকে নিজ এলাকায় পর্যন্ত আসতে পারছেন না।

বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা জানান, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেলেও নিজ দলের কতিপয় নেতার রোষানলে মিথ্যে মামলায় অভিযুক্ত হয়ে নির্বাচনের মূল প্রচারের সময় ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহানকে উচ্চ আদালতের বারান্দায় ঘুরতে হয়েছে। মাত্র একসপ্তাহ তিনি দুই উপজেলায় প্রচারের সুযোগ পেলেও তাতেই তিনি নৌকা মার্কার প্রার্থীর সাথে প্রতিদ্বন্ধিতা করে ৭৬ হাজার ভোট পেয়েছিলেন।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী সময়ে আন্দোলন সংগ্রাম ও দলীয় কর্মসূচীতে নেতাকর্মী এবং সমর্থকদের নিয়ে ভূমিকা পালন করেছেন। গৌরনদী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান। এ আসনে জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন কেন্দ্রীয় সদস্য এস.এম রহমান পারভেজ ও এ্যাডভোকেট ছেরনিয়াবাত সেকান্দার আলী। এনডিবি’র প্রার্থী হয়েছেন তৌহিদী মাহমুদ তুহিন। ইসলামী আন্দোলনের মনোনীত প্রার্থী হয়েছেন মেহেদী হাসান রাসেল।

(টিবি/এসপি/নভেম্বর ১৫, ২০১৮)