স্টাফ রিপোর্টার : তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের বিবাদ নিরসন ও নির্বাচনের কারণে আগামী বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব ইজতেমা স্থগিত করা হয়েছে। দু’পক্ষের মধ্যে ঐকমত্য আনতে ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ভারতের দেওবন্দ সফরের পর পরবর্তী সময়ে ইজতেমার তারিখ নির্ধারণ করা হবে।

টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের বিষয়ে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে তাবলিগ জামাতের দু’পক্ষের সঙ্গে এক সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়।

সভায় উপস্থিত আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক শেখ মো. আবদুল্লাহ এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘আজকের সভার মূল উদ্দেশ্য ছিল তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষকে একত্র করা। এ জন্য দুই পক্ষের সম্মতিতেই কিছু প্রস্তাব এসেছে।’

আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক বলেন, ‘নির্বাচনে বিপুল সংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োজিত থাকবে। দুই গ্রুপ আলাদা হয়ে দুই দফায় চারবার ইজতেমা করলে এটাকে কন্ট্রোল করা কঠিন হবে। এতে আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হতে পারে। এই পরিস্থিতি বিবেচনায় দুই পক্ষই জানুয়ারিতে ইজতেমা না করাতে সম্মত হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় উভয়পক্ষই একমত, এটি পরে হবে। এটা তো যে কোনো সময় হতে পারে।’

আগামী ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষ আগামী বছরের ১১, ১২ ও ১৩ জানুয়ারি ও ১৮, ১৯ ও ২০ জানুয়ারি পৃথকভাবে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের তারিখ নির্ধারণ করেছিল। হজের পর টঙ্গীর তুরাগ তীরের ইজতেমা-ই মুসলমানদের দ্বিতীয় বড় জমায়েত।

এছাড়া দুই পক্ষকে এক করতে সভায় আরও একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে জানিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নর্সের গভর্নর শেখ আবদুল্লাহ বলেন, সর্বসম্মতি ক্রমে ছয়জনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা ভারতের দেওবন্দ মাদরাসায় গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে বিভ্রান্তি নিরসন করবেন। কারণ সেখান থেকে কিছু বক্তব্য এসেছে, সেটা নিয়েই বিভ্রান্তি। সেখান থেকে যদি গোলমালটা থামানো যায় তবে গোলমালটা থেমে যাবে।

‘এটা সফল হলে সম্মেলনটা সবাই মিলে একসঙ্গেই করবেন’ বলেন আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক।

সভায় উপস্থিত একজন কর্মকর্তা জানান, সভায় মাওলানা সাদপন্থীরা বলেন, মাওলানা সাদ বিভিন্ন সময়ে দেয়া তার বক্তব্যের জন্য ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন। অন্যপক্ষের দাবি, তিনি ভুল স্বীকার করেননি। তাই এই বিষয়টি পরিষ্কার করতে ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল ভারতে যাবেন। এই প্রতিনিধি দলে রয়েছেন- ধর্ম সচিব মো. আনিছুর রহমান, মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ, তাবলিগের শুরা সদস্য সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম, মাওলানা মুহাম্মদ যোবায়ের ও আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক শেখ আবদুল্লাহ।

তাবলিগ জামাতের দিল্লির আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বিভিন্ন সময়ে দেখা বক্তব্য নিয়ে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে বাংলাদেশের তাবলিগ জামাত। আলেমরা সাদবিরোধী ও সাদপন্থী দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। এই বিভক্তি চরম আকার ধারণ করে গত জানুয়ারিতে বিশ্ব ইজতেমার সময় মাওলানা সাদের বাংলাদেশে আসার পর। বিরোধীদের বাধার মুখে ইজতেমায় অংশ না নিয়েই মাওলানা সাদকে ওই সময় বাংলাদেশ ছাড়তে হয়েছিল।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ১৬, ২০১৮)