আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সৌদির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানই ভিন্ন মতাবলম্বী সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর এ বিষয়ে স্থির সিদ্ধান্তে উপনিত হয়েছে বলে এক ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন। যদিও সৌদি সরকার এ ঘটনায় প্রিন্স সালমানের জড়িত থাকার কথা বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।

মার্কিন ওই কর্মকর্তা শুক্রবার সিএনএনকে বলেন, তুর্কি সরকারের দেয়া অডিও রেকর্ডিং, বিভিন্ন প্রমাণাদি এবং মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তারা এই সিদ্ধান্তে পৌছঁছেন যে প্রিন্স সালমানের নির্দেশেই জামাল খাশেগিকে হত্যা করা হয়েছে।

ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আরও জানান, তদন্তকারীরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, খাশোগিকে হত্যার মতো এমন একটি অপারেশন প্রিন্স সালমানের অনুমতি ছাড়া হয়নি।

তবে সৌদি দূতাবাসের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, এ ধরনের অভিযোগ মিথ্যা। এর আগে বৃহস্পতিবার সৌদির পাবলিক প্রসিকিউটর কার্যালয় জানিয়েছিল যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান নন ইস্তাম্বুলে কনস্যুলেটের ভেতর সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা।

ওই তথ্য মতে হত্যার নির্দেশদাতা ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল খাসোগিকে বুঝিয়ে সৌদি ফিরিয়ে আনার। কিন্তু তিনি তা না করে খাশোগিকে হত্যা করেন। তাদের ভাষ্যমতে, খাশোগির সঙ্গে কর্মকর্তাদের ধস্তাধস্তি হওয়ার পর তাকে বিষাক্ত ইনজেকশন দেয়া হয়।

ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যার বিষয়ে সিআইএর মূল্যায়নের সঙ্গে মার্কিন কর্মকর্তারাও একমত। সিআইএর এই মূল্যায়নের প্রতিবেদন সর্বপ্রথম প্রকাশ করে ওয়াশিংটন পোস্ট।

তবে সিআইএর এক মুখপাত্র এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। খাশোগি হত্যাকাণ্ডে প্রিন্স সালমানের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে সৌদি সরকার।

খাশোগি সৌদি রাজপরিবারের সমালোচক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। গত ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে অবস্থিত সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশের পর নিখোঁজ হন তিনি। তার বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তুলতে কনস্যুলেটে যাওয়ার পর সেখানে তাকে হত্যা করা হয়। কিন্তু তার মরদেহ এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

খাশোগি হত্যায় প্রিন্স সালমানের সম্পৃক্ততার বিষয়ে সিআইএর এমন ধারনার ভিত্তি হচ্ছে যুবরাজের ভাই যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত প্রিন্স খালিদ বিন সালমানের সঙ্গে খাশোগির ফোনালাপ। তাতে খালিদ বিন সালমান খাশোগিকে ইস্তাম্বুলে গিয়ে সৌদি কনস্যুলেট থেকে বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ সংগ্রহ করতে বলেন। সূত্র মতে, খালিদ তার ভাইয়ের আদেশে ফোন করেছিলেন।

তবে প্রিন্স খালিদ ওয়াশিংটন পোস্টের ওই প্রতিবেদনকে অস্বীকার করেছেন। এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমি ফোনে কখনো তার সঙ্গে কথা বলিনি এবং কোনো কারণে তুরস্কের কাছে যেতে বলিনি। আমি এমন দাবির বিষয়ে কোনো তথ্য থাকলে তা প্রকাশ করার জন্য মার্কিন সরকারকে অনুরোধ করছি।’ তিনি বলেন, খাশোগির সঙ্গে তার শেষ যোগাযোগ হয়েছিল ২০১৭ সালের অক্টোবরে। সেটাও ছিল একটি ক্ষুদেবার্তা।

কিন্তু খাশোগি তুরস্কে গিয়ে নিহত হন এবং এর দুই দিন পরই খালিদ বিন সালমান যুক্তরাষ্ট্র থেকে হঠাৎ করেই সৌদি আরবে ফিরে যান। তবে তিনি আর ওয়াশিংটনে ফিরে আসেননি। তার স্থলে অন্য একজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়েছে খাশোগি হত্যাকাণ্ডের পরপরই ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেট থেকে করা একটি ফোনকল বিবেচনায় নিয়েছে সিআইএ। ওই ফোনকলে খাশোগি হত্যাকাণ্ডের ঘাতক দলের সদস্য মাহের মুতরেব জানান, অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার ট্রাম্প প্রশাসন খাশোগি হত্যার ঘটনায় ১৭ ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করেছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরবের কাছে ১১ হাজার কোটি ডলারের সমরাস্ত্র বিক্রির স্বার্থে খাশোগি হত্যায় সৌদি যুবরাজের হাত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে এতদিন যেসব বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন সিআইএর এই মূল্যায়নের পর তা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে খাশোগি হত্যার জন্য সৌদি যুবরাজকে দায়ী করা হয়নি।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ১৭, ২০১৮)