রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে মহাবিদ্যালয়ের উপাধ্যক্ষের অফিস কক্ষে তালা মারা ও অধ্যক্ষকে পিটিয়ে জখম করার খবরে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা একই মহাবিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ডাঃ শহীদুর রহমানসহ কয়েকজনকে পিটিয়ে জখম করেছে। শনিবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সাতক্ষীরা সদরের সাতানী শহীদ স্মৃতি ডিগ্রী কলেজে এ ঘটনা ঘটার পর পুলিশ এক সন্ত্রাসীকে আটক করেছে।

সাতানী শহীদ স্মৃতি ডিগ্রী মহাবিদ্যালয়ের উপাধ্যক্ষ রসায়নের শিক্ষক দীপক কুমার মল্লিক জানান, দু’ বছর আগে তিনি এ মহাবিদ্যালয়ে যোগদান করে যথারীতি বেতন ভাতা উত্তোলন করে আসছেন। শনিবার সকাল ১০টা থেকে তাদের কলেজে স্নাতক পর্যায়ে ইসলামের ইতিহাস ও সাধারণ ইতিহাস, ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বর্ষে তথ্য প্রযুক্তি ও দ্বিতীয় বর্ষে কৃষি বিজ্ঞান পরীক্ষা চলছিল। শিক্ষকরা পরীক্ষার হলে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ১১টার দিকে মহাবিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ডাঃ শহীদুর রহমান তার ভাইপো কামরুল বাসারসহ কয়েকজন সন্ত্রাসীকে নিয়ে মহাবিদ্যালয়ের ভিতরে ঢোকেন। বাইরে বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী অবস্থান করছিল।

এ সময় ডাঃ শহীদুর রহমান তার ঘরে ঢুকে তাকে চেয়ার থেকে তুলে এনে বারান্দায় নিয়ে আসেন। তার কাগজপত্র জাল তাই তাকে অবৈধ ঘোষণা করে ওই ঘরে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে চাবি নিজের কাছে রেখে দেন তিনি। এরপর পিওন ইয়ারুল ইসলামকে অধ্যক্ষের ঘরের চাবি খুলতে বলেন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ইয়ারুল না খোলায় তাকে মারপিট করেন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির সঙ্গে থাকা সন্ত্রাসীরা। পরে হ্যাজকো ব্লেড দিয়ে অধ্যক্ষের ঘরের তালা কাটার চেষ্টা করেন তারা।

অধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন বলেন দুপুর ১২টার দিকে তিনি সাতক্ষীরা থেকে এসে মহাবিদ্যালয়ের ঢুকে তার নিজ কক্ষে ঢোকার সময় ডাঃ শহীদুর রহমান তাকে বাধা দেন। বাধা না মানায় শহীদুর রহমানের ভাইপো কামরুলবাসার ও তার এক সহযোগি তার মুখে এলোপাতাড়ি মারপিট করে জখম করেন।

পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থী, কয়েকজন শিক্ষক ও পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হোসেন অধ্যক্ষকে রক্ষায় এগিয়ে গেলে তাদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কির একপর্যায়ে কামরুল বাসার, শিক্ষক আলমগীর হোসেন ও সভাপতি আলতাফ হোসেন আহত হন। এ সময় কৌশলে গ্রীলের তালা খুলে বেরিয়ে যান ডাঃ শহীদুর রহমান। এ সময় বাইরে অবস্থান করা গ্রামবাসিদের হাত থেকে ডাঃ শহীদুর রহমানকে উদ্ধার করেন তারা।

মহাবিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান পরিচালনা পরিষদের সদস্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডা. শহীদুর রহমান জানান, তার হাতে গড়া মহাবিদ্যালয়টির অধ্যক্ষ মো. ফজলুর রহমান অবৈধ পন্থায় অধ্যক্ষ পদে জেঁকে বসেছেন। জোর করে অধ্যক্ষের পদে থাকা এবং তার পরিচালনা পরিষদের বৈধতা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলতে তিনি কিছু কাগজপত্র নিয়ে কলেজে যান।

এ সময় অধ্যক্ষ ফজলুর রহমান তার ও তার সহযোগীদের ওপর হামলা করেন। এতে তিনি নিজে এবং তার সহযোগী মো. আবদুল্লাহ, মো. হাবিবুল্লাহ, আবদুল্লাহেল বাকি ও ভাইপো কামারুল বাসারসহসহ কয়েক সহযোগী গুরুতর জখম হন। এমনকি তাদেরকে অনেকক্ষণ ধরে কলেজ ক্যাম্পাসে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে বলে জানান ডা. শহীদুর রহমান।

জানতে চাইলে সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সাতানী শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বিরোধের ঘটনায় সাতানী গ্রামের মতিয়ার রহমানের ছেলে কামরুল বাসার নামের একজনকে আটক করা হয়েছে। শনিবার রাত সোয়া সাতটা পর্যন্ত এ নিয়ে থানায় কোন লিখিত অভিযোগ করা হয়নি।

(আরকে/এসপি/নভেম্বর ১৭, ২০১৮)