মতিউর রহমান মুন্না, নবীগঞ্জ : হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হতে চলেছেন আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া। সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে তিনি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে এই আসনে নির্বাচন করার জন্যই গত শুক্রবার বিকেলে দেশে ফিরেছেন ড. রেজা কিবরিয়া। এমনকি তিনি ইতিমধ্যে এ আসনে প্রার্থী হতে গণফোরামে যোগ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে এনিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে কৌতূহল বিরাজ করছে। এ ছাড়াও নবীগঞ্জে বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীর মধ্যে আনন্দ উল্লাস করতেও দেখা গেছে। অনেকেই মন্তব্য করেছেন রেজা কিবরিয়া ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করতে কপাল পুড়বে সাবেক এমপি শেখ সুজাত মিয়ার।

ড. রেজা কিবরিয়ার বাবা শাহ এএমএস কিবরিয়া আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন। পরে ১৯৯৬ সালে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পরে শাহ এ এম এস কিবরিয়া ২০০১ সালের নির্বাচনে হবিগঞ্জ-৩ (হবিগঞ্জ সদর-লাখাই) আসনের এমপি হন। ২০০৫ সালে এক জনসভায় বোমা হামলা চালিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। এ মামলায় আসামী হয়ে জেল কেটেছেন বিএনপির অনেক তুখোড় নেতা। কিন্তু তারই ছেলে কেন ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবেন? এমন প্রশ্নও অনেকেই করেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে।

ড. রেজা কিবরিয়া বিগত ১/১১-এর সময়ে সংস্কারপন্থি হিসেবে আওয়ামী লীগ থেকে ছিটকে পড়েন। ২০০৮ ও ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হন। একটি সূত্র জানিয়েছে গতকাল তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, আমি সবসময়ই জন্মস্থান নবীগঞ্জ-বাহুবল আসনেই নির্বাচন করতে আগ্রহী ছিলাম। এবার ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের হয়ে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করার জন্য দেশে এসেছি।

আওয়ামী লীগের রাজনীতি ছেড়ে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী কেন হলেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ১০ বছর ধরে যেভাবে দেশ পরিচালনা করছে, তার সঙ্গে তিনি একমত নন। তাঁর আদর্শের সঙ্গে মিল নেই। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা শাহ এ এম এস কিবরিয়া ও আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা যে আদর্শ লালন করতেন, আওয়ামী লীগ এখন সেই জায়গায় নেই।’

অর্থনীতিবিদ রেজা কিবরিয়া জানান, তাঁর বাবাকে ২০০৫ সালে হত্যার পর বিএনপির সরকারের সময় এবং পরবর্তীকালে তত্ত্ববধায়ক সরকারের সময় বিচার করা হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের ১০ বছরেও এ মামলার সুষ্ঠু তদন্ত বা বিচার করার কোনো উদ্যোগ নেয়নি দলটি। রেজা কিবরিয়া দেশবাসীর উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘এবার দেশের মানুষ বলুক, আওয়ামী লীগের প্রতি আমার আনুগত্য থাকা উচিত কি না?’

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, গণফোরামের সভাপতি ও ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। তিনি হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনে নির্বাচন করবেন। রেজা কিবরিয়া আরও বলেন, ‘আমার বাবার স্বপ্ন ছিল হবিগঞ্জ-১ আসনে নির্বাচন করার। আমি সেই স্বপ্ন এবার বাস্তবায়ন করতে চাই। কারণ, এলাকাটি অবহেলিত একটি জনপদ। এলাকার মানুষের জীবনমানে গুণগত পরিবর্তন আনতে চাই। এখানের মানুষ চায় না রুগ্ণ কোনো চেহারা বারবার আসুক।’

রেজা কিবরিয়া বলেন, তিনি ও তাঁর বাবা জাতিসংঘে কাজ করেছেন। তবে দেশের জন্য তাঁদের অন্য রকম ভালোবাসার টানে দেশ ছেড়ে অন্য কোথাও স্থায়ী হননি। তিনি সাংসদ হলে নবীগঞ্জ-বাহুবল এলাকাকে দেশের অন্যতম এলাকা হিসেবে গড়ে তুলবেন বলে জানান।

তার বাবা শাহ এএমএস কিবরিয়া ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জের বৈদ্যেরবাজারে এক জনসভায় গ্রেনেড হামলায় নিহত হন। এরপর ২০০৬ সালে রেজা কিবরিয়া আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পান। পরে সংস্কারপন্থি দলে চলে যাওয়ায় তার পরিবর্তে ২০০৮ সালে দেওয়ান ফরিদ গাজীকে এ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়। পরে ২০১০ সালে দেওয়ান ফরিদ গাজী মৃত্যুবরণ করলে উপনির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী শেখ সুজাত মিয়া নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জাতীয় পার্টির প্রার্থী প্রবাসী এমএ মুনিম চৌধুরী বাবু এ আসন থেকে নির্বাচিত হন। এবারও বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে এলাকায় জনসংযোগ করছেন শেখ সুজাত মিয়া।
অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন রেজা কিবরিয়া ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হলে শেখ সুজাতের কি হবে?

এ বিষয়ে ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, শেখ সুজাত মিয়া ভালো মানুষ। তিনিও এলাকার উন্নয়ন চান। তাই তিনি আমাকে সমর্থন করবেন এবং আমার জন্য কাজ করবেন। শুধু এমপি হিসেবে-ই নয়, আরও অনেক দায়িত্ব আছে। সুজাত মিয়ার অবশ্যই মূল্যায়ন হবে।

(এমআরটি/এসপি/নভেম্বর ১৭, ২০১৮)