রাবি প্রতিনিধি : এক দশক আগে শেষ হয়েছে শিক্ষা পরিষদ মনোনীত কলেজ অধ্যক্ষ পদের সিনেট সদস্যের মেয়াদ। আর গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধির মেয়াদ শেষ হয়েছে প্রায় দেড় যুগ আগে। এভাবেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটের দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের মেয়াদ শেষ হলেও সিনেট পূর্ণ করছে না কর্তৃপক্ষ।

অভিযোগ রয়েছে সিনেট বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্লামেন্ট হলেও তাকে উপেক্ষা করেই চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কাজ। এরইমধ্যে মেয়াদউত্তীর্ণদের মাধ্যমেই অনুষ্ঠিত হয়েছে ২১তম সিনেট অধিবেশন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামী সিনেট অধিবেশনও মেয়াদোত্তীর্ণদের দিয়েই করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৩এর অধ্যাদেশের ধারা ২০ অনুযায়ী সিনেট গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটের মোট সদস্য হবে ১০৪ জন। উল্লিখিত সদস্যের মধ্যে এ বছরের ২৩ এপ্রিল নির্বাচনের মাধ্যমে ৩৩ জন শিক্ষক প্রতিনিধির পদ পূরণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষসহ পদ পূরণ হয়েছে মোট ৩৭টি।

তবে বাকি ৬৭ সদস্যদের মধ্যে সিনেটের শিক্ষাবিদ ক্যাটাগরি থেকে আচার্য মনোনীত মোট ৫ জন সদস্যের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৫ সালের ২২ জুলাই, গবেষণা সংস্থার প্রতিনিধি পদের ৫ জনেরও মেয়াদ শেষ হয়েছে একই বছরের ২১ এপ্রিল। কলেজ অধ্যক্ষ পদে শিক্ষক পরিষদ মনোনীত ৫ সদস্য ও কলেজ শিক্ষক পদের ১০ সদস্যসহ মোট ১৫ জনের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০০৭ সালের ১৯ মে। নিবন্ধিত গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি ২৫ জনের মধ্যে মারা গেছেন ৭ জন। সকলেরই মেয়াদ শেষ হয়েছে ১৯৯৭ সালের ৩০ মে।

এছাড়া রাকসু নির্বাচন না হওয়ায় ৫ ছাত্র প্রতিনিধি ছাড়াই সিনেট চলছে ২৮ বছর ধরে। এই হিসাবে প্রায় দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের মেয়াদ শেষ হয়েছে।

যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশে বলা হয়েছে নতুন সদস্য মনোনীত হওয়া না পর্যন্ত পূর্বের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন এবং ছাত্র প্রতিনিধি ব্যতীত বাকি সদস্যদের মেয়াদ হবে তিন বছর। তবে সংশ্লিষ্টদের দাবি যারা অবসর গ্রহণ করেছেন, ছাত্রত্ব নেই বা মৃত্যুবরণ করেছেন এবং যাদের মেয়াদ যথাক্রমে ১৯৯৭, ২০০৪, ২০০৭, ২০১৩, ২০১৫ তারিখে শেষ হয়েছে বিশেষ করে ২৫ জন নিবন্ধিত গ্র্যাজুয়েটের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২১ বছর আগে তাদের নিয়ে সিনেট পরিচালনা করা যুক্তিসঙ্গত নয়। আর ছাত্র প্রতিনিধি ছাড়া সিনেটের কার্যকারিতাও নেই।

এদিকে সিনেটের এখতিয়ারে ২২ ধারায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক রিপোর্ট, বাজেট, সংবিধি পরিবর্তন, পরিমার্জন, সংশোধন এবং অনুমোদনের কথা বলা হয়েছে।

একইভাবে অ্যাক্ট ১১ (১) ধারা মোতাবেক সিনেট ভাইস চ্যান্সেলর পদের জন্য তিনজনের একটি প্যানেল গঠন করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবে। তাদের মধ্য থেকেই একজনকে ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি। তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, ৭৩-র অধ্যাদেশ মেনে ভিসি হয়েছেন মাত্র ৬ জন। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য নিয়োগসহ বার্ষিক বাজেট এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো নিয়মমাফিক হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী সিনেটের যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে সেটিকেও উপেক্ষা করে চলছে প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্লামেন্ট সিনেট অপূর্ণ রেখেই কেন কাজ চলছে এমন প্রশ্নে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আব্দুস সোবহান সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, সিনেটের সদস্য পূরণ করা হয় না সেটা নয়। সিনেট প্রতিনিধিদের ৩৩ জন শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমে পূরণ করা হয়েছে। আর রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট ২৫ জন সেই আশির দশকে নির্বাচিত হয়েছেন। সেটি আর করা হয়নি। এর কারণ হলো রাকসু নির্বাচন না হওয়া। নিয়ম আছে যতদিন নির্বাচন না হবে ততদিন তারা থাকবেন। শুধু মাত্র অপূরণ আছে ছাত্র প্রতিনিধি। বাকি সবাই আছেন।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ১৮, ২০১৮)