ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামীলীগ থেকে ঠাকুরগাঁও-১ আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন মোট ১৪ জন। এদের মধ্যে ৯০ দশকের সৈরাচারী বিরোধী আন্দোলনে অন্যতম নেতা ঠাকুরগাঁও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক কামরুল হাসান খোকন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।

১৯৭২ সালে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা রুহিয়া রামনাথ এলাকায় জন্মগ্রহন করেন। ছাত্র জীবন থেকেই ছাত্রলীগ ছাত্রলীগের রাজনৈতির সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন। ১৯৮৭ সালে এসএসসি পাশ করার পর ৯০ দশকে সৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে রাজ পথে গুরুত্বপূর্ন অবদানের পড়ে আলোচনায় উঠে আসেন খোকন। ১৯৯১ সালে ছাত্রলীগের সম্মেলনে জেলার সভাপতির দায়িত্ব গ্রহন করেন। পরে ১৯৯৫ সাথে আবারো বলিষ্ট নেতৃত্বের কারনে সভাপতি দায়িত্ব পেয়ে ২০০২ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগকে সু-সংগঠিত গড়ে তোলেন।

পরে ঢাকায় এসে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। সারা দেশে ছাত্রলীগকে সু-সংগঠিত করার জন্য মাঠ চষে বেড়িয়েছেন। ২০০৬ সালে ছাত্রলীগ ছেড়ে মূল দলের সাথে কাজ শুরু করে আওয়মী লীগর উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক নিবার্চিত হোন। ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলার পর প্রয়াত নেতা আইভী রহমানকে দফনের পর ডিবি পুলিশ গাড়ি ভাংচুরের অভিযোগে গ্রেফতার করে জেল পাঠায় তাকে। ১/১১ এর সময় আওয়ামী লীগের সভাপনেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করলে অন্যান্য নেতাদের সাথে রাজ পথে লড়াকুর মত আন্দোলন করেন তিনি। আওয়ামী লীগের দু:সময়ে প্রথম থেকে নেত্রীর পাশে ছিলেন ও শেষ পর্যন্ত পাশে থাকবেন বলে মতব্যক্ত করেছেন খোকন।

ঠাকুরগাঁও-১ আসনে এমপি প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন প্রত্যাশী কামরুল হাসান খোকন ঠাকুরগাঁও জেলাকে নিয়ে সম্ভবনাময় ভাবনার কথা গুলো তুলে ধরে বলেন, আমাদের জেলার ভৌগলিক গঠণ এমন যে ঠাকুরগাঁও জেলা পকেট হয়ে পড়ে রয়েছে। প্রধান হাইওয়ে রাস্তার পশ্চিম পাশে জেলার সব উপজেলা। পূর্বদিকে কোন থানা-উপজেলা নেই।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর চালু হওয়াতে ও এশিয়ান হাইওয়ে নির্মাণ চিত্র এমনভাবে হয়েছে ঠাকুরগাঁও-কে পাশ কাটিয়ে, যার ফলে উন্নয়নের রাস্তা বাংলাবান্ধা-তেঁতুলিয়া-পঞ্চগড় হয়ে দেবীগঞ্জ-ডোমার হয়ে নীলফামারী দিয়ে চলে গেছে। আমরা পকেটে পরিণত হয়েছি।

এমতাবস্থায় এশিয়ান হাইওয়ের একটা কানেক্টিভিটি সড়ক বোদা হয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের ভুল্লী হয়ে দিনাজপুরের দশ মাইল-দিনাজপুর শহর এর গা ঘেঁষে পার্বতীপুর বা ফুলবাড়ী-তে গিয়ে যুক্ত হলে অর্থনৈতিক ভাবে অগ্রসর হবে ঠাকুরগাঁও।

খাদ্যশষ্য প্রধান অঞ্চল ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, পঞ্চগড়। এ চার জেলাকে কেন্দ্র করে এগ্রো বেইজড্‌ অঞ্চল ঘোষণা দিয়ে কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ শুরু করা যেতে পারে।

সৈয়দপুর বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে ঘোষণা এবং তা বাস্তবায়নে জোরেসোরে কাজ চলছে। সৈয়দপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হবার ফলে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে সাপোর্টিং বিমানবন্দর প্রয়োজন। রংপুর বিভাগে আগে থেকেই অভ্যন্তরীন রুটে আরও দুটো বিমানবন্দর চালু ছিলো একসময়ম তার একটা ঠাকুরগাঁও অপরটি লালমনিরহাট। অবকাঠামো ও জায়গা পুরোপুরি বেদখল হয়ে যায়নি এখনও। তাই বিমান বন্দরটি চালু করলে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের সাথে ঠাকুরগাঁওয়ে আন্তঃদেশীয় পরিবহন টার্মিনাল স্থাপন এটা হলে আমাদের টানপোড়েনের মফস্বল অর্থনীতি-তে নতুন মাত্রা যুক্ত হবে।

উত্তরের আমাদের ওপাশটায় শিলিগুড়ি। জলপাইগুড়ি। দার্জিলিং। প্রকৃতি আর সুন্দরের এক আশ্চর্য সম্মিলন। ওপার-এপারে শীতের স্থায়িত্বও বেশ সময় জুড়ে। অক্টোবরের শেষ থেকে শুরু হয়ে মার্চের প্রথমভাগ অবধি (কখনও কখনও এ হিসেবের ব্যতিক্রমও হয়)। প্রকৃতি-জনসংখ্যার ঘণত্ব, শীতল আবহাওয়া বিবেচনায় ব্রিটিশরা তৎকালীন সময়ে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরী করেছিলো দার্জিলিং, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়িতে। ঠাকুরগাঁওয়ে সে রকম “শিক্ষা জোন” ঘোষনা দিয়ে আন্তর্জাতিকমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যেতে পারে সরকারীভাবে।

রাজধানী-সহ সারা দেশের বৈভবওয়ালা নাগরিকগণ তাদের সন্তানদের তখন শিলিগুড়ি-তে না পাঠিয়ে এই অঞ্চলে পাঠাতে পারবে।

‌দ্রুত পঁচনশীল মৌসুমী সব্জি, ফল সংরক্ষণে সরকারী উদ্যোগে স্পেশালাইজড্ কোল্ড স্টোরেজ, মাংস প্রক্রিয়াজাত করণের উদ্যোগ-স্থাপনা, কৃষি ভিত্তিক যন্ত্রপাতি তৈরীর কারখানা হলে আমাদের অঞ্চলের অর্থনীতি আমূল বদলে যাবে ঠাকুরগাঁও।

আমাদের এখানে গম,ভূট্টা ও আলু হয় অনেক। সংরক্ষণের অভাব আর বাজার কারসাজি কারনে কৃষক-চাষী’ রা ন্যায্য দাম পায় না হর-বছর। আলুর গুড়ো (শুকনো) পাউডার এর চাহিদা রয়েছে ইউরোপে। একটা কারখানা করা গেলে আর তা থেকে আলু, ভূট্টা প্রক্রিয়া করে ইউরোপে পাঠানোর ব্যবস্থা থাকলে মুখে হাসি ফুটবে এ অঞ্চলের কৃষকদের।

জেলার রানীশন্‌কৈল, হরিপুর, বালিয়াডাংগী, পীরগঞ্জ উপজেলা, নবগঠিত রুহিয়া থানা ( উপজেলায় প্রক্রিয়াধীন ) শুধুই কৃষি-নির্ভর। আয়ের একমাত্র উৎস কৃষি। ব্যতীত অন্য অর্থনৈতিক কর্মকান্ড নাই বললেই চলে। (বালিয়াডাংগী ও হরিপুরে চায়ের চাষ শুরু হয়েছে কয়ে বছর ধরে।) মিল্কভিটা ও এ-জাতীয় সরকারী উদ্যোগ-স্থাপনা উপজেলাগুলো-তে করা যেতে পারে।

ঠাকুরগাঁওয়ে একটা চিনিকল আছে। মান্ধাতা আমলের যন্ত্রপাতি আধুনিকায়নের জন্যে অনেক অর্থ বরাদ্দ দিয়েছেন - কাজও চলমান। আখ চাষে সময় অনেক লাগে তুলনায় খরচ উঠে আসে কোনমত তাই বিকল্প চাষে মনোযোগী কৃষকেরা। চিনিকলের অনেক খামারের জমি পড়ে রয়েছে। সেই জমি গুলোকে কাজে লাগাতে পারলে নানা রকম ফসল উৎপাদন সম্ভব। প্রয়োজন কৃষিভিত্তিক ভিন্ন কারখানা গড়ে তুলে কর্মসংস্কারসহ অর্থনৈতিক ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে জেলাকে।

আদিবাসী সাঁওতাল, ওঁরাও, মশহুর সম্প্রদায় বেশ মানুষের বাস জেলায়। তাদের আগামীর জন্যে, সন্তানদের জন্যে বিশেষায়িত কর্মমূখী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার সরকারী উদ্দোগ প্রয়োজন।

মেয়েরা ভাল ফুটবল খেলছে। জাতীয় পর্যায়ে সুনাম বয়ে এনেছে ইতোমধ্যে। বিদেশের মাটিতেও পদচারন করে দেশের সুনাম আনছে। একসময় এখানে ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবল, টেবিল টেনিস, দাবা খেলোয়ারদের বেশ দাপট ছিলো। এখন মলিন। জেলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স গড়ে তোলা আর আন্তঃজেলা ক্রীড়া প্রতিযোগীতা নিয়মিত আয়োজন না হলে মৌলবাদ, ধর্মীয় রাজনীতি রুখে দেয়া খুব কষ্টকর হবে। চাই ইনডোর গেমস্‌ এর সুবিধা সম্বলিত আধুনিক ক্রীড়া কমপ্লেক্স গড়ে তুলো প্রয়োজন।

নাট্যাভিনেত্রী তৃপ্তি মিত্র, নাট্য গবেষক কুমার রায় জন্মেছিলেন ঠাকুরগাঁওয়ে। ওপার বাংলায় চলে গেছেন। সাংস্কৃতিক আন্দোলন সংস্কৃতি চর্চার অন্যতম কেন্দ্র ছিল এক সময়। চিত্রকলায় মোহাম্মদ ইউনুস, কার্টুনিস্ট শিশির ভট্টাচার্য, নাট্যজন ইসরাফিল শাহীন নাট্য অভিনেতা লিটু আনাম এ জেলার গর্বিত পরিচয় বহন করে। সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চার স্পেস্‌ এখন আর নেই। প্রয়োজন সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সের।

তিনি আরো বলেন, নেত্রী তরুন প্রজন্মের হাতে নেতৃত্ব তুলে দিতে চান । আমাকে মনোনয়ন দিলে ঠাকুরগাঁওকে অর্থনৈতিক জোন পরিনত করার জন্য কাজ করবো ও জন মানুষের দাবি গুলো পূরনে চেষ্টা করবো।

(বি/এসপি/নভেম্বর ১৮, ২০১৮)