আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলের রাখাইনে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে গুলি চালিয়েছে দেশটির পুলিশ। এ ঘটনায় অন্তত চার রোহিঙ্গা মুসলিম গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। বাস্ত্যুচুত রোহিঙ্গাদের জন্য নির্মিত একটি শরণার্থী শিবির থেকে মানবপাচারের অভিযোগে দু'জনকে গ্রেফতারের পর গুলি চালায় মিয়ানমার পুলিশ।

রবিবার প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, রোববার সকালের দিকে রাখাইনের রাজধানী সিত্তে থেকে পূর্বাঞ্চলের ১৫ কিলোমিটার দূরের এএইচ নওক ইয়ে শরণার্থী শিবিরে পুলিশের ২০ সদস্যের একটি দল প্রবেশ করে। এসময় ১০৬ জন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার থেকে পাচারের অভিযোগ এনে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশ জানায়, গ্রেফতারকৃত দু'জনের একটি নৌকা আছে। গত শুক্রবার এই নৌকায় করে তারা ওই রোহিঙ্গাদের দেশের বাইরে পাচারের চেষ্টা করেছিল।

জিজ্ঞাসাবাদের সময় ওই দুই রোহিঙ্গা বলেছেন, ছোট নৌকায় করে তারা শিশুসহ প্রায় ২৫ যাত্রীকে নিয়ে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছিল। পরে ইয়াঙ্গুনের দক্ষিণের তাদের সেই নৌকা আটকে দেয়া হয়। ২০১৫ সালে রাখাইনে ভয়াবহ অভিযান শুরুর পর রোহিঙ্গাদের এ ধরনের বিপজ্জনক সামুদ্রিক যাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছিল। তবে সম্প্রতি সমুদ্র পথে ছোট নৌকায় করে সমুদ্র পাড়ি দেয়ার ঘটনা আবার বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রাণহানির শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে পুলিশের গুলির প্রত্যক্ষদর্শী রোহিঙ্গা যুবক (২৭) মং মং আয়ে রয়টার্সকে বলেছেন, পুলিশের গুলিতে চারজন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে দু'জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। টেলিফোনে তিনি বলেন, বাইরে কি ঘটছে তা জানার জন্য লোকজন শিবির থেকে বাইরে বেরিয়ে এসেছিল। এসময় তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় পুলিশ।

তবে পুলিশ বলছে, রোহিঙ্গারা ছুরি হাতে পুলিশ সদস্যদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে এবং পাথর নিক্ষেপ করে। এতে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা আহত হয়েছেন।

পার্শ্ববর্তী পুলিশ স্টেশনের পরিদর্শক থ্যান হতেই বলেন, আমি শুনেছি, শরণার্থী শিবিরের বাঙালিরা গ্রেফতারকৃত দুজনকে পুলিশের হাত থেকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছে। এসময় পুলিশ সতর্কতা হিসেবে ফাঁকা গুলি ছুড়েছে। এতে কয়েকজন বাঙালি আহত হয়েছে বলেও আমি শুনেছি। তবে আমি বিস্তারিত জানি না।

মিয়ানমারের অনেক মানুষ রোহিঙ্গাদের বাঙালি বলে ডাকে। এমনকি তাদেরকে বাংলাদেশ থেকে সেদেশে পাড়ি জমানো অবৈধ অভিবাসী হিসেবেও মনে করে।

চলতি বছরের অক্টোবরে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম দফায় দুই হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে রাখাইনে প্রত্যাবাসন শুরুর কথা ছিল গত বৃহস্পতিবার। কিন্তু এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার শুরু হওয়া নিয়ে ব্যাপক সন্দেহ দেখা দেয়; শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আলোর মুখ দেখেনি।

গত বছরের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের রাখাইনে দেশটির রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী। রক্তাক্ত ওই অভিযানের মুখে প্রায় সাত লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা প্রতিবেশি বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।

রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা সেখানে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ নৃশংস অভিযানের অভিযোগ করেছেন। তবে দেশটির সেনাবাহিনী রাখাইনে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান পরিচালনা করছে বলে দাবি করে আসছে। একই সঙ্গে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আনা সব ধরনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ১৮, ২০১৮)