আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যিক দ্বন্দ্বে ২৫ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো আনুষ্ঠানিক যৌথ বিবৃতি ছাড়াই শেষ হয়েছে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতার (অ্যাপেক) শীর্ষ সম্মেলন। বাণিজ্য বিষয়ে চূড়ান্ত সম্মতিতে পৌঁছানোর আগেই মতবিরোধ শুরু হয় বলে নিশ্চিত করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, নির্দিষ্ট বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা লক্ষ্য করা গেছে। খবর সিএনএনের

সিএনএনের একটি সূত্র জানায়, শীর্ষ সম্মেলনে মতৈক্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হলেও পাপুয়া নিউগিনিতে অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে একটি সিদ্ধান্তে আসতে সম্মত হয়েছিলেন অ্যাপেকের ২১ নেতা। তবে এ সময় চীন কোনো সিদ্ধান্তে আসতে ব্যর্থ হয়।

সমঝোতা চেষ্টায় সম্পৃক্ত ছিলেন এমন একজন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তা বলেন, ‘চীন হয়তো অসম বাণিজ্য প্রতিযোগিতার সুনির্দিষ্ট কোনো একটি বিষয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। তাই তারা একমত হতে পারেনি। ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘চীন যে বিষয়টিকে সবচেয়ে সমস্যার মনে করেছে তা হলো : আমরা সব ধরনের অসম বাণিজ্য চর্চাসহ সংরক্ষণবাদ (দেশীয় শিল্পকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে বৈদেশিক আমদানিতে বাধানিষেধ) নীতিতে একমত হবো। তারা হয়তো মনে করেছে অসম বাণিজ্য চর্চা মানে বৈষম্য।’

কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ায় চীন দুষলেন ওই কর্মকতা। তিনি বলেন, ‘এটা একটু উদ্বেগের যে, মনে হয়েছে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে আসতে সত্যি বলতে চীনের কোনো আগ্রহই ছিল না।’

বৈরী সম্পর্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্র এই পর্যন্ত চীনা পণ্যের ওপর ২৫০ বিলিয়ন (২৫ হাজার কোটি) মার্কিন ডলার করারোপ করেছে। সেটাকে বৈধতা দিতে যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই চীনকে দোষারোপ করে আসছে।

চলতি বছরের মে মাসে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দীর্ঘদিন ধরে চীন অসম শিল্পনীতি ও বাণিজ্যনীতি চর্চা করে আসছে। এতে করে চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোই লাভবান হয়েছে। তাদের এ অসৎ ও পক্ষপাতমূলক নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

এর আগে একটি ফোরামে অংশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেছিলেন, ‘চীন দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বিভিন্ন সুবিধা নিয়েছে। তবে সেই দিন এখন শেষ হয়ে গেছে। বেইজিং বাণিজ্যনীতির সীমা লঙ্ঘন করে, তাদের দায়দায়িত্ব ভুলে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যে ক্ষতি করেছে তা আদায় করে ছাড়ব।’

তার এ বক্তব্যের জবাবে শনিবার চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, সব বিভেদ কেবলমাত্র আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করা সম্ভব। অতীত ইতিহাসের প্রসঙ্গ টেনে শি বলেন, বৈরীভাব তা শীতল যুদ্ধ, আক্ষরিক অর্থে সৈন্যসামন্ত নিয়ে যুদ্ধ বা বাণিজ্য যুদ্ধ-তা যেভাবেই ডাকা হোক না, এতে কোনো পক্ষই জয়লাভ করতে পারে না।

অবশ্য অ্যাপেক সম্মেলন শেষ হওয়ার আগে রাষ্ট্র অনুমোদিত ট্যাবলয়েড চাইনিজ গ্লোবাল টাইমস সোমবার এক সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। এতে বলা হয়,...সম্মেলনে বড় কোনো চুক্তি হচ্ছে না। তার মানে হলো প্রায় ২৫ বছর পর কোনো যৌথ বিবৃতি ছাড়া এবারের অ্যাপেক সম্মেলন শেষ হচ্ছে।

এজন্য অবশ্য ট্রাম্প প্রশাসনকে দায়ী করে ওই সম্পাদকীয়তে বলা হয়, চীন ডব্লিউটিওসহ (ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন) বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের অপব্যবহার করেছে বলে ট্রাম্প প্রশাসন চীনের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যাচার’ করেছে।

‘যুক্তরাষ্ট্রের এলিট শ্রেণি যারা মনে করে থাকেন যে, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার কারণে সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী চীন। তারা এটা মনে করে আসলে মারাত্মক ভ্রমের মধ্যে রয়েছেন। চীন দোষারোপ না করে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবা উচিত আসলে এটা তাদের সমস্যা। চীন এ পর্যন্ত যে উন্নতি করেছে তা চীনের কঠোর পরিশ্রমের ফল। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন অঙ্গসংস্থাকে ব্যবহার করে চীন এত দূর আসেনি’-আরও উল্লেখ করা সম্পাদকীয়তে।

চলতি বছরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের রফতানি পণ্যের ওপর ২৫০ বিলিয়ন ডলারের শুল্ক আরোপ করে। এরপর থেকেই মূলত দেশ দুটির মধ্যে শুরু হয় বাণিজ্য যুদ্ধ। বিশ্লেষকদের ধারণা, দুই দেশের এই বাণিজ্য যুদ্ধ বৈশ্বিক অর্থনীতিকে যেমন হুমকির মুখে ফেলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ডেকে আনতে পারে।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ১৯, ২০১৮)